Ajker Patrika

আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কেরা এখন কোথায় কেমন আছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আল-জাজিরা
ছবি: আল-জাজিরা

১৫ বছর আগে আজকের এই দিনটিতেই (২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর) তিউনিসিয়ার তরুণ এক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজি পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে আত্মাহুতি দেন। তাঁর এই মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত আরব বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিস্ফোরণ ঘটায়। বেকারত্ব, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের ক্ষোভ রাস্তায় নেমে আসে। ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত এই আন্দোলনে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় একের পর এক পতন ঘটে দীর্ঘদিনের শাসকদের। দেড় দশক পর ক্ষমতাচ্যুত সেই নেতারা এখন কোথায়, কেমন আছেন, জেনে নেওয়া যাক—

জিনে আল আবিদিন বেন আলি (তিউনিসিয়া)

একসময় তিউনিসিয়ার নিরাপত্তা প্রধান ছিলেন বেন আলি। পরে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং একপর্যায়ে নিজেকে আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে একনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাঁর ২৩ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও দুর্নীতি, বৈষম্য ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ চরমে পৌঁছেছিল।

প্রকাশ্য দিবালোকে শরীরে পেট্রল ঢেলে বুয়াজিজির আত্মহত্যার পর টানা বিক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে গেলে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি তিউনিসিয়া থেকে সৌদি আরবে পালিয়ে যান বেন আলি। পরে তিউনিসিয়ার আদালত তাঁকে তাঁর অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে সেই সাজা কখনো কার্যকর হয়নি। ২০১৯ সালে সৌদি আরবে নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়।

হোসনি মুবারক (মিসর)

১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর মিসরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন দেশটির সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান হোসনি মুবারক। জরুরি আইন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মিসরে গণ-আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের ১৮ দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হন মুবারক। বিক্ষোভকারীদের হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে তাঁকে প্রথমে যাবজ্জীবন দেওয়া হলেও পরে সেই রায় বাতিল হয়। দুর্নীতির মামলায় কিছু সময় আটক থাকার পর ২০১৭ সালে তিনি মুক্তি পান। ২০২০ সালে রাজধানী কায়রোতে তাঁর মৃত্যু হয়।

আলি আবদুল্লাহ সালেহ (ইয়েমেন)

১৯৭৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর ইয়েমেন শাসন করেছেন আলি আবদুল্লাহ সালেহ। দেশটির জটিল উপজাতীয় ও সামরিক রাজনীতির দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আরব বসন্তের ঢেউ লাগে ইয়েমেনেও। ২০১১ সালে বিক্ষোভের পর ক্ষমতা ছাড়লেও তিনি হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোট বাঁধেন এবং ২০১৪ সালে সানা দখলে সহায়তা করেন। পরে সেই জোট ভেঙে গেলে ২০১৭ সালে হুতি বাহিনীর হাতেই তিনি নিহত হন।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া)

১৯৬৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ৪২ বছর লিবিয়া শাসন করেন গাদ্দাফি। তেলের সম্পদ দিয়ে তিনি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। ২০১১ সালে লিবিয়ার বেনগাজিতে বিক্ষোভ শুরু হলে তা দ্রুত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ন্যাটোর বিমান হামলা ও বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রায় সেই বছরের আগস্টেই রাজধানী ত্রিপোলির পতন ঘটে। অক্টোবরে নিজ শহর সির্তে বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ে গাদ্দাফি নিহত হন।

বাশার আল আসাদ (সিরিয়া)

২০০০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসা বাশার আল আসাদ তাঁর পিতা হাফেজ আল আসাদের উত্তরসূরি। ২০১১ সালে দেশটির কিশোরদের লেখা সরকারবিরোধী গ্রাফিতি থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরে তা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের আকস্মিক অভিযানে দামেস্কের পতন ঘটে। আসাদ পরিবার রাশিয়ায় পালিয়ে যায় এবং সেখানে এখন নির্বাসিত জীবন-যাপন করছে।

আরব বসন্ত শাসকদের পতন ঘটালেও বহু দেশে গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তির স্বপ্ন এখনো অধরাই গেছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেলসি ক্লাব বিক্রির অর্থ ইউক্রেনকে দিতে হবে—রুশ ধনকুবেরকে ব্রিটিশ আলটিমেটাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। ছবি: সংগৃহীত
রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড়ের দাবি জানিয়ে রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন—আব্রামোভিচ যদি এখনই অর্থ পরিশোধ না করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার জন্য সরকার প্রস্তুত।

বুধবার রাতে (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হলে ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিকানা বিক্রি করতে বাধ্য হন আব্রামোভিচ। সেই বিক্রি থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২.৫ বিলিয়ন পাউন্ড (৩.৩৮ বিলিয়ন ডলার) তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের ভুক্তভোগীদের সহায়তায় ব্যয় করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেই অর্থ এখনো একটি ব্রিটিশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা অবস্থায় রয়েছে এবং ব্যবহার নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার চায় এই অর্থ শুধু ইউক্রেনের মানবিক সহায়তায় ব্যয় হোক। অন্যদিকে আব্রামোভিচের অবস্থান হলো—এই অর্থ যুদ্ধের সব ভুক্তভোগীর জন্য ব্যবহার করা উচিত, যার মধ্যে রাশিয়ার নাগরিকরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এই মতবিরোধের কারণেই অর্থ ছাড় বিলম্বিত হচ্ছে।

বুধবার পার্লামেন্টে বক্তব্যের সময় বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, ‘আমার বার্তা পরিষ্কার—সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।’ তিনি জানান, সরকার ইতিমধ্যে একটি লাইসেন্স ইস্যু করেছে, যার মাধ্যমে চেলসি বিক্রির অর্থ স্থানান্তরের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, আব্রামোভিচ যদি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করেন, তাহলে সরকার আদালতের শরণাপন্ন হবে, যাতে প্রতিটি পয়সা ইউক্রেনে পুতিনের অবৈধ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপারও বিবিসিকে বলেছেন—আব্রামোভিচের উচিত অবিলম্বে তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। তিনি জানান, আইনি লড়াই দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করতে পারে, তাই সরকার চাইছে বিষয়টি আদালতের বাইরে দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। তবে প্রয়োজনে মামলা করা হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী অর্থটি কেবল ইউক্রেনের মানবিক কাজে ব্যয় করা যাবে এবং কোনোভাবেই আব্রামোভিচ বা অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ব্যক্তি এতে লাভবান হতে পারবেন না।

রুশ তেল ও গ্যাস খাত থেকে বিপুল সম্পদের মালিক আব্রামোভিচের বিরুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এই অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে আসছেন। জানা গেছে, যুক্তরাজ্য সরকার আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাঁকে প্রায় ৯০ দিনের সময় দিয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ইউক্রেনের বাজেট ও প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে জব্দ করা রুশ সম্পদের অর্থ ব্যবহারের প্রস্তাব পর্যালোচনা করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাইওয়ানে বিপুল অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন, নিজের বিপদ ডেকে আনছে যুক্তরাষ্ট্র—হুমকি চীনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজ দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবরোধ করেন কারখানার শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবরোধ করেন কারখানার শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাইওয়ানে ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপের মুখে গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন এই ঘোষণা দেয়, যা তাইওয়ানের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের একক বৃহত্তম অস্ত্র বিক্রির চুক্তি।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রস্তাবিত অস্ত্র বিক্রির তালিকায় মোট আট ধরনের সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—৮২টি হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা হিমার্স; এটি ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ৪২০টি আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম, যা মাঝারি পাল্লার মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ‘অ্যালটিয়াস’ লোটারিং মিউনিশন বা কামিকাজে ড্রোন। অন্যান্য সরঞ্জামের মধ্যে আছে—৬০টি সেলফ-প্রপেলড হাউইজার সিস্টেম, জ্যাভলিন ও টাউ অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল ও হেলিকপ্টারের খুচরা যন্ত্রাংশ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাইওয়ানের আত্মরক্ষার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলা ও অসম যুদ্ধকৌশলের সুবিধা কাজে লাগাতে সহায়তা করছে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ভিত্তি।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, অস্ত্র প্যাকেজটি মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপন করা হয়েছে। এই পর্যায়ে কংগ্রেস চাইলে চুক্তিটি বাতিল বা সংশোধন করতে পারে। তবে তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তেমন দ্বিমত নেই, বরং সমর্থন রয়েছে।

এই চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাদা এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানায়, অস্ত্র বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষা করে। পাশাপাশি এটি তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকীকরণ ও ‘প্রতিরক্ষা সক্ষমতা’ বাড়াতে সহায়তা করবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদে তাইওয়ানও তার সামরিক বাহিনীকে ‘অসম যুদ্ধকৌশল’-এর উপযোগী করে গড়ে তুলছে। এর মধ্যে রয়েছে—ছোট, চলনশীল ও তুলনামূলকভাবে কম খরচের অস্ত্র ব্যবহার, যেমন ড্রোন। এগুলো লক্ষ্যভিত্তিক আঘাত হানতে সক্ষম।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র কারেন কুও এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমেই আমরা শান্তি রক্ষা করব। এই অস্ত্র সহায়তা আমাদের অসম যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা ও আত্মরক্ষার সংকল্পকে আরও দৃঢ় করবে।’

গত ২৬ নভেম্বর চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকির মুখে নিজেদের সুরক্ষায় অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করে তাইওয়ান। প্রেসিডেন্ট লাই চিংতে এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘ইতিহাসে প্রমাণ আছে, আগ্রাসনের মুখে আপস করার চেষ্টা কেবল ‘‘দাসত্ব’’ নিয়ে আসে। তাই জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপসের সুযোগ নেই। সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূল মূল্যবোধই আমাদের জাতির ভিত্তি।’

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ‘তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে’। তারা এমন চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন এক বিবৃতিতে বলেন, অস্ত্র দিয়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে। তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনকে ঠেকানোর চেষ্টা কখনোই সফল হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র–তাইওয়ান বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি রুপার্ট হ্যামন্ড চেম্বার্স বলেন, হিমার্সের মতো অস্ত্র ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এটি তাইওয়ানে চীনের সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই ঘোষণা আসে গত সপ্তাহে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিন চিয়া-লুংয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তিনি ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি। তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানের সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রই তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। এ ছাড়া ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে আত্মরক্ষার সরঞ্জাম দিতে আইনত বাধ্য। তবে এই অস্ত্র বিক্রি দীর্ঘদিন ধরেই চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে বড় বিতর্কের বিষয়।

চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাত প্রতিরোধ এবং ওই অঞ্চলে ‘সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখতে চায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাইওয়ানের কৌশলগত গুরুত্বও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, তাইওয়ানের অবস্থান উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে দুটি ভিন্ন সামরিক অঞ্চলে ভাগ করে দেয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই রেকর্ড পরিমাণ অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিল—দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব এবং তাইওয়ানের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা আপসহীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবসরের আগে ফরমায়েশি রায়, বিচারকদের অসততায় উদ্বিগ্ন ভারতের প্রধান বিচারপতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, অবসরের ঠিক আগে বিচারকদের একটি অংশ প্রভাবিত হয়ে রায় দিচ্ছেন, যা উদ্বেগজনক।

আজ বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের এক জেলা বিচারকের করা আবেদন শুনছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই বিচারক অবসরের মাত্র ১০ দিন আগে তাঁর বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচিও ছিলেন। তাঁরা বিচারকদের ফরমায়েশি রায় দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, কিছু বিচারক অবসরের আগে ‘ছক্কা হাঁকানোর’ চেষ্টা করছেন।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগ অনুযায়ী, বিচারকের দেওয়া দুটি বিচারিক আদেশের সঙ্গে ওই জেলা বিচারকের বরখাস্তের বিষয়টি যুক্ত ছিল।

শুনানিকালে বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘আবেদনকারী অবসরের ঠিক আগে ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেছিলেন। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। আমি এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না।’

ওই জেলা বিচারকের মূলত গত ৩০ নভেম্বর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুটি বিচারিক আদেশের জেরে তাঁকে ১৯ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। পরে ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশ সরকারকে তাঁর অবসর এক বছর পিছিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। কারণ, রাজ্য সরকার কর্মীদের অবসরের বয়স ৬২ বছরে উন্নীত করে।

এ পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘যখন তিনি ওই দুটি আদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে তাঁর অবসর বয়স এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অবসরের আগে বিচারকদের এভাবে একের পর এক আদেশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।’

এ সময় বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে—কেন ওই জেলা বিচারক তাঁর বরখাস্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাননি।

বিচারকের পক্ষে আইনজীবী জানান, যেহেতু এটি ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল, তাই ন্যায়বিচারের আশায় তিনি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আসাই সমীচীন মনে করেছিলেন।

বিচারকের পক্ষে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিপিন সাংঘি আদালতকে জানান, ওই কর্মকর্তার কর্মজীবন ছিল ‘চমৎকার’ এবং তাঁর বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনগুলোতে তিনি খুব ভালো রেটিং পেয়েছেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন—যেসব বিচারিক আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় এবং উচ্চতর আদালত চাইলে সংশোধন করতে পারেন, সেসব আদেশের জন্য কীভাবে একজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা যায়।

জবাবে বেঞ্চ জানান, ভুল আদেশ দেওয়ার কারণে কোনো বিচারিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না কিংবা তাঁকে বরখাস্তও করা যায় না। কিন্তু যদি আদেশগুলো স্পষ্টভাবে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়—তাহলে বিষয়টি ভিন্ন।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, অতীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছেন। এসব বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট আবেদনটি শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আবেদনকারীকে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুসলিম স্ত্রীকে নিয়ে বিবাদ, ভারতে বাবা-মাকে মেরে খণ্ডিত দেহ নদীতে ফেলল ছেলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৪
বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে প্রকৌশলী আম্বেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি
বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে প্রকৌশলী আম্বেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি

মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন ছেলে। বাবা-মা মেনে নিলেন না এ বিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্যের পর ছেলে ও তাঁর স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন বিবাহবিচ্ছেদের। কিন্তু খোরপোশ দিতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা না থাকায় বাবার কাছে টাকা চেয়েও পেলেন না। আর এই ক্ষোভের জেরে বাবা-মাকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে নদীতে ফেলে দিলেন ছেলে। এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের জৌনপুরে।

নিখোঁজ এক ষাটোর্ধ্ব দম্পতির সন্ধানে নেমে এই হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারে পুলিশ। বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে আম্বেশকে আটক করেছে পুলিশ। পেশায় প্রকৌশলী আম্বেশ তাঁর বাবা শ্যাম বাহাদুর (৬২) ও মা ববিতাকে (৬০) হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, আম্বেশের মুসলিম স্ত্রীকে পরিবার মেনে নিতে অস্বীকার করায় দীর্ঘদিন ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদ চলছিল। একপর্যায়ে আম্বেশ ও তাঁর স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় অ্যালিমনি দেওয়ার জন্য আম্বেশের অর্থের প্রয়োজন হয়। তিনি তাঁর বাবার কাছে টাকা চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবা তা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৩ ডিসেম্বর আম্বেশের বোন বন্দনা জৌনপুরের জাফরবাদ থানায় তাঁর বাবা-মা ও ভাই নিখোঁজ হওয়ার একটি ডায়েরি করেন।

বন্দনা জানান, ৮ ডিসেম্বর আম্বেশ তাঁকে ফোন করে বলেন, বাবা-মা ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। তিনি তাঁদের খুঁজতে বের হচ্ছেন। এরপর আম্বেশের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।

এক সপ্তাহ পর আম্বেশকে যখন পুলিশ আটক করে, তখন তিনি ভেঙে পড়েন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী শ্যাম বাহাদুরের একমাত্র ছেলে আম্বেশ প্রায় পাঁচ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর বাবা-মা এ বিয়ে মেনে নেননি এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। তাঁদের দুটি সন্তান থাকলেও শ্যাম বাহাদুর বারবার আম্বেশকে চাপ দিচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। শেষপর্যন্ত আম্বেশ স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে রাজি হন এবং স্ত্রী খোরপোশ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।

৮ ডিসেম্বর সেই টাকার জন্যই আম্বেশ তাঁর বাবার সাহায্য চান। বাবা তা দিতে অস্বীকার করলে মা ববিতার সঙ্গে আম্বেশের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আম্বেশ রান্নাঘরে গিয়ে শিলপাটার শিল দিয়ে তাঁর মায়ের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় তাঁর বাবা প্রতিবেশীদের ডাকতে গেলে তাঁর মাথায়ও আঘাত করেন আম্বেশ। ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য আম্বেশ মরদেহগুলো সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন। বড় কোনো ব্যাগ না পেয়ে গ্যারেজে থাকা ছোট বস্তা আনেন। করাত দিয়ে বাবা-মায়ের দেহ ছয় টুকরা করে বস্তায় ভরে গাড়ির ডিকিতে তুলে নেন। পরে ভোরের দিকে নদীতে ফেলে দেন।

বোন বন্দনাকে ফোন করার পর ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন আম্বেশ। এ সময় তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। ১৪ ডিসেম্বর জৌনপুরে ফিরে আসেন তিনি। বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। পরে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে তাঁরাই পুলিশে খবর দেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আম্বেশ পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে একপর্যায়ে তিনি ভেঙে পড়েন এবং বাবা–মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

স্বীকারোক্তির পর পুলিশ দেহ উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এ সময় শ্যাম বাহাদুরের দেহের একটি অংশ উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত করাত ও শিলপাটাও উদ্ধার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আয়ুষ শ্রীবাস্তব জানান, নদীতে তল্লাশির জন্য ডুবুরি দল নামানো হয়েছে। অন্য দেহাংশও দ্রুত উদ্ধার করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত