Ajker Patrika

জোহরান মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩৪
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলের সম্ভাবের কথা তুলেছে। নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে দণ্ডিত বিদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ইঙ্গিত দেন যে, মামদানির নাগরিকত্বের বিষয়ে তদন্ত হতে পারে। এর আগে, টেনেসির ডানপন্থী রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস দাবি করেন, মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করা উচিত। কারণ, তিনি নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি’ নিজের সমর্থনের বিষয়টি প্রকাশ করেননি।

ডেমোক্র্যাট পার্টি প্রার্থী ৩৩ বছর বয়সী মামদানি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিক হন। ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে স্পষ্টভাবে কথা বলায় তিনি ব্যাপক আলোচনায় আসেন।

গত মঙ্গলবার মামদানির অভিবাসন-সংক্রান্ত অবস্থান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়। মামদানি বলেন, তিনি মুখোশ পরা আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এজেন্টদের হাতে প্রতিবেশীদের বহিষ্কার ঠেকাবেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে তো তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’

জবাবে মামদানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাকে গ্রেপ্তার, নাগরিকত্ব বাতিল, ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো এবং দেশ থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন। শুধু এ কারণে যে, আমি আইস এজেন্টদের আমাদের শহরে ভয় সৃষ্টি করতে দেব না।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই বক্তব্য শুধু আমাদের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত নয়, বরং নিউইয়র্কের প্রত্যেক মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা। বার্তা পরিষ্কার—আপনি যদি মুখ খোলেন, তারা আপনার পেছনে আসবে। আমরা এই ভয় দেখানো মেনে নেব না।’

মামদানির অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন নিউইয়র্কের মেয়র প্রাইমারিতে জয়লাভের পর থেকে তাঁর মুসলিম পরিচিতি ঘিরে একের পর এক ইসলামবিদ্বেষী আক্রমণ চলছে। ওই নির্বাচনে সাবেক নিউইয়র্ক গভর্নর এবং ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বের পছন্দের প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

এই বিতর্ক সামনে এসেছে এমন সময়, যখন ট্রাম্প প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে—নির্দিষ্ট অপরাধে দণ্ডিত বিদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। বিচার মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে বলা হয়েছে, যারা ‘অবৈধভাবে নাগরিকত্ব পেয়েছে’ বা ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছে’, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মার্কিন আইনপ্রণেতা অ্যান্ডি ওগলস মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে চিঠি দিয়ে মামদানির বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছেন। তিনি দাবি করেন, মামদানি ‘সন্ত্রাসে সমর্থন’ গোপন করে নাগরিকত্ব পেতে পারেন। প্রমাণ হিসেবে ওগলস উল্লেখ করেন মামদানির লেখা একটি র‍্যাপ গানের কথা। গানটির নাম ‘My Love to the Holy Land Five. ’

গানটিতে মামদানি হামাসকে সমর্থনের দায়ে দণ্ডিত একটি ফাউন্ডেশনের সদস্যদের ‘আমার ভাই’ বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া মামদানির ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগান প্রত্যাখ্যান না করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন ওগলস। এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে ওগলস মামদানিকে ‘জোহরান লিটল মুহাম্মাদ’ নামে অভিহিত করে তাঁকে ‘মামদানি একজন ইহুদিবিদ্বেষী, সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট, যে নিউইয়র্ক শহরকে ধ্বংস করবে। তাঁকে বহিষ্কার করতে হবে’—এমন ভাষায় আক্রমণ করেন।

এ বিষয়ে লেভিট বলেন, ‘আমি এসব অভিযোগ দেখিনি। তবে যদি সত্যি হয়, তাহলে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।’ বিচার মন্ত্রণালয় ওগলসের চিঠি পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে, তবে বিস্তারিত মন্তব্য করেনি।

কানেকটিকাটের ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি ‘জাতিবিদ্বেষী বাজে কথা।’ তিনি লিখেছেন, ‘বিলিয়নিয়ার আর লোভী করপোরেশন বাঁচাতে ট্রাম্প কিছুতেই থামবে না—এমনকি এই জাতিবিদ্বেষী বাজে কথাতেও।’ তিনি বলেন, ‘জোহরান জিতেছেন, কারণ তিনি শ্রমজীবী মানুষের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন করেছেন। এটাই মার-আ-লাগোর ধনিক শ্রেণির জন্য হুমকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত