Ajker Patrika

ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে গাজায় আবাসন ধ্বংস করছে ইসরায়েল, নেতানিয়াহুর স্বীকারোক্তি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ১৬: ০৭
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার একটি আবাসিক এলাকা। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার একটি আবাসিক এলাকা। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তাঁর দেশ গাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে মূলত স্থানীয় লোকজন, যাতে অঞ্চলটিতে না থাকতে পেরে বাধ্য হয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আইনপ্রণেতাদের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি এই কথা বলেন। বৈঠকের বক্তব্য থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী—নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় আরও বেশি বাড়ি ধ্বংস করছে এবং এর ফলে ফিলিস্তিনিদের ফেরার কোনো জায়গা থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ‘এর একমাত্র ফলাফল হবে গাজাবাসীরা উপত্যকার বাইরে অভিবাসনের পথ বেছে নেবে। তবে আমাদের প্রধান সমস্যা হলো, কোন দেশ তাদের গ্রহণ করবে, তা খুঁজে বের করা।’

নেতানিয়াহু আইনপ্রণেতাদের জানান, সম্প্রতি তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে মিসর ও জর্ডানকে ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু উভয় দেশই দ্রুত এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে। তারা জোর দিয়ে বলে, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজেদের জমিতেই থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত।

ইসরায়েল গাজাবাসীদের প্রকাশ্যে এই নিশ্চয়তা এখনো দেয়নি যে, যারা গাজা থেকে চলে যাবে, তারা আবার ফিরতে পারবে। ফলে অন্য দেশগুলো গাজাবাসীদের আশ্রয় দিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। কারণ, তারা মনে করে—এটি দশকের পর দশক ধরে চলে আসা ভূমিসংক্রান্ত একটি সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল হবে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, একটি পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় কাজের জন্য যারা গাজা ছেড়ে বিদেশে গেছে, তাদের একটি নথিতে সই করতে হয়েছে। সেখানে স্বীকার করা হয়েছে যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তাদের ফেরার কোনো সময়সীমা নেই। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া শিশুদেরও হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে গাজায় তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

গত রোববার নেসেট কমিটির বৈঠকে নেতানিয়াহু দাবি করেন, গাজাবাসীদের গ্রহণ করার মতো দেশ খুঁজে পেতে ব্যর্থতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী। তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছে, আরব মিত্রদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ট্রাম্পের গাজা দখল পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকে তাঁর প্রশাসন এটিকে এগিয়ে নিতে নামমাত্র প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

তবুও নেতানিয়াহু আইনপ্রণেতাদের বলেন, ‘আমি জানি, আমি এখানে কিছু লোককে হতাশ করব। কিন্তু আমরা এখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নিয়ে আলোচনা করছি না।’ ইসরায়েলি দৈনিক মা’আরিভে ফাঁস হওয়া বৈঠকের আংশিক বিবরণ অনুযায়ী, নেতানিয়াহুর এই অবস্থানের ব্যাপারে এক আইনপ্রণেতা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিদের (গাজায় বসতি স্থাপনের জন্য) নিয়ে আসুন। তাহলে আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারব।’

নেতানিয়াহু কমিটিকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ পুনরায় শুরুর ইসরায়েলের পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানান। তিনি জানান, এক নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে, যাতে হামাস ত্রাণ আত্মসাৎ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। নেতানিয়াহু বলেন, দক্ষিণ গাজায় নতুন স্থাপিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র থেকে যাঁরা ত্রাণ নেবেন, তাঁদের দক্ষিণ গাজায় স্থাপিত নতুন মানবিক অঞ্চলের বাইরের গাজার অন্য কোনো স্থানে ফিরতে দেওয়া হবে না।

ইসরায়েলের এই ত্রাণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার ২০ লক্ষাধিক জনসংখ্যার পুরোটাকেই রাফাহ ও তার আশপাশের একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ করা হবে। এলাকাটি গাজার মোট আয়তনের মাত্র ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অঞ্চলে প্রবেশকারীদের ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পরীক্ষা করবে।

নতুন ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি নতুন সংস্থা গঠন করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এই সংস্থার কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই উদ্যোগে সহযোগিতা বা অর্থায়ন করতে রাজি হয়নি। তাদের উদ্বেগ হলো, এই পরিকল্পনা গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত