Ajker Patrika

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে এক বিশাল ক্রিপ্টোকারেন্সি কেলেঙ্কারি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বিটকয়েন জব্দ করেছে। পাশাপাশি কম্বোডিয়ার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী চেন ঝির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এই প্রতারণা সাম্রাজ্যের মূল হোতা হিসেবে।

চেন ঝি কম্বোডিয়াভিত্তিক বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রিন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে মার্কিন প্রসিকিউটররা তাঁর বিরুদ্ধে ‘ওয়্যার ফ্রড ষড়যন্ত্র ও মানি লন্ডারিংয়ের’ অভিযোগ এনেছেন। মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, চেন ঝি তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রিন্স গ্রুপের মাধ্যমে একটি বিশাল ‘সাইবার প্রতারণা সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ ছিল অনলাইনে প্রতারণা চালিয়ে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষকে ঠকানো।

মার্কিন বিচার বিভাগের ভাষায়, ‘প্রিন্স গ্রুপ একটি অপরাধী সংগঠন, যা মানবিক দুর্ভোগের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে।’ প্রসিকিউটরেরা বলেছেন, চেন ঝির প্রতিষ্ঠান অনলাইনে মানুষকে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করত। প্রতারকেরা ভুক্তভোগীদের মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিত এবং তাদের কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংগ্রহ করত।

আদালতের নথি অনুযায়ী, প্রিন্স গ্রুপ কম্বোডিয়ায় অন্তত ১০টি প্রতারণা কেন্দ্র বা স্ক্যাম কম্পাউন্ড পরিচালনা করত। এই কেন্দ্রগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছিল, যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টার্গেট করা যায়। তারা লাখ লাখ ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তৈরি করেছিল ‘ফোন ফার্ম’, যেখানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা চালানো হতো। দুটি কেন্দ্রে ১ হাজার ২৫০টি ফোন থেকে প্রায় ৭৬ হাজার ভুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হতো।

প্রসিকিউটরেরা আরও জানান, প্রিন্স গ্রুপের অভ্যন্তরীণ নথিতে (মেমো) কর্মীদের বলা হয়েছিল, যেন ভুয়া প্রোফাইল বানানোর সময় এমন নারীর ছবি না ব্যবহার করা হয়, যারা ‘অতিরিক্ত সুন্দরী’—যাতে প্রোফাইলগুলো বেশি বাস্তব মনে হয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চেন ঝি এসব স্ক্যাম সেন্টারে ‘মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রমের’ ব্যবস্থাও চালাতেন। অনেক কর্মীকে বন্দিশিবিরের মতো জায়গায় আটকে রেখে প্রতারণায় বাধ্য করা হতো।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন এ আইজেনবার্গ বলেন, ‘প্রিন্স গ্রুপ একটি অপরাধী সাম্রাজ্য, যা মানবিক কষ্টের ওপর গড়া। তারা মানুষকে বন্দী করে অনলাইনে প্রতারণা চালাতে বাধ্য করেছে, যার শিকার হয়েছেন বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ।’

বিচার বিভাগের তথ্যমতে, চেন ঝি ও তাঁর সহযোগীরা এই অবৈধ আয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। তারা দামি ঘড়ি, ব্যক্তিগত জেট ও দুষ্প্রাপ্য শিল্পকর্ম কিনতেন। এমনকি নিউইয়র্কের এক নিলামঘর থেকে ‘পিকাসোর একটি চিত্রকর্মও’ তারা কিনেছেন। দোষী প্রমাণিত হলে চেন ঝির ‘৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড’ হতে পারে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্যও এই অভিযানে যুক্ত হয়েছে। দেশটি চেন ঝি ও তাঁর সহযোগীদের সম্পদ জব্দ করেছে। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, চেনের নেটওয়ার্কের মালিকানাধীন ‘লন্ডনের ১৯টি সম্পত্তি’ তারা জব্দ করেছে। এর একটি ভবনের মূল্য প্রায় ‘১৩৩ মিলিয়ন ডলার।’

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, চেন ও তাঁর সহযোগীরা ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে কোম্পানি নিবন্ধন করে যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পদে বিনিয়োগ করেছিলেন। তাদের মালিকানাধীন সম্পদের মধ্যে রয়েছে—লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি অফিস ভবন, উত্তর লন্ডনে ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রাসাদ এবং আরও ১৭টি ফ্ল্যাট।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রিন্স গ্রুপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অপরাধী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেন, ‘তারা অসহায় মানুষের জীবন ধ্বংস করেছে এবং সেই টাকায় লন্ডনে বাড়ি কিনে অর্থ লুকিয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে একযোগে এই অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি—মানবাধিকার রক্ষা, ব্রিটিশ নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আমাদের দেশে কালো টাকা ঠেকাতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, চেন ঝি ও প্রিন্স গ্রুপ ক্যাসিনো ও প্রতারণা কেন্দ্র নির্মাণ করেছিল, যেখানে প্রতারণা চালানো ও অর্থ পাচার করা হতো। এই কারণে চারটি প্রতিষ্ঠান—প্রিন্স গ্রুপ, জিন বেই গ্রুপ, গোল্ডেন ফর্চুন রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড এবং বাইএক্স এক্সচেঞ্জ—নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিন বেই গ্রুপ ও গোল্ডেন ফর্চুন রিসোর্টসের দুটি প্রতারণা কেন্দ্রে ‘জোরপূর্বক শ্রম ও নির্যাতন’ চালানো হয়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এসব স্ক্যাম সেন্টারে কাজ করা অনেকেই বিদেশি নাগরিক, যাদের বৈধ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এনে পরে বন্দী করে প্রতারণা করানো হয়।

এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক অভিযান এবং বিটকয়েন জব্দের সবচেয়ে বড় ঘটনা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

এলাকার খবর
Loading...