Ajker Patrika

ইরানে বন্দুকধারীর হামলায় ৯ পাকিস্তানি নিহত

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৮
ইরানে বন্দুকধারীর হামলায় ৯ পাকিস্তানি নিহত

পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা কমে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আবার ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের সারাভানে ৯ জন পাকিস্তানিকে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। গত শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

গতকাল শনিবার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তেহরানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ মুদাসির টিপি বলেন, ‘সারাভানে ৯ পাকিস্তানির ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। দূতাবাস শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোকে পূর্ণ সহায়তা দেবে। আমরা ইরানকে এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছি।’

ইরানের আধা সরকারি মেহর নিউজ এজেন্সি শুক্রবার সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের সারাভানে হামলার কথা জানিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে নিহতদের শুধু বিদেশি নাগরিক হিসেবে বলা হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।

এ ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর আলিরেজা মারহামাতি সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএকে বলেন, তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি তাঁদের বাসভবনে প্রবেশ করে বিদেশিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ডেপুটি গভর্নর ৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানান।

বেলুচের মানবাধিকার সংস্থা হালভাশ তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে যে, নিহতরা পাকিস্তানি শ্রমিক। তাঁরা গাড়ি মেরামতের দোকানে কাজ করতেন এবং সেখানেই থাকতেন।

এই হত্যাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ অভিহিত করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ইরানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তেহরানকে ঘটনাটির তদন্ত করতে তাগাদা দিয়েছে।

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি একটি ভয়ংকর ও ঘৃণ্য ঘটনা এবং আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আমরা ইরানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। অবিলম্বে ঘটনার তদন্ত করার এবং এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’

আগামীকাল সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ানের পাকিস্তান সফরের কথা রয়েছে। এর দুই দিন আগে ঘটল এই হত্যাকাণ্ড।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এই বন্দুক হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ইরান ও পাকিস্তান তার শত্রুদের দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে দেবে না।

দুই দেশের মাটিতে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর উত্তেজনা নিরসন করে আবারও কূটনীতিক সম্পর্কে ফেরার পথে রয়েছে পাকিস্তান ও ইরান। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করে বিমান হামলা চালিয়েছিল ইরান। তারা দাবি করেছিল, জইশ আল-আদল নামে একটি সুন্নি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল পাকিস্তান।

ওই হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় পাকিস্তান। তাতে চার শিশুসহ ৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের সবাই বিদেশি নাগরিক বলে জানান ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিদী।

এ অবস্থায় দুই পক্ষই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করার সঙ্গে একে অপরকে তার আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে। গত বুধবার ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিয়েছে পাকিস্তান। পাশাপাশি ইসলামাবাদ থেকেও ইরানি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর গত ১৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের মধ্যে টেলিফোনে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। ইরানের সঙ্গে সব ইস্যুতে একত্রে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল পাকিস্তান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত