Ajker Patrika

অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান দম্পতির মর্মান্তিক পরিণতির কথা বেরিয়ে এল তদন্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হলিউড তারকা জিন হ্যাকম্যান ও তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়া। ছবি: সংগৃহীত
হলিউড তারকা জিন হ্যাকম্যান ও তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়া। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যের সান্তা ফে শহরে অবস্থিত নিজ বাড়ি থেকে অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান ও তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এই মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে জড়িত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি মরদেহ পাওয়া গেলেও হ্যাকম্যান মারা গিয়েছিলেন সম্ভবত গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। আর তাঁর স্ত্রী বেটসি মারা গিয়েছিলেন তাঁরও এক সপ্তাহ আগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুইবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জেতা অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান তাঁর শেষ সময়টিতে খুব একাকী ছিলেন। এতটাই একা যে, কারও কাছে সাহায্য চাওয়া, এমনকি নাওয়া-খাওয়ার কথাও ভুলে গিয়েছিলেন।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর আলঝেইমার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সম্ভবত বুঝতেই পারেননি, তাঁর স্ত্রী তথা ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের সঙ্গী বেটসি মারা গেছেন। বেটসির মরদেহ পাশে নিয়েই তিনি নিজ বাড়িতে বাস করছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি যদি হ্যাকম্যান বুঝেও থাকেন, তবে তিনি হয়তো বিভ্রান্তির বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। হয়তো শুরুর দিকে তিনি তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু বুঝতে পারেননি। পরে তিনি তাঁর মৃত স্ত্রীকে জাগানোরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরে আলঝেইমারের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এবং কিছুই করতে পারেননি। আর এই প্রক্রিয়াটি হয়তো কয়েক দিন ধরে চলেছে, যতক্ষণ না গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি নিজেও মৃত্যুবরণ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি বিরল ভাইরাসজনিত অসুস্থতায় হ্যাকম্যানের সাত দিন আগেই মারা যান তাঁর স্ত্রী ৬৫ বছর বয়সী বেটসি আরাকাওয়া। পরে চূড়ান্ত নিঃসঙ্গ অবস্থায় হ্যাকম্যানও মারা যান।

সান্তা ফেতে তাঁদের বাড়িটিতে যখন আশপাশের নিরাপত্তা কর্মীরা খোঁজ নিতে যান, তখন জানালা দিয়ে দম্পতির মৃতদেহ দেখতে পেয়ে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। প্রথমে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হলেও তদন্তের পর জানা যায়, এই দম্পতির মৃত্যুর ঘটনায় কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা নেই।

পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে, বেটসিকে একটি বাথরুমে পাওয়া যায়, যেখানে ওষুধ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। আর হ্যাকম্যানের দেহ পাওয়া যায় রান্নাঘরের কাছে। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি ও সানগ্লাস। এই দম্পতির পোষা কুকুরটিও মৃত অবস্থায় পড়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকম্যানের মৃত্যু আলঝেইমারের ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিফলন। এটি এমন একটি রোগ যা মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট করে দেয় এবং স্মৃতি ও অন্যান্য মানসিক দক্ষতা ধীরে ধীরে লোপ পায়।

অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ক্যাথরিন পিয়ারসোল বিবিসিকে জানান, আলঝেইমারের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিরা অতীত বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করতে পারেন না। তাঁরা শুধু বর্তমানেই আটকে থাকেন।

ক্যাথরিন ব্যাখ্যা করেন, ‘আমি কল্পনা করতে পারি, তিনি (হ্যাকম্যান) হয়তো তাঁর স্ত্রীকে জাগানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সফল হননি। তারপর হয়তো ঘরের অন্য কোথাও মনোযোগ চলে গিয়েছিল, হয়তো কুকুরটির দিকে। পরে আবার ফিরে এসে স্ত্রীর দেহ দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং সেই দুঃখ এভাবে তিনি বারবার অনুভব করছিলেন।’

কেউ জানে না, হ্যাকম্যান তাঁর শেষ দিনগুলো কীভাবে কাটিয়েছিলেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁর দেহে অপুষ্টির লক্ষণ দেখা গেছে। যদিও তিনি পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন না।

নিউ মেক্সিকোর প্রধান স্বাস্থ্য পরীক্ষক ড. হিদার জ্যারেল জানান, বেটসি আরাকাওয়ার মৃত্যুর কারণ ছিল ‘হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম’ (এইচপিএস)। এই রোগটি মূলত সংক্রমিত ইঁদুরের সংস্পর্শে এলে হতে পারে। আর হ্যাকম্যানের মৃত্যুর কারণ ছিল গুরুতর হৃদ্‌রোগ, যেখানে আলঝেইমার একটি সহায়ক কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

স্মৃতি ও স্নায়ুবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ড. ব্রেন্ডান কেলি বলেন, ‘আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আবেগ অনুভব করতে পারেন—যেমন ভয় বা উদ্বেগ। কিন্তু তাঁরা সেটির সমাধান করতে পারেন না।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘একজন সুস্থ ব্যক্তি হলে হয়তো সাহায্যের জন্য কাউকে ফোন করতেন বা প্রতিবেশীর কাছে যেতেন। কিন্তু আলঝেইমারে আক্রান্ত রোগী সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।’

হ্যাকম্যানের মৃত্যুর এই মর্মান্তিক ঘটনা সান্তা ফে শহরের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এই শহরের বাসিন্দা লিন্ডা বলেন, ‘আমার মা ডিমেনশিয়ায় ভুগছিলেন। তাই আমি জানি এটি কতটা কঠিন।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা জানতাম, জিন ও তাঁর স্ত্রী খুব ব্যক্তিগত জীবনযাপন করতেন। হয়তো তাঁর স্ত্রী চেয়েছিলেন তাঁকে জনসাধারণের দৃষ্টির বাইরে রাখতে। কিন্তু একা একা এটি সামলানো সত্যিই কঠিন।’

২০০৪ সালে অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন হ্যাকম্যান। অবসর নেওয়ার দীর্ঘ ১৯ বছর পর ২০২৩ সালে মাত্র এক বারের জন্য হ্যাকম্যান ও তাঁর স্ত্রীকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল। হ্যাকম্যানের তিন সন্তান ক্রিস্টোফার, এলিজাবেথ ও লেসলি বরাবরই গণমাধ্যমের বাইরে থেকেছেন এবং নিজেদের মতো করে জীবন কাটাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত