Ajker Patrika

ইসরায়েলি সেনাদের মুখোমুখি হয়ে যা বললেন আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ১৬
ইসরায়েলি সেনাদের মুখোমুখি হয়ে যা বললেন আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় চলছে ইসরায়েলি বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযান। হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশকে প্রচণ্ড ভয়ংকর বলে অভিহিত করেছেন সেখানকার একজন চিকিৎসক। পাশাপাশি হাসপাতালের ভেতরে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালাতে না দিতে রুখে দাঁড়ান এক চিকিৎসক।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়ানো ওই চিকিৎসকের নাম মুনির আল-বারশ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে মূলত সেখানে থাকা ফিলিস্তিনিদের মনে ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি করতে।

মুনির আল-বারশ ইসরায়েলি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে থাকা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই তোমরা এই হাসপাতালে প্রবেশ করেছ। হাসপাতালের প্রতিটি করিডর, প্রতিটি তলা মানুষে পরিপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই তোমরা কেন অভিযান চালাচ্ছ, সেটার কারণ আমি শুনতে চাই না।’

আল-শিফা হাসপাতালের এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘হাসপাতালের প্রতিটি তলা—প্রথম থেকে শুরু করে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত মানুষে পরিপূর্ণ। তার পরও তোমরা অভিযান চালানোর ব্যাপারে বলতেই থাকবে?’ তিনি আরও বলেন, তার পরও কী এটি তোমাদের জন্য সমস্যার কারণ? তার পরও তোমাদের হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে দেখতে হবে?’ 

এ সময় মুনির আল-বারশ বলেন, ‘হাসপাতালের রিসেপশন, সার্জারি বিভাগ বাস্তুচ্যুত মানুষে ভর্তি। ডায়ালাইসিস, ডেলিভারি ও প্রশাসনিক বিভাগ কিছুটা খালি রয়েছে। হাসপাতালের ডান দিকে থাকা বার্ন ইউনিটও রোগী আর বাস্তুচ্যুত মানুষ দিয়ে ভর্তি।’

এদিকে আল-জাজিরার পৃথক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ৩০ জনকে চোখ বেঁধে আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু হামাসের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ এখনো সেখানে পাওয়া যায়নি। ওই ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের আঙিনায় তিনটি ট্যাংক দিয়ে ঘেরা জায়গায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সার্জারি ভবনের ভেতরে ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সব পার্টিশন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, ভেঙে দেওয়া হয়েছে সব দেয়াল। বেসমেন্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। সেখানে একেকজন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আল-শিফা হাসপাতালের নিচে অবস্থিত একটি সুড়ঙ্গে হামাস তাদের অভিযানের নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করেছে—এমন দাবি করে সেখানে অভিযান পরিচালনা করার কথা বলেছিল আইডিএফ। তবে ইসরায়েলের একটি রেডিওতে বলা হয়েছে, হাসপাতালটিতে হামাসের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালটির ভেতরে থাকা চিকিৎসক আহমেদ আল মোখাল্লালাতি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত গুলিবর্ষণে জানালার কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে রোগী, চিকিৎসক, আশ্রয়প্রার্থী সবাই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে ও আশপাশে গুলি করা হচ্ছে। এটা সত্যিই প্রচণ্ড ভয়ংকর যে এতগুলো নিরীহ মানুষের মধ্যে গুলি করা হচ্ছে। হাসপাতালের আশপাশে ঘুরছে ট্যাংক। জরুরি বিভাগের সামনেই একটি ট্যাংক মোতায়েন রাখা আছে। হাসপাতালের চারপাশে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সরাসরি হাসপাতালকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তারা। আমরা জানালা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি।’

আল-শিফাসহ গাজার হাসপাতালগুলোকে হামাস ব্যবহার করছে—এমন দাবি করার কয়েক ঘণ্টা পরই স্থানীয় সময় আজ বুধবার রাত ১টায় ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে প্রবেশ করেছে। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, চিকিৎসক দল ও আরবি ভাষাভাষীদের অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত তাদের বাহিনী এই অভিযান চালাচ্ছে।

তবে হামাস তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাসপাতাল ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক কমিটিকে এসে পরিদর্শনের আহ্বানও জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত