Ajker Patrika

ট্রাম্প-মাস্কের বিরুদ্ধে রাস্তায় ৫০ অঙ্গরাজ্যের মানুষ

  • যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপের বড় বড় শহরে বিক্ষোভ।
  • এক দিনে ১,৪০০টি বিক্ষোভ হয়েছে।
  • আইনপ্রণেতা, সিবিএ নেতারাও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ৩৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভাজনমূলক নীতির বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভে তাঁর ব্যঙ্গাত্মক প্রতিকৃতিসম্বলিত বেলুন বহন করে একদল বিক্ষোভকারী। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভাজনমূলক নীতির বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভে তাঁর ব্যঙ্গাত্মক প্রতিকৃতিসম্বলিত বেলুন বহন করে একদল বিক্ষোভকারী। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। ছবি: এএফপি

‘ট্রাম্পকে থামান, বিচার বিভাগ বাঁচান’, ‘ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছেন জনগণের ভোটে, তাঁকে বেছে নিয়েছেন পুতিন’, ‘ইলন মাস্ককে মঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হোক’। এগুলো প্ল্যাকার্ডের লেখা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্ট ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেই বিক্ষোভে এসব প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হচ্ছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি ১৮৪টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। নতুন এই শুল্কনীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশ পণ্য বিক্রি করতে হলে কমপক্ষে ১০ শতাংশ দিতে হবে। এই নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও চটেছে। এদিকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন ট্রাম্প। এতে চটেছেন দেশের মানুষ। ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে গত শনিবার রাস্তায় নেমে এসেছেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সব কটিতেই বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ড অফ!’। দেশে ১ হাজার ৪০০টি বিক্ষোভ হয়েছে। অঙ্গরাজ্যগুলোর রাজধানী, সরকারি ভবন, কংগ্রেস, সোশ্যাল সিকিউরিটি সদর দপ্তর, পার্ক, সিটি হল—দেশের হেন স্থান নেই, যেখানে শনিবার বিক্ষোভ হয়নি। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন, ট্রাম্প প্রশাসন জনগণের কথা শুনুক। এর মধ্য দিয়ে ধনকুবেরদের হাত থেকে ক্ষমতা জনগণের কাছে আসুক।

‘প্রো ডেমোক্রেসি মুভমেন্টের’ ব্যানারে এই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এই বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য অনলাইনে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছিল। এতে ৬ লাখ মানুষ যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, জার্মানির ফ্র‍াঙ্কফুর্ট, বার্লিনে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলার শোরুমের সামনে, ফ্রান্সের প্যারিসসহ বড় বড় সব শহরে শনিবার ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের নীতির কড়া সমালোচনা করে বিক্ষোভ হয়েছে। মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠন, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন এবং সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসব বিক্ষোভে অংশ নেন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ থেকে আয়োজকেরা তিনটি দাবি উত্থাপন করেছেন। এগুলোর মধ্য রয়েছে ধনকুবেরদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামো কুক্ষিগত হয়েছে; এই পরিস্থিতির ইতি টানতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে; এই অবস্থা চলতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা খাত, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য কর্মজীবী মানুষের জন্য ফেডারেল সরকারের যে তহবিল রয়েছে, তা কমানো হয়েছে। এই তহবিল কমানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী, ট্রান্সজেন্ডার ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর চলমান হামলা বন্ধ করতে হবে।

আইনপ্রণেতারাও বিক্ষোভে

শনিবারের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারাও অংশ নিয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসির একটি বিক্ষোভে যোগ দেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ডেমোক্রেটিক পার্টির জেমি রাসকিন। তিনি বলেন, ‘যিনি অর্থনৈতিকভাবে হারবার্ট হুভার ও রাজনৈতিকভাবে মুসোলিনির মতো করে চিন্তা করেন, সেই প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাতা হতে পারেন না।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে কথা বলেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের অন্যতম বড় সংগঠন ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফেডারেল এমপ্লয়িজের প্রেসিডেন্ট

র‍্যান্ডি এরউইন বলেন, ‘দেশের সরকারি সেবা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটাই সত্য।’ তারা বলছে, তারা সরকারি অফিসগুলো আরও বেশি কর্মদক্ষ করছে। কিন্তু এটা হাস্যকার। এটা সত্যি ভয়ংকর। কারণ, তারা যা বলছে, তার উল্টোটা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাদ্দাফির পুত্রকে মুক্ত করতে লেবাননে গেল লিবিয়ার প্রতিনিধি দল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্ত করতে লেবাননের বৈরুতে পৌঁছেছে লিবিয়ার একটি প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি হানিবালের মুক্তির জন্য ১১ মিলিয়ন ডলারের জামিন দাবি করেছিল লেবাননের আদালত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা।

লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পুত্র হানিবাল ২০১৫ সাল থেকে কোনো বিচার ছাড়াই লেবাননের কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লেবাননের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মুসা আল সদরের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য লুকিয়ে রেখেছেন।

মুসা আল সদর ১৯৭৮ সালে গাদ্দাফির আমন্ত্রণে লিবিয়ায় সফরে যান এবং সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। সদর যখন নিখোঁজ হন, হানিবাল তখন মাত্র দুই বছরের শিশু। তাই এই বিষয়ে কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, গত মাসে (অক্টোবর) লেবাননের আদালত হানিবালকে ১১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে হানিবালের আইনজীবীরা তখন দাবি করেন, বিপুল এই অর্থ পরিশোধে তিনি সক্ষম নন। এ ছাড়া আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হানিবালকে মুক্তি দেওয়া হলেও লেবানন ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অতীতে তিনি বন্দী অবস্থায় অনশন ধর্মঘটও পালন করেছিলেন।

এদিকে হানিবালের দেশ লিবিয়ান এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হানিবাল হয়তো লেবানন ও লিবিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে ছাড়পত্র পেতে পারেন।

লিবিয়ার প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইব্রাহিম দবাইবাহ। তিনি ত্রিপোলির জাতীয় একতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবাইবাহর ভাগনে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিবারের সঙ্গে দবাইবাহ পরিবারের একসময় শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।

প্রতিনিধি দলটি লেবাননের প্রেসিডেন্ট সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য ও ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের যোগাযোগ ও রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়ালিদ এল লাফি সরাসরি হানিবালের মামলার উল্লেখ না করে জানান, তাঁরা দুই দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বিচারিক সম্পর্ক আবারও চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং আশা করি এই সফর শিগগিরই দৃশ্যমান ফলাফল দেবে।’

তিনি জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে লেবাননের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গেছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সহ দেশটির সংসদের স্পিকার নাবিহ বের্রি এই আলোচনার প্রতি ইতিবাচক মনোভব দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নাবিহ বের্রি হলেন ‘আমাল আন্দোলন’ এর নেতা। বহু বছর আগে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ মুসা আল সদরই এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সদরের নিখোঁজ হওয়া এখনো লেবাননে গভীর অনুভূতি জাগায়। সদরের সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী, শেখ মুহাম্মদ ইয়াকুব ও সাংবাদিক আব্বাস বাদরেদ্দিনও নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাই হানিবালের মুক্তির বিষয়ে সব ধরনের সমাধান ও চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে ইয়াকুবের পরিবার।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়া ত্যাগ করেছিলেন হানিবাল। পরে তিনি তাঁর লেবানিজ স্ত্রী আলিন স্কাফ ও সন্তানদের নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি সশস্ত্র গ্রুপ তাঁকে অপহরণ করে লেবানন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকেই তিনি লেবাননের কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মামদানিকে ভোট না দিতে নিউইয়র্কের ইহুদিদের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ইহুদিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন মামদানিকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ট্রাম্পের মতে, মামদানিকে ভোট দেওয়া মানে ‘বোকামি’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি একজন ইহুদিবিদ্বেষী। এটা জেনেও কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি তাকে ভোট দেয়, তাহলে সে স্বঘোষিত ও প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী। সেই সঙ্গে সে একজন বোকা মানুষ!!!’

এর আগে গত রোববার (২ নভেস্বর) মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উট ও সোনা বিক্রি করে সাম্রাজ্য গড়া দাগোলোর নিয়ন্ত্রণে এখন অর্ধেক সুদান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মোহাম্মদ হামদান দাগোলো। ছবি: বিবিসি
মোহাম্মদ হামদান দাগোলো। ছবি: বিবিসি

সুদানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক ভয়ংকর নাম—মোহাম্মদ হামদান দাগোলো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এখন দেশের অর্ধেক ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্প্রতি তারা সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহর দখল করে নিয়েছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ১৮ মাস ধরে আরএসএফ-এর অবরোধের কারণে ওই শহরটি এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পড়েছে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দাগোলো কখনোই সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষিত হননি। তাঁর পরিবার ছিল রিজেইগাত সম্প্রদায়ের মহারিয়া শাখার উট ব্যবসায়ী। ১৯৭৪ বা ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া দাগোলো তাই কিশোর বয়সেই স্কুল ছেড়ে উট বিক্রি করে জীবিকা শুরু করেন। পরে তিনি লিবিয়া ও মিসরে উটের ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেন।

সেই সময়টিতে দারফুর ছিল একটি আইনহীন বিশৃঙ্খল অঞ্চল। আরব মিলিশিয়া জাঞ্জাউইদ গোষ্ঠী এখানকার ফুর জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে প্রায় সময়ই হামলা চালাত।

২০০৩ সালে এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দারফুরে বিদ্রোহ শুরু হলে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির হামলাকারী জাঞ্জাউইদ বাহিনীকেই রাষ্ট্রীয় সমর্থন দেন। এর ফলে গণহত্যা, ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তারা ফুর জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন করে। দাগোলোর নেতৃত্বাধীন একটি ইউনিটও ২০০৪ সালে আদওয়া গ্রামে ১২৬ জনকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এই সংঘাতকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দেয়, যদিও দাগোলো ছিলেন তখন তুলনামূলক নিম্নপদস্থ কমান্ডার।

তবে কৌশলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করেন দাগোলো। প্রথমে তিনি সেনাদের বকেয়া বেতন ও ভাইয়ের জন্য পদ দাবি করে বিদ্রোহ করেন। পরে প্রেসিডেন্ট বশির তাঁকে পুরস্কৃত করে শান্ত করেন।

এ অবস্থায় দারফুরের জেবেল আমির সোনার খনি দখল করে পারিবারিক কোম্পানি ‘আল-গুনাইদ’ গড়ে তোলেন দাগোলো। অল্প সময়েই এটি সুদানের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ রপ্তানিকারক হয়ে ওঠে।

২০১৩ সালে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) গঠন করেন তিনি, যা সরাসরি আল-বশিরের অধীনে কাজ করত। পরে এই বাহিনী ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে ভাড়াটে সৈন্য পাঠায়। এর মাধ্যমে দাগোলো আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং স্বর্ণ ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন।

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট বশিরবিরোধী আন্দোলনের সময় সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে মিলে বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করেন দাগোলো। প্রথমে তাঁকে সংস্কারের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও অচিরেই তিনি তাঁর নির্মম মুখোশ খুলে ফেলেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে প্রতিবাদীদের ওপর গুলি চালায় দাগোলোর বাহিনী আরএসএফ। এতে শত শত মানুষ নিহত হয় এবং নারীদের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগও ওঠে।

২০২১ সালে বুরহান ও দাগোলো একসঙ্গে ক্ষমতা দখল করলেও শিগগিরই তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসতে আরএসএফ অস্বীকৃতি জানায়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়, যা এখনো চলছে। এই সংঘাতে রাজধানী খার্তুমসহ দারফুরে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে শুধু দারফুরেই নিহত হয়েছে ১৫ হাজার সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র একে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।

বর্তমানে আরএসএফ উন্নত ড্রোনসহ আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং পশ্চিম সুদানের প্রায় সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। দাগোলো এখন ‘শান্তি ও ঐক্যের সরকার’ নামে এক সমান্তরাল সরকার গঠন করেছেন এবং নিজেকে তার প্রধান ঘোষণা করেছেন।

সুদানের অনেকে মনে করেন, দাগোলো হয়তো একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছেন, অথবা পুরো দেশ শাসনের স্বপ্ন দেখছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, তিনি এমন এক রাজনৈতিক ছায়াশক্তি হতে চান—যার হাতে থাকবে ব্যবসা, ভাড়াটে বাহিনী ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ—যাতে সরাসরি ক্ষমতায় না থেকেও তিনি পুরো দেশ পরিচালনা করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিশুসুলভ চেহারার অভিযোগে বিশ্বজুড়ে ‘সেক্স ডল’ বিক্রি বন্ধ করল শিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সপ্তাহে ফ্রান্সে শিনের পণ্য বিক্রি বন্ধে বিক্ষোভ হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত সপ্তাহে ফ্রান্সে শিনের পণ্য বিক্রি বন্ধে বিক্ষোভ হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স কোম্পানি শিন (Shein) তাদের প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের ‘সেক্স ডল’ বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি তাদের ওয়েবসাইটে ‘শিশুসুলভ চেহারার’ পণ্য প্রদর্শনের অভিযোগ ওঠার পরই কোম্পানিটি এ সিদ্ধান্ত নিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে ফ্রান্সের অলাভজনক সংস্থা কনজ্যুমার ওয়াচডগ প্রথম এই সেক্স ডলগুলো নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। কনজ্যুমার ওয়াচডগ জানায়, এসব পণ্যের বিবরণী ও আকৃতি অনেকটা ‘শিশু পর্নোগ্রাফির’ মতো।

এরপর গতকাল সোমবার কোম্পানিটি জানায়, তারা ‘অবৈধ বা অসংগতিপূর্ণ সেক্স ডল বিক্রির সঙ্গে যুক্ত সব বিক্রেতার অ্যাকাউন্ট’ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে। শিন আরও জানায়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা সাময়িকভাবে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক পণ্যের বিভাগটিও সরিয়ে নিয়েছে।

শিন নিশ্চিত করেছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘সেক্স ডল’ সম্পর্কিত প্রত্যেকটি তালিকা ও ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, তারা এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে বিক্রেতাদের ওপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে।

শিনের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান ডোনাল্ড ট্যাং বলেন, ‘আমরা সব সময় শিশুদের ওপর যেকোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমাদের যেসব পণ্য নিয়ে বিতর্ক, সেগুলো তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের তালিকাভুক্ত পণ্য ছিল। আমরা এই উৎসগুলো খুঁজে বের করছি এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিনের পাশাপাশি অনলাইন আলি এক্সপ্রেস, তেমু ও উইশের বিরুদ্ধেও তারা শিশুদের মতো দেখতে সেক্স ডল বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছে। প্রসিকিউটর অফিস বলেছে, তারা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরাসি এক সংস্থার (OFMIN) কাছে এ বিষয়ে তদন্তের ভার দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত