Ajker Patrika

পাকিস্তানে প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ করছে চীন, দাবি ভারতের 

আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৫: ৩২
পাকিস্তানে প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ করছে চীন, দাবি ভারতের 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণে চীন সাহায্য করছে বলে দাবি করেছে ভারত। চীন পাকিস্তানকে মানবহীন এরিয়াল ও কমব্যাট এরিয়াল যান সরবরাহ, যোগাযোগ টাওয়ার স্থাপন এবং লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ভূগর্ভস্থ কেব্‌ল স্থাপন করছে। ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ট্রিবিউন’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান সর্বকালের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এটি তারই অংশ। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি) সড়ক এবং হাইডেল প্রকল্প সুরক্ষার অজুহাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে চীনা ছিটমহলগুলোতে এসব টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। 

কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্প্রতি উন্নত এসএইচ-১৫ অস্ত্র লাইন অব কন্ট্রোল বরাবর কিছু জায়গায় দেখা গেছে। যা গত বছর পাকিস্তান দিবসে প্রদর্শন করা হয়েছিল। ১৫৫ মিলিমিটারের এই অস্ত্র পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এটি ‘শুট অ্যান্ড স্কুট’ আর্টিলারি অস্ত্র হিসেবেও পরিচিত। পাকিস্তান এই অস্ত্র ২৩৬টি কেনার জন্য চীনা সংস্থা নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ করপোরেশন লিমিটেডের (নরিনকো) সঙ্গে চুক্তিও করেছিল। লন্ডনভিত্তিক জেনস ডিফেন্স ম্যাগাজিন অনুসারে, পাকিস্তান এর প্রথম চালান পায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। 

যদিও ২০১৪ সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) একটি পোস্ট যাচাই করে সন্দেহজনক কিছু ভারত পায়নি। তবে এ সময় লাইন অব কন্ট্রোল বরাবর চীনা সৈন্য ও ইঞ্জিনিয়াররা ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণসহ অবকাঠামো স্থাপন করছে এমন ইঙ্গিত পেয়েছিল। চীনা সৈন্যরা দীর্ঘদিন এই বিষয়ে বাহ্যিক গোপনীয়তা বজায় রাখলেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরে বেইজিংয়ের ৪৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাণিজ্য থাকায় এখানে চীন বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে। এর মাধ্যমে করাচির গোয়াদর বন্দর কারাকোরাম হাইওয়ের মাধ্যমে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। 

ভারতীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছে, চীন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের লিপা উপত্যকায় কিছু পরিখা খনন করছে। যার মাধ্যমে চীন সারা বছর কারাকোরাম হাইওয়েতে পৌঁছানোর বিকল্প পথ পাবে। 

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, একটি চীনা টেলিকম কোম্পানি ২০০৭ সালে পাকিস্তানের টেলিকম কোম্পানির দখল নেয় এবং চীন-পাকিস্তান মোবাইল নেটওয়ার্ক (সিএমপিক) গঠন করে। যার মালিক চীন মোবাইল কমিউনিকেশন করপোরেশন। গত বছরের আগস্টে পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ) পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য সিএমপাক (জং) মোবাইল লাইসেন্স নবায়ন করে। এ সময় চীনকে এই অঞ্চলে নেক্সট জেনারেশন মোবাইল পরিষেবা (এনজিএমএস) সম্প্রসারণের অনুমতি দেয়। 

ভারত অতীতে পাকিস্তানের গিলগিত-বেলুচিস্তান অঞ্চলে চীনাদের উপস্থিতিতে দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানিয়েছে। তবে ভারত ও পাকিস্তান ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি পালন করছে। 

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন স্টাডিজের অধ্যাপক শ্রীকান্ত কোন্দাপল্লি মনে করেন, পাকিস্তানে অস্ত্র স্থানান্তর এই অঞ্চলে চীনের স্বার্থ সুরক্ষিত করার একটি নকশার অংশ। আঞ্চলিক আধিপত্য ও ভারতকে কোণঠাসা করতে বেইজিং পাকিস্তানকে অস্ত্র দেওয়া বাড়িয়েছে। 

চীন বিষয়ে ভারতীয় নীতিনির্ধারণের শীর্ষ এই ব্যক্তি আরও বলেন, চীন ২০১৪ সালে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) শুরু করে। যা মূলত ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। এ ছাড়া কারাকোরাম হাইওয়ে সম্প্রসারণের পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্প সুরক্ষার জন্য অন্তত ৩৬ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী পাঠিয়েছে। 

কোন্ডাপালি বলেছেন, চীন পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে সচ্ছল গ্রাম তৈরি করছে। চীন এই অঞ্চলে ১০টি সিএইচ-৪এ ড্রোন সরবরাহ করছে। এগুলো স্থলভাগে ও সমুদ্রে ৫ হাজার মিটার উচ্চতা থেকে আক্রমণ করতে পারে। এ ছাড়া ৪৮টি উইং লুং-২ ড্রোনও পাঠিয়েছে, যা ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানে নজরদারি এবং আকাশসীমা রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত