Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২১: ৩৭
হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে প্রায় ২৫ মিটার গভীর গর্ত হয়েছে। ছবি: এপির সৌজন্যে
হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে প্রায় ২৫ মিটার গভীর গর্ত হয়েছে। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হানার পর দেশটির নিরাপত্তা দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আজ রোববার সকালে (স্থানীয় সময়) এই ঘটনার পর প্রায় আধা ঘণ্টা বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করার ‘সর্বাত্মক চেষ্টা’ চালালেও সফল হয়নি।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানায়, তারা দূরপাল্লার অ্যারো-৩ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সাহায্যে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ ছাড়া দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত থাড (THAAD) অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেমও রয়েছে। কিন্তু এত সব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যার’ জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারই প্রথম হুতিরা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে সফলভাবে হামলা চালাল। তবে এর আগে বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করে, তাদের দিকে ছোড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু এবার শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।

হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমেরিকান ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের দিকে লক্ষ্য করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি জানান, লক্ষ্যবস্তুতে ‘হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ ব্যবহার করা হয়।

ইসরায়েলের অন্যতম সুরক্ষিত স্থানে এমন সফল হামলা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির ইঙ্গিত দেয় এবং প্রশ্ন তোলে— এত উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরও ইসরায়েল এ হামলা ঠেকাতে পারল না কেন। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইসরায়েলের অন্যতম সুরক্ষিত স্থানে এমন সফল হামলা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির ইঙ্গিত দেয় এবং প্রশ্ন তোলে— এত উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরও ইসরায়েল এ হামলা ঠেকাতে পারল না কেন। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুতিদের বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ অভিযানের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও ব্যবস্থা নিয়েছি, ভবিষ্যতেও নেব। সবকিছু বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের (হুতিদের) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটা এবারই শেষ না, আবার পাল্টা হামলা হবে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, হুতিদের হামলার জবাবে ‘সাত গুণ’ পাল্টা হামলা চালানো হবে।

এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলা নিয়ে আলোচনা করতে রোববার বিকেলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসবে।

ইসরায়েলের অন্যতম সুরক্ষিত স্থানে এমন সফল হামলা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির ইঙ্গিত দেয় এবং প্রশ্ন তোলে, এত উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার পরও ইসরায়েল এ হামলা ঠেকাতে পারল না কেন।

বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া ট্রেন চলাচলও সাময়িক বন্ধ রাখা হয় এবং সাধারণ জনগণকে ওই এলাকায় না যেতে অনুরোধ জানায় পুলিশ। ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ প্রধান টার্মিনালের দিকে যাওয়া সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আঘাতের পর কালো ধোঁয়া ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।

জার্মানির বৃহত্তম বিমান সংস্থা লুফথানসার একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, লুফথানসা, সুইস, অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইনস, ব্রাসেলস এয়ারলাইনস ও ইউরো উইংস সোমবার ৬ মে পর্যন্ত তেল আবিবে ফ্লাইট স্থগিত করেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিওর সামরিক বিশ্লেষক আমির বার শালোম সিএনএনকে বলেন, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্র খুবই সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যভেদ করেছে। প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে এ রকম নির্ভুলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া অত্যন্ত চমকপ্রদ। আমাদের এই হুমকিকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। এটা আমাদের ভুল না অন্য কোনো নতুন হুমকি, তা যাচাই করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ইরান এমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যেগুলো বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। তবে হুতিদের কাছে এই প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

লুফথানসা, সুইস, অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইনস, ব্রাসেলস এয়ারলাইনস ও ইউরো উইংস সোমবার ৬ মে পর্যন্ত তেল আবিবে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। ছবি: এপির সৌজন্যে
লুফথানসা, সুইস, অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইনস, ব্রাসেলস এয়ারলাইনস ও ইউরো উইংস সোমবার ৬ মে পর্যন্ত তেল আবিবে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। ছবি: এপির সৌজন্যে

বার শালোম বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা থেকে শুরু করে প্রতিরোধ প্রক্রিয়া—সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে কাজ করে, যেগুলোর ভিত্তিতে ফল নির্ধারিত হয়। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে।’

এদিকে হামাস এই হামলার প্রশংসা করে হুতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা ইয়েমেনকে ফিলিস্তিনের ‘যমজ ভাই’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, ‘সবচেয়ে নৃশংস দমননীতি সত্ত্বেও তারা পরাভূত হয়নি, মাথা নত করেনি।’

হুতিরা দাবি করেছে, তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে স্টেলথ প্রযুক্তি রয়েছে, যার পাল্লা ২ হাজার ১৫০ কিলোমিটার (১ হাজার ৩৩৫ মাইল)। এটি উচ্চগতিসম্পন্ন এবং ম্যাক ১৬ গতিতে ছুটতে পারে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই হুতিরা ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, এই হামলাগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের অংশ। তবে ইসরায়েলের দাবি, বেশির ভাগ হামলাই তারা প্রতিহত করে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভেদ করেছে।

গত ডিসেম্বরেও একটি হুতি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে আঘাত হানে। সেই হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়। হুতিরা জানিয়েছিল, তারা ‘প্যালেস্টাইন-২’ নামের একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র জাফা এলাকার ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনার দিকে ছোড়ে।

এ ছাড়া জুলাই মাসে তারা তেল আবিবে একটি ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করে, যা ছিল শহরটিতে হুতিদের প্রথম প্রাণঘাতী ড্রোন হামলা।

এদিকে ইসরায়েল হুতি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দর রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র আরও ব্যাপকভাবে ইয়েমেনে হুতি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত, লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় বৈশ্বিক বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এই সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। পাশাপাশি হুতিদের ইসরায়েল, বাণিজ্যিক জাহাজ ও মার্কিন নৌবাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা ঠেকানোও এর উদ্দেশ্য।

সিএনএন জানিয়েছে, এই অভিযান চালাতে মাত্র তিন সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের খরচ এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এর মধ্যে বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান মোতায়েন এবং উচ্চ মূল্যের গোলাবারুদ ব্যবহারের খরচও অন্তর্ভুক্ত। তবু এত কিছুর পরেও হুতিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের চলমান এই অভিযান। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের নিজস্ব উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো-৩ (তাদের দাবি বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করছে) সত্ত্বেও আটকানো যায়নি হুতি ক্ষেপণাস্ত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত