Ajker Patrika

ভেনেজুয়েলা উপকূলে ট্রাম্পের রণসাজ: বি-২ যুদ্ধবিমানসহ মোতায়েন ১৬ যুদ্ধজাহাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৭
ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়াচ্ছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প যখন এশিয়ায় শান্তির বার্তা ছড়াচ্ছেন, তখন তাঁর প্রশাসন লাতিনে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সামরিক উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সেখানে অভিযান আরও বিস্তারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে এবং ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রথম হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি বিশেষ অভিযান জাহাজ এবং একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত আক্রমণকারী সাবমেরিন। আগামী সপ্তাহে বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড সেখানে পৌঁছাবে। এর সঙ্গে আরও তিনটি যুদ্ধজাহাজ এবং চার হাজারের বেশি অতিরিক্ত সেনা যুক্ত হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এর ফলে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েন করা জনবল হবে ১৬ হাজারের মতো। যার মধ্যে ১০ হাজার সেনা এবং ৬ হাজার নাবিক। জেরাল্ড আর ফোর্ডের সঙ্গে পাঁচটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার—ইউএসএস মাহান, উইনস্টন এস চার্চিল, বেইন্ডরিজ, মিশার এবং ইউএসএস ফরেস্ট শেরম্যানও সেখানে যোগ দিচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে শুক্রবার সাংবাদিকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি ভেনেজুয়েলার ভেতরে সামরিক হামলার কথা ভাবছেন, তখন ট্রাম্প বলেন, ‘না।’

নৌবাহিনীর এই শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি, পেন্টাগন ভেনেজুয়েলার উপকূলের ওপর দিয়ে বোমারু বিমান উড়িয়ে শক্তি প্রদর্শন করেছে। এ ছাড়া, তারা ওই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটিগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পুয়ের্তো রিকোর একটি ঘাঁটিতে এখন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও রাখা হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন প্রশাসন বি-১ ল্যান্সার, বি-৫২ বোমারু বিমান, এমকিউ-৯ রিপার আনম্যানড ভেহিকলসহ বিমানবাহিনীর কৌশলগত বিভিন্ন যানও মোতায়েন করেছে।

জেরাল্ড ফোর্ড বিমানবাহী রণতরির সঙ্গে আসা পাঁচটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ছাড়াও আগে থেকেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোতায়েন করার জন্য পাঠানো হয়েছে আরও পাঁচটি একই ধরনের যুদ্ধজাহাজ। সেগুলো হলো—ইউএসএস জ্যাসন ডানহাম, স্টকডেল, গ্রেভলি, লেক এইরি এবং ইউএসএস গেটিসবার্গ। এর বাইরে, উভচর আক্রমণে ব্যবহৃত ইউএসএস আইও জিমা এবং ইউএসএস সান আন্তোনি—এই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পারমাণবিক শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন ইউএসএস নিউপোর্ট নিউজও মোতায়েন করা হয়েছে ক্যারিবীয় অঞ্চলে।

ভেনেজুয়েলা উপকূলে মার্কিন সামরিক অবস্থানের বিষয়ে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আমেরিকা প্রোগ্রামের পরিচালক রায়ান বার্গ বলেন, ‘শুরু থেকেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি স্বাভাবিক মাদকবিরোধী অভিযানের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। এতে বোঝা যায়, এই মিশন শুরু থেকেই আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।’

বার্গ আরও বলেন, বিমানবাহী রণতরির সংযোজন সম্ভবত ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এই সম্প্রসারিত অভিযান এখন প্রায় প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের জাহাজের কাছ থেকে চাওয়াটা অনেক। কারণ, মাত্র তিনটি এমন জাহাজই মোতায়েন থাকে।’ ফোর্ড আগামী সপ্তাহে ক্যারিবিয়ান সাগরে পৌঁছালে ‘একধরনের সময়সীমা শুরু হবে—ট্রাম্পের হাতে তখন থাকবে প্রায় এক মাস, ওই সময়ের মধ্যেই তাঁকে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নইলে জাহাজটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে’।

এদিকে, ওয়াশিংটনে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা বলছেন, এসব অভিযানের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে তাঁরা ক্রমেই বিরক্ত হয়ে উঠছেন। কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভাব্য হামলার আইনি ভিত্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ভেনেজুয়েলা উপকূলে তথাকথিত মাদকবাহী নৌযানে মার্কিন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার’ শামিল। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন এখনো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে ‘লক্ষ্যবস্তু করা নৌকাগুলোর লোকজন অন্যের জীবনের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি ছিল’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে বরাদ্দ দেবেন না ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি বামপন্থী প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি শহরটিতে ফেডারেল বরাদ্দ দেবেন না।

রোববার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্য বা শহরগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ফেডারেল অনুদান কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, জোহরান মামদানি তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্ক সিটি চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন পাউন্ড) ফেডারেল সহায়তা পেয়েছে। তবে মামদানি জয়ী হলে এই সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

সোমবার এক বক্তব্যে মামদানি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিউইয়র্ক সিটিতে তাঁর প্রতিচ্ছবি তৈরি নয়, বরং বিকল্প তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এমন এক শহর চাই, যা এখানে বসবাসকারী সবার মর্যাদায় বিশ্বাস করে।’

অ্যান্ড্রু কুমো পাল্টা বক্তব্যে বলেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একমাত্র প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়েছি। নিউইয়র্কের জন্য লড়াই করার সময় আমি থামব না।’

কুমো কোভিড-১৯ মহামারির সময় নিউইয়র্কের গভর্নর ছিলেন। তখন বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্য ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। যদিও পরবর্তী সময়ে রাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন রাখার অভিযোগে কুমোও সমালোচনার মুখে পড়েন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশ ইরান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ইরানে ৩০ জন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ছবি: আইএইচআর
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ইরানে ৩০ জন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ছবি: আইএইচআর

মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ইরানে মৃত্যুদণ্ডের উন্মাদনা চলছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে অন্তত ৩১ জন নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে; যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৩০ জন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এসব নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাঁরা তাঁদের স্বামীকে হত্যা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইরানিয়ান মানবাধিকার সংগঠন আব্দর রহমান বোরোমান্ড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রয়া বোরোমান্ড বলেন, কাউকে খুনের জন্য ইরানে কোনো কারাদণ্ডের বিধান নেই। হয় আপনাকে ক্ষমা করা হবে অথবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

কিন্তু ইরানের চেয়েও যেসব দেশে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেখানেও এত বেশিসংখ্যক নারীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না বলে তথ্য দিচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে এসব মৃত্যুদণ্ডের মাত্র ১২ শতাংশ সরকারি সূত্রে প্রকাশ করা হয়।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ।

রয়া বোরোমান্ড বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে পরবর্তী ২২ বছরে কমপক্ষে ২৩৩ জন নারীর মৃত্যুদণ্ডের তথ্য পেয়েছি। তাদের মধ্যে ১০৬ জনকে খুনের দায়ে আর ৯৬ জন অবৈধ মাদকসংক্রান্ত অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’ এর একটি ক্ষুদ্র অংশকে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বোরোমান্ড।

এ ছাড়া দেশটির আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পরিবর্তন করা যায় না। ‘দিয়াহ’ বা রক্তঋণ নিয়ে শুধু নিহতের পরিবার পারে কাউকে ক্ষমা করতে।

সম্প্রতি গোলি কোহকান নামের এক বালিকাবধূর মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে ইরানের এই অন্ধকার দিকটি আবারও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ২৫ বছর বয়সী গোলি কোহকান নামের এই নারী সাত বছর ধরে উত্তর ইরানের গোরগান কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায়। ২০১৮ সালের মে মাসে ১৮ বছর বয়সে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে আদালত তাঁকে ‘কিসাস’ (প্রতিশোধমূলক শাস্তি) আইনে মৃত্যুদণ্ড দেন।

গোলির মতো আরও তিন নারী মৃত্যুদণ্ডের মুখে পড়েছিলেন। সামিরা সাবজিয়ান ফারদ, যাকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পর স্বামীর হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফাতেমা সালবেহি, ২০০৮ সালে ১৭ বছর বয়সে স্বামীর হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন; পরে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। জয়নাব সেকানভান্দ, ২০১২ সালে ১৭ বছর বয়সে স্বামীর হত্যার অভিযোগে আটক হন। আদালতে স্বামীর নির্যাতনের কথা জানালেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত অপেরা হাউস। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত অপেরা হাউস। ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনের তরুণ হেইডেন ফিশার এক বছর আগে চলে যান অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। নিউজিল্যান্ডে প্রতি সপ্তাহে তাঁকে আয়ের অর্ধেকটাই খরচ করতে হতো বাজারে। অস্ট্রেলিয়ায় অবশ্য একই পণ্য তিনি এক-চতুর্থাংশ মূল্য দিয়ে কিনতে পারছেন।

সিডনিতে একটি একটি বইয়ের দোকানে কাজ করা ফিশার বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছি এখন—যেটা ওয়েলিংটনে অসম্ভব মনে হয়েছিল।’

স্ট্যাটস এনজেড-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গত এক বছরে নিউজিল্যান্ডের ৭৩ হাজার ৯০০ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। এই পরিসংখ্যানটি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে দেশ ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের মধ্যে ৫৮ শতাংশই গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ২০২৪ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বাধিক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউজিল্যান্ড এই ‘মেধা পাচার’ এর প্রভাব নিয়ে চিন্তিত হলেও অস্ট্রেলিয়া এতে লাভবান হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাইগ্রেশন হাবের পরিচালক অ্যালান গ্যামলেন বলেন, ‘১৯৭০-এর দশক থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে মানুষের প্রবাহ বেড়েছে। নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি দুর্বল এবং বৈশ্বিক ধাক্কায় বেশি প্রভাবিত হয়।’

তিনি জানান, মাথাপিছু জিডিপিতে দুই দেশের পার্থক্যই এই প্রবণতার জন্য দায়ী। অস্ট্রেলিয়ায় যেখানে মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৪ হাজার ৪০০ ডলার, নিউজিল্যান্ডে তা মাত্র ৪৮ হাজার ডলার।

২২ বছর বয়সী জেনিভিভ ফালটন চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গেছেন। আগে ঘণ্টায় তিনি ২২.৭০ নিউজিল্যান্ড ডলার আয় করতেন। এখন তাঁর আয় দ্বিগুণ। এতে তিনি কম সময় কাজ করেও তাঁর পছন্দের ইলাস্ট্রেশনের পেশায় মন দিতে পারছেন। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার প্রেরণাটুকু তিনি তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তাঁর ভাই একজন ওয়েল্ডার। দুই বছর আগে তিনি মেলবোর্নে গিয়ে বোনকে বলেছিলেন, ‘এখানে কাজও বেশি, টাকাও পাগল করা।’

একইভাবে, ঐতিহ্যবাহী সামোয়ান ট্যাটু শিল্পী টাইলা ভায়াউ বলেন, ‘অকল্যান্ড (নিউজিল্যান্ডের শহর) এখন আর আমার বেড়ে ওঠা শহরের মতো নেই। জীবনযাত্রার ব্যয় ও বাড়ির দাম সেখানে এমন পর্যায়ে যে, ফেরার চিন্তা করাও অসম্ভব।’ তিনি এখন পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে স্থায়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের তরুণ অ্যান্ডি ফেকনি জানান, তাঁর সিডনিতে যাওয়া সম্পূর্ণ ক্যারিয়ারভিত্তিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় সুযোগ অনেক বেশি, বিশেষ করে পেশাগতভাবে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, নিউজিল্যান্ড থেকে যারা অস্ট্রেলিয়ায় যান তাঁদের ৮০ শতাংশই অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে বসবাস করেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন ও গোল্ড কোস্টে এক-তৃতীয়াংশের বেশি নিউজিল্যান্ডের প্রবাসীরা থাকেন। এরপরই তাঁদের পছন্দের শহরের মধ্যে রয়েছে মেলবোর্ন ও সিডনি।

গল্পের শুরুতে যার কথা বলা হয়েছিল, সেই হেইডেন ফিশার বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড সুন্দর দেশ ঠিকই। কিন্তু সুন্দর পাহাড় ভাড়া আর বিল পরিশোধ করে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস করা মেজর জেনারেলকে গ্রেপ্তার করল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মেজর জেনারেল ইয়িফাত তমার-ইয়েরুশালমি। ছবি: সংগৃহীত
মেজর জেনারেল ইয়িফাত তমার-ইয়েরুশালমি। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আটক এক ফিলিস্তিনি বন্দীর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় দেশটির সাবেক সামরিক প্রসিকিউটর মেজর জেনারেল ইয়িফাত তমার-ইয়েরুশালমিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি পুলিশ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রীর বরাতে জানিয়েছে, আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে তাঁকে আটক করা হয়। ঘটনাটি ঘিরে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

ভিডিওটি ফাঁসের পর তমার-ইয়েরুশালমি পদত্যাগ করেন ও আত্মগোপন করেন। পরে তাঁকে আটক করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ ঘটনাকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘গুরুতর ক্ষতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জানা গেছে, গতকাল রোববার নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন তমার-ইয়েরুশালমি। এতে তাঁর আত্মহত্যাচেষ্টা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর পদত্যাগপত্রে তমার-ইয়েরুশালমি স্বীকার করেন, তাঁর কার্যালয়ই গত বছর ভিডিওটি গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছিল। পরে ওই ঘটনায় পাঁচ রিজার্ভ সেনাকে বন্দীদের প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

আজ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির বলেন, গতকাল রোববার রাতের ঘটনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, তমার-ইয়েরুশালমিকে যেখানে রাখা হয়েছে, সেই আটককেন্দ্রে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হবে। তবে তাঁকে কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তেল আবিবের এক আদালত আগামী বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা, আস্থাভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা ও সরকারি তথ্য ফাঁসের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ ঘটনায় সাবেক প্রধান সামরিক প্রসিকিউটর কর্নেল মাতান সলোমেশকেও আজ রাতে আটক করা হয় এবং তাঁকেও আদালতে হাজির করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনা রেডিও।

এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, দক্ষিণ ইসরায়েলের সদে তেইমান সামরিক ঘাঁটির ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় তমার-ইয়েরুশালমি পদত্যাগ করেছেন।

এ মামলার সূত্রপাত ২০২৪ সালের আগস্টে, যখন ইসরায়েলের চ্যানেল-১২ সদে তেইমান ঘাঁটির একটি নজরদারি ফুটেজ সম্প্রচার করে। ঘাঁটিটি গাজা যুদ্ধের সময় আটক ফিলিস্তিনিদের রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। ফুটেজে দেখা যায়, সেনারা অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, যদিও দৃশ্যটি সরাসরি দেখা যায়নি, কারণ, সৈন্যরা ঢাল ধরে সেটি আড়াল করে রেখেছিল।

ভিডিওটি একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রচার করে, যা বিশ্বজুড়ে, এমনকি ইসরায়েলের ভেতরেও বিক্ষোভের জন্ম দেয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানায়, পাঁচ রিজার্ভ সেনাকে সদে তেইমান ঘাঁটিতে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, তারা এক বন্দীকে গুরুতর নির্যাতন করেছে। ওই বন্দীর নিতম্বে ধারালো বস্তু ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা তাঁর মলদ্বারের কাছ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

সেনাবাহিনী আরও জানায়, নির্যাতনের ফলে ওই বন্দীর পাঁজরের হাড় ফেটে যায়, ফুসফুসে ছিদ্র হয় এবং মলদ্বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নির্যাতনের ঘটনাটি ২০২৪ সালের ৫ জুলাই দক্ষিণ ইসরায়েলের সদে তেইমান সামরিক ঘাঁটিতে তল্লাশির সময় ঘটে।

গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই ভিডিও ফাঁস ইসরায়েলের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ ঘটনা। এটি আমাদের রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিতে বড় আঘাত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত