Ajker Patrika

গরিব বস্তিতে ইঁদুরের উপদ্রব, অভিজাত এলাকায় ছেড়ে দেওয়ার হুমকির পর মেলে সমাধান

গরিব বস্তিতে ইঁদুরের উপদ্রব, অভিজাত এলাকায় ছেড়ে দেওয়ার হুমকির পর মেলে সমাধান

ষাটের দশকের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হঠাৎ করে ভয়ানক ভাবে বেড়ে গিয়েছিল ইঁদুরের উৎপাত। বলাবাহুল্য গরিব বস্তি এলাকাতেই এ সমস্যা ছিল বেশি। ধনীদের বসতি ছিল অনেকটা ইঁদুর মুক্ত। ফলে কর্তৃপক্ষের যা স্বভাব! গরিবদের দিকে কেউ নজর দিচ্ছিল না। পরিস্থিতি ক্রমেই সহ্যসীমা পেরিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে করণীয় একা হাতে তুলে নেন এক ব্যক্তি। তাঁর কৌশল ছিল মোক্ষম! ফল পেয়েছিলেন হাতে হাতে। 

পশ্চিমের আর দশটা বড় শহরের মতো ওয়াশিংটন ডিসিতেও কিছু ইঁদুর বিভিন্ন বসতি ও ঝোপঝাড়ে ছিল। কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে এই শহরে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৬৪ সালে উত্তর-পূর্ব এলাকার অধিবাসী ও অধিকার কর্মী জুলিয়াস হবসন ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের এক অদ্ভুত কৌশল নেন। তাঁর বাড়ির পেছনের অংশও ইঁদুরে ভরে গিয়েছিল। এই খুদে জন্তুগুলোর অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। সম্প্রচার মাধ্যম ওয়েটার ইতিহাস বিষয়ক ব্লগ বাউন্ডারি স্টোনসের এই গল্পটি লিখেছেন বেঞ্জামিন শ। 

বারবার বলার পরও স্থানীয় সরকারের উদাসীনতায় হতাশ হয়ে হবসন নিজেই ইঁদুর ধরতে রাস্তায় নেমে পড়েন। শোনা যায়, খাঁচা ভর্তি ইঁদুর পাশের জর্জটাউনে ছেড়ে দিয়ে আসতেন হবসন। এটি রাজনীতিক এবং বড় ব্যবসায়ীদের বসতি। ডিসির উত্তর-পশ্চিম এলাকাটি এখনকার মতো তখনো শ্বেতাঙ্গ ও ধনীদের এলাকা ছিল। আর শহরের বাকি অংশে বসবাস করতেন আফ্রিকান-আমেরিকান শ্রমিক শ্রেণি।

হবসন এই বৈষম্য নিয়ে বরাবর সোচ্চার ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যেই বড়লোকদের এলাকায় ইঁদুর ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। শ তাঁর ব্লগে বলেন, ডিসিতে তখন কোনো সমস্যাই সমস্যা বলে বিবেচিত হতো না যতক্ষণ না সেটি সাদাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতো। তাই হবসন নিজ হাতে ইঁদুরের সমস্যাটিকে একই সঙ্গে সাদাদের সমস্যাতে পরিণত করার উদ্যোগ নেন। 

হবসন দাবি করেন, শহরেই কোথাও নাকি তাঁর ইঁদুরের খামার আছে। সেখানে তিনি ও তাঁর সহযোগী মুরগির খামারে হাজার হাজার ইঁদুর পুষছেন। সাদা ও বড়লোকদের এলাকার বাইরে ইঁদুর নিধনে উদ্যোগ না নিলে এই খামারের ইঁদুরগুলো ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। 

১৯৬০-এর দশকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ইঁদুর উৎপাত বেড়ে গিয়েছিলওই সময় হবসনের এই হুমকি সংবাদমাধ্যমের নজর কাড়ে। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে হবসন এরই মধ্যে জর্জটাউনের আশেপাশে শত শত ইঁদুর ছেড়ে দিয়েছেন। এরপরও যদি সরকার পদক্ষেপ না নেয় তাহলে হোয়াইট হাউসেও একই কাজ করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। 

কৌশলটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি আলোচনায় এসে গিয়েছিল। এটি অবশ্য হবসনের জন্য খুব কঠিন কাজ ছিল না। কারণ তিনি এ ধরনের গুজব ও হুমকি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে হবসব মাত্র কয়েক ডজন ইঁদুর ধরেছিলেন এবং সেগুলো পাশের পটোম্যাক নদীতে ছেড়ে দেন। ১৯৭৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এমনটিই লিখেছিলেন সাংবাদিক সিনথিয়া গোরলি। 

শ তাঁর সেই ব্লগে লেখেন, ঘটনা ছোট হলেও হাতে হাতে ফল পেয়েছিলেন হবসন। কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার জন্য ইঁদুর নিধন কর্মসূচি শুরু করে। এ নিয়ে অবশ্য পরে আর রাজনীতির জল ঘোলা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত