Ajker Patrika

ট্রাম্প বনাম কমলা: হোয়াইট হাউস কার, কী বলছে পোল ট্র্যাকার

আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩৮
হোয়াইট হাউস কার দখলে যা তা নির্ধারিত হতে যাচ্ছে ৫ নভেম্বর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
হোয়াইট হাউস কার দখলে যা তা নির্ধারিত হতে যাচ্ছে ৫ নভেম্বর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। এরই মধ্যে, দেশটির ৭ কোটি ৮০ লাখের বেশি ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন। ভোট দেওয়ার পর ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে একটি বুথ ফেরত জরিপ পরিচালনা করেছে পোলস্টার। জরিপে দেখা গেছে, ইলেকটোরাল কলেজে দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অনুষ্ঠিত হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জিতবেন তা নির্ধারণ করে দেবে কয়েকটি ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য। এসব অঙ্গরাজ্যে যিনি সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন আগামীকাল বিজয়ের মালা পড়বে তাঁর গলায়।

পোলস্টার পরিচালিত এই জরিপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অঙ্গরাজ্য স্তরে সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের সম্ভাব্য ফলাফলের পরিসর নির্ধারণ করেছে। জরিপ অনুসারে, ভোটারদের প্রবণতা ইঙ্গিত করে যে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের ১৯১টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট প্রাপ্তি অনেকটাই নিশ্চিত। ডেমোক্রেটিক পার্টি ঘেঁষা ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে আরও ৩৫ টি। সব মিলিয়ে, এখন পর্যন্ত কমলার পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ২২৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের।

রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই জরিপ ইঙ্গিত করে যে, তিনি ১২৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ট্রাম্পের পক্ষে যাবে—যা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে আরও ৯৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ট্রাম্প ঘেঁষা। অর্থাৎ, ২১৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ট্রাম্পের পক্ষে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে সব মিলিয়ে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। পোলস্টার-ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের জরিপ যদি আমলে নেওয়া হয়, এ ক্ষেত্রে অগ্রিম ভোটের প্রবণতা দেখাচ্ছে যে, কমলা হ্যারিস সামান্য ব্যবধানে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। অর্থাৎ, আগামীকাল এই দুই প্রার্থীর মধ্যে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুমান বলছে, ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটসগুলোর মধ্যে নেভাদায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস উভয়ই সমান সমান ভোট পাবেন। উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা হ্যারিস দশমিক ৪ শতাংশ এগিয়ে থাকবেন। পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প কমলার চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ এগিয়ে থাকবেন। মিশিগানে হ্যারিস ১ দশমিক ২ শতাংশ এগিয়ে থাকবেন।

এ ছাড়া, নর্থ ক্যারোলাইনাতে ট্রাম্প এগিয়ে থাকবেন ১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটে। জর্জিয়াতে ট্রাম্প কমলার চেয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ এগিয়ে থাকবেন। অ্যারিজোনায় এগিয়ে থাকবেন ট্রাম্প, কমলার চেয়ে তিনি ২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট বেশি পাবেন এই অঙ্গরাজ্যে।

সুইং স্টেটসগুলোর মধ্যে নেভাদার ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা ৬টি, যেখানে কমলা ও ট্রাম্প সমান সমান। এর বাইরে, কমলা আর যে দুটি স্টেটে এগিয়ে থাকবেন—উইসকনসিন ও মিশিগান—সেখানে ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা যথাক্রমে ১০ ও ১৫টি করে। এর বাইরে, ট্রাম্প যেসব অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে থাকবেন—পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও অ্যারিজোনা—সেখানে ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা যথাক্রমে ১৯, ১৬, ১৬ ও ১১টি করে।

এদিকে, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস স্থানীয় সময় আজ সোমবার পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে যে জরিপ পরিচালনা করেছে সেখানে ‘পপুলার ভোট’ তথা জনগণের সরাসরি ভোটে এগিয়ে কমলা হ্যারিস। জরিপ বলছে, কমলা হ্যারিস ভোট পাবেন ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প পাবেন ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আটকে গেল ৩ চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের ‘শেনঝু-২০’ মহাকাশযানের তিন নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি। ছবি: সংগৃহীত

তিন চীনা নভোচারীর পৃথিবীতে ফেরার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। কারণ তাঁদের ফিরে আসার মহাকাশযান ‘শেনঝু-২০’ সম্ভবত মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (সিএনএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নভোচারী চেন দং, চেন ঝোংরুই এবং ওয়াং জি ছয় মাসের মিশন শেষে বুধবারই পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরার ঠিক আগমুহূর্তে ‘শেনঝু-২০’ এর সম্ভাব্য আঘাতজনিত ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ায় মিশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে মহাকাশযানটির আঘাত বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলছে। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে বা কখন নভোচারীরা ফিরবেন, সেই বিষয়ে কোনো সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি। এই নভোচারীরা গত এপ্রিলে চীনের অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

এদিকে কয়েক দিন আগেই চীন সফলভাবে ‘শেনঝু-২১’ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে আরও তিন নতুন নভোচারীকে ‘তিয়ানগং’ বা ‘স্বর্গীয় প্রাসাদ’ নামে তাদের মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছে। নতুন এই দলটিতে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী উ ফেই, যিনি চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ নভোচারী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। নতুন দলটি স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পুরোনো দলটির পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল।

মহাকাশ স্টেশনে ‘শেনঝু-২১’ পৌঁছানোর পর নতুন ও পুরোনো দুটি মহাকাশচারী দলের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয় চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। সেখানে পৃথিবীতে ফেরার অপেক্ষায় থাকা চেন দং বলেন, ‘আমরা এখন পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ কিন্তু তাঁদের মহাকাশযান পরিদর্শনের পরই আটকে যায় পৃথিবীতে ফেরার প্রক্রিয়া।

চীনা মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, নভোচারীদের নিরাপত্তা ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেনঝু কর্মসূচি প্রতি ছয় মাস পরপর পরিচালিত হয় এবং চীনের মহাকাশ অগ্রযাত্রার একটি বড় গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন মহাকাশ গবেষণায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে।

চীনের এই ধারাবাহিক উন্নতি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যদিও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছর মার্কিন নভোচারী সুনি উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরও বোয়িং স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন। তাঁরা অবশেষে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফেরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের মন্দিরে সোনা চুরি নিয়ে তুলকালাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৮
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি
দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দির। ছবি: বিবিসি

দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত সবরিমালা মন্দিরে সোনা চুরির অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কেরালা হাইকোর্ট জানিয়েছে, মন্দিরের কয়েকটি দেবমূর্তি থেকে সোনার আবরণ খুলে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক ভক্তের দর্শনস্থল এই মন্দিরে এমন কেলেঙ্কারি ভক্তদের হতবাক করেছে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, সোনা চুরির ঘটনায় কেরালা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে এবং পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মন্দিরের সাবেক সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিও রয়েছেন। আদালতের দুই বিচারপতি রাজা বিজয়ারাঘবন ভি এবং কে ভি জয়কুমার গত সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটি তদারক করছেন।

কী চুরি হয়েছে?

এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি দ্বাররক্ষক মূর্তি। এই দুটি মূর্তি প্রধান দেবতা আয়াপ্পার গর্ভগৃহের বাইরে স্থাপিত। আদালতের নিযুক্ত সবরিমালা স্পেশাল কমিশনারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ওই মূর্তি দুটির বহু অংশ থেকে সোনার আবরণ অদৃশ্য।

মন্দিরের নথি অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর দান করা ৩০.২৯ কেজি সোনা ব্যবহার করে মূর্তি ও মন্দিরের দরজা, খিলান, স্তম্ভসহ বিভিন্ন অংশ সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে ত্রিবাঙ্কুর দেবাসম বোর্ড (টিডিবি) তখনকার সহকারী পুরোহিত উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে নতুন করে সোনা দিয়ে মোড়ানোর জন্য দ্বাররক্ষক মূর্তি দুটিকে মন্দিরের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেয়—যা একটি বিরল ঘটনা।

দুই মাস পর মূর্তি ফেরত এলেও ওজন মাপা হয়নি। পরে তদন্তে দেখা যায়, মূর্তিগুলো অনেক হালকা হয়ে গেছে। এসআইটি জানায়, মূর্তি, পাদমূর্তি ও দরজার ফ্রেম মিলিয়ে প্রায় ৪ কেজি ৫৪০ গ্রাম সোনা নিখোঁজ হয়েছে। আদালত এই ঘটনাকে ‘সোনা ডাকাতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিচারকেরা তীব্র ভাষায় টিডিবিকে দোষারোপ করেছেন। কারণ তারা মূর্তিগুলো ‘তামার ফলক’ হিসেবে রেকর্ডে দেখিয়েছিল। এমনকি উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে ৪৭৫ গ্রাম সোনা নিজের কাছে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তিনি পরে ওই সোনা এক আত্মীয়ার বিয়েতে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইমেইল করেন। এই বিষয়টিকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আদালত।

অভিযুক্ত ও প্রতিক্রিয়া

উণ্ণিকৃষ্ণন পট্টিকে আদালতে হাজির করার পর বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়। বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, সত্য একদিন প্রকাশ পাবে।’

এদিকে পুলিশ আরও দুই বোর্ড কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই কেলেঙ্কারি ঘিরে কেরালায় রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিরোধী কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীসন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘প্রায় ৫ কেজি সোনা চুরি গেছে, এর সঙ্গে কর্মকর্তারাও জড়িত।’ তিনি মন্দির বিষয়ক মন্ত্রী ভি এন বাসাবানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

মন্ত্রী বাসাবান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ‘তদন্ত আদালতের নজরদারিতে চলছে, আমরা কিছুই লুকাব না।’

কেরালার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যেই এই তদন্ত শেষ করে দোষীদের পরিচয় বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামা দুয়াজি শুধু মামদানির স্ত্রী নন, একজন প্রতিভাবান শিল্পীও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির পাশে তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ছবি: দ্য পিপল

সিরীয়-আমেরিকান ইলাস্ট্রেটর ও ডিজাইনার রামা দুয়াজি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী হিসেবে। তবে নিজস্ব পরিচয়ে তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে নারী, আরব পরিচয়, প্রতিরোধ ও সহমর্মিতার বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, রামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে। ৯ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি দুবাইয়ে চলে যান। সেখানেই বড় হন এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কাতারের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের রিচমন্ড ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।

রামা দুয়াজির শিল্পকর্ম মূলত কালো-সাদা রেখাচিত্রে নারীর প্রতিকৃতি, যেখানে দেখা যায় নারীসত্তা, অভিব্যক্তি ও বৈচিত্র্যের প্রতি গভীর মমতা। তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, অ্যাপল, স্পোটিফাই, ভাইস এবং টেট মডার্ন–এর মতো বিশ্বখ্যাত মাধ্যমগুলোতে। পাশাপাশি ভার্জিনিয়া ও বৈরুতে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে।

২০২১ সালে এক ডেটিং অ্যাপে রামা ও জোহরান মামদানির পরিচয় হয়। পরে তাঁদের প্রথম দেখা হয় ব্রুকলিনের একটি ইয়েমেনি কফিশপে। এভাবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা লোয়ার ম্যানহাটনের আদালতে বিয়ে করেন। দুবাইয়ে তাঁদের বাগদান ও নিকাহ অনুষ্ঠানটি ছিল রূপকথার মতো। সূর্যাস্তের পটভূমিতে ফুল ও সবুজে সাজানো এক রোমান্টিক আবহ তৈরি করা হয়েছিল।

রামা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে শিল্পকর্ম ও সামাজিক বিষয়ে বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের প্রতি তাঁর অবস্থান বহুবার প্রকাশ পেয়েছে। ২০২১ সালে একটি ইলাস্ট্রেশনে তিনজন মানুষকে তিনি একসঙ্গে কনুই মিলিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়েছিলেন, যার ওপরে আরবিতে লেখা ছিল—‘আমরা ছাড়ব না।’ গাজায় ক্ষুধা ও মানবিক সংকট নিয়েও তিনি সচেতনতা তৈরির কাজ করেছেন।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে রামা হবেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বাসভবন গ্রেসি ম্যানসনে বসবাসকারী প্রথম জেনারেশন–জেড সদস্য। তবে জোহরান মামদানির ভাষায়, ‘রামা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি একজন অসাধারণ শিল্পী, যিনি নিজের কাজ দিয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য।’

করোনা মহামারির বেশ কিছু সময় পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে কাটিয়েছিলেন রামা। পরে নিউইয়র্কে স্থায়ী হন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নতুন শহরে এসেছিলাম, কাউকে চিনতাম না। তাই ইনস্টাগ্রামে দেখা সৃজনশীল মানুষদের বার্তা পাঠাতে শুরু করি। অবাক করা বিষয় হলো, নিউইয়র্কে মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ায় বেশ খোলা মন। এভাবেই আমি অনেক দারুণ আরব-আমেরিকান শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি।’

রামা দুয়াজি আজ শুধু নিউইয়র্কের মেয়রের স্ত্রী নন, বরং আধুনিক আরব নারীর এক সাহসী ও সৃজনশীল প্রতীক, যিনি শিল্পের মাধ্যমে নিজের শিকড় ও মানবিক দায়বদ্ধতা একসূত্রে বেঁধেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ডে যৌন শিক্ষার ক্লাস থেকে ব্রিটিশ সন্ন্যাসিনী গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫০
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে ক্লায়েন্টদের ক্লাস নিচ্ছেন মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ কোহ ফাঙ্গানে ‘সেক্স ইয়োগা’ বা তান্ত্রিক যোগচর্চা শেখানোর অভিযোগে এক ব্রিটিশ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মারিয়া শেচেতিনিনা নামে ৪০ বছর বয়সী ওই নারী নিজেকে ‘তান্ত্রিক আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্র যৌনতার’ শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ‘মারিয়া স্কাই লাভ’ নামে সক্রিয় ছিলেন এবং প্রতি সপ্তাহে যোগা ও তান্ত্রিক ম্যাসাজ ক্লাস চালাতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর পেছনে ক্লাস নিচ্ছিলেন মারিয়া। এমন সময় পর্যটন পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে।

আটকের সময় মারিয়া পুলিশকে বলেন, ‘আমার আইনজীবী বলেছেন, এটা এখানে বৈধ।’ তবে পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট পরীক্ষা করে দেখতে পায়—তিনি একটি রেসিডেন্সিয়াল প্রোপার্টি কোম্পানির কাস্টমার রিলেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজের অনুমতি পেয়েছেন, যোগা বা ম্যাসাজ শেখানোর অনুমতি নেই তাঁর।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ক্লাসে ৪০০ বাথ (প্রায় ১৫০০ টাকা) ফি নিতেন মারিয়া। পুলিশ তাঁর কাছ থেকে যোগা নোট, বিজ্ঞাপন ফ্লায়ার, টিকিট, ব্যানার এবং কিউআর কোড-সংবলিত প্রচারপত্র জব্দ করেছে।

পর্যটন পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল উইনিত বুনচিত জানান, মারিয়ার ‘অশালীন ও ঝুঁকিপূর্ণ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানানোর পরই তদন্ত শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত জরুরি ডিক্রির আওতায় তান্ত্রিক যোগা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা অনুমোদিত নয়। তাই তাঁকে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

এর আগে চলতি বছরের মার্চে একই দ্বীপে পোল্যান্ডের ইউটিউবার মিখাল গ্রিগোরুককেও ‘সেক্স যোগা’ ক্লাস চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

কোহ ফাঙ্গান দ্বীপটি দীর্ঘদিন ধরে ‘হিপি স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে আধ্যাত্মিক রিট্রিট, নিরামিষ ক্যাফে ও বিখ্যাত ফুল মুন পার্টির কারণে সারা বিশ্বের পর্যটকেরা ভিড় জমান। তবে পুলিশের আশঙ্কা, অনেক বিদেশি পর্যটক সঠিক ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেডিটেশন ও বিকল্প থেরাপির কর্মশালা চালাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত