Ajker Patrika

অপারেশন স্যান্ডওয়েজ: বিরোধীদের কোণঠাসা করতে নোংরা রাজনীতির খেলা

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২২, ২৩: ৪৪
অপারেশন স্যান্ডওয়েজ: বিরোধীদের কোণঠাসা করতে নোংরা রাজনীতির খেলা

রিচার্ড নিক্সন এবং ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কথা অনেকেরই জানা। তবে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ঘটার পেছনের পরিকল্পনার বিষয়টি বেশ চমকপ্রদ। অপারেশন জেমস্টোনের ব্যর্থ পরিণতিই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি। তবে জেমস্টোন মূলত ‘অপারেশন স্যান্ডওয়েজ’ নামে আরেকটি পরিকল্পনার বর্ধিত রূপ।

অপারেশন স্যান্ডওয়েজের বীজ রোপিত হয় ১৯৬৮ সালে। সে বছর রিচার্ড নিক্সন রিপাবলিকান পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নিক্সনের চিফ অব স্টাফ ছিলেন এইচআর হ্যাল্ডেমেন। ১৯৫২ সালে নিক্সন আইজেনহাওয়ারের রানিংমেট হিসেবে নির্বাচন করার সময় তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন হ্যাল্ডেমেন। তাঁর সহকারী ছিলেন গর্ডন সি. স্ট্র্যানচান।

১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিক্সনের দ্বিতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করাটা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কাবু করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয় নিক্সন শিবির। নিক্সনের নির্বাচনী প্রচারণার মূল কৌশল ছিল বিরোধী দল ও নেতাদের বিষয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানো। নির্বাচনের এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের আগস্টে স্ট্র্যানচান নিক্সনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী এডমন্ড মুস্কির অফিসে অনুপ্রবেশ করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি বাতলে দেন। এর জন্য নিক্সনের নির্বাচনী প্রচারণায় গঠিত কমিটি ফর রি–ইলেকশন অব দ্য প্রেসিডেন্টের (সিআরপি) সদস্য জেব স্টুয়ার্ট ম্যাগ্রুডারকে প্ররোচিত করেন স্ট্র্যানচান। বিষয়টি নির্বাচনী প্রচারণার মূল পরিকল্পনায় না এলেও আইডিয়াটিকে আরও বিস্তৃত করা কি না তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন সিআরপির সদস্যরা।

ডেমোক্রেটিক পার্টির দলীয় কার্যালয় ওয়াটারগেট কমপ্লেক্স।১৯৭২ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধীদের কোণঠাসা করার পাশাপাশি ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন প্রশমিতও করতে হয়েছে নিক্সনকে। ফলে সিআরপির অন্যতম কাজ ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন নিক্সনের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা নিরূপণ করা। ওই সময় নিক্সন শিবির ধারণা করছিল, ডেমোক্র্যাটরা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি নজরদারি বিভাগ খুলতে পারে। এই ধারণার বশবর্তী হয়েই পাল্টা গোয়েন্দা ইউনিট গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেয় সিআরপি।

সেই ইউনিটকে কার্যকর করতে হ্যাল্ডেমেন, নিক্সনের সহযোগী জন এলরিখম্যান এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও রিপাবলিকান পার্টির কর্মী জন কফিল্ড একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা অনুসারে মোটাদাগে, ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিসে নজর রাখা, ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন নস্যাৎ করা ছাড়াও বিরোধীদের ব্যক্তিগত–যৌন জীবনের ওপর নজর রাখা, তাদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া, ব্যক্তিগত অভ্যাসের বিষয়ে জানা— এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল। কারা এই অপারেশনে কাজ করবে তাদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছিলেন কফিল্ড। টনি উলাসিজ নামে এক ফিল্ড এজেন্টকে নিয়োগও দেওয়া হয়েছিলেন। সমগ্র পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন স্যান্ডওয়েজ’।

ওয়েন্ডেল কোলসনের সঙ্গে কথা বলছেন এইচ আর হ্যাল্ডেমেন (বসা)।রিচার্ড নিক্সনের ব্যক্তিগত অ্যাটর্নি হার্ব কামবাখ ‘অপারেশন স্যান্ডওয়েজের’ বাজেট বাবদ তৎকালীন বাজারে ৫০ হাজার ডলার (২০২১ সালের বাজার অনুযায়ী ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫২ ডলার) স্থানান্তর করেছিলেন কফিল্ডের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু টাকা পেলেও ওপরের নির্দেশ না থাকায় কাজে নামতে পারছিলেন না কফিল্ড। পরে ১৯৭১ সালের অক্টোবরে এসে হ্যাল্ডেম্যান ইচ্ছা পোষণ করেন, ‘অপারেশন স্যান্ডওয়েজের’ পরিকল্পনাকে আরও বর্ধিত করতে। তিনি এই পরিকল্পনার বাজেট বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল ও নিক্সনের সমর্থক জন এন মিশেলকে। হ্যাল্ডেম্যান মিশেলকে ৮ লাখ ডলার ( ২০২১ সালের হিসাবে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার ৮৩৫ ডলার) দিতে অনুরোধ করে। এই অর্থ কেবল নজরদারি ও অন্যান্য কাজের জন্যই চাওয়া হয়েছিল।

রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ওয়েন্ডেল কোলসন। ছবি: ব্রিটানিকার সৌজন্যেবর্ধিত পরিকল্পনায় কফিল্ড জেমস ম্যাককর্ড নামে সিআইএর এক সাবেক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল—রিপাবলিকান পার্টির অফিস ও সিআরপির কার্যক্রমকে নজরদারির আওতা থেকে মুক্ত রাখা। সে সময় ডেমোক্র্যাট সিনেটর, ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী ও নিক্সনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী পল ম্যাকক্লৌস্কির কাছে পাঠানো হয় টনি উলাসিজকে। সাংবাদিকের ছদ্মবেশে টনি ম্যাকক্লৌস্কির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাছ থেকে তথ্য বের করে এনেছিলেন।

 জি. গর্ডন লিডিকিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসায় অক্টোবর মাসে হ্যাল্ডেম্যান, মিশেল, স্ট্র্যানচান এবং ম্যাগ্রুডার মিলিত হন অপারেশন স্যান্ডওয়েজ নিয়ে আলোচনা করতে। আলোচনায় মিশেল (মূল অর্থদাতা) একজন আইনজীবীকে অপারেশন স্যান্ডওয়েজের দায়িত্ব দিতে চাপ দেন। তাঁর চাপেই জি. গর্ডন লিডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর বেশ কিছু কারণ দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয় কফিল্ডকে। দায়িত্ব নিয়েই লিডি প্রকল্পের নাম বদলে রাখেন ‘অপারেশন জেমস্টোন’। এই পরিকল্পনায় বেশ কিছু অবৈধ কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে দুঃসাহসী পরিকল্পনা ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির দলীয় কার্যালয় ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে অনুপ্রবেশ করা।

এর পরের ঘটনা প্রায় সবারই জানা। সব মিলিয়ে অপারেশন স্যান্ডওয়েজ এবং জেমস্টোনের সঙ্গে ৬৯ জন জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে ৪৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নিক্সন। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেন, যদি অপারেশন স্যান্ডওয়েজ পরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে যেতে পারত তবে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নাও ঘটতে পারত। বেঁচে যেতেন নিক্সন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত