Ajker Patrika

কুচকাওয়াজে সি চিন পিং

চীনের পুনরুত্থান অবশ্যম্ভাবী

  • পুতিনসহ ২৬ দেশের নেতাদের সামনে সামরিক শক্তি প্রদর্শন।
  • শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার চীনা নেতার।
  • জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ শুরুর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং (মাঝে)। গতকাল বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। ছবি: এএফপি
বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ শুরুর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং (মাঝে)। গতকাল বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। ছবি: এএফপি

সামরিক শক্তিতে বিশ্বের সামনে নতুন আত্মবিশ্বাসের জানান দিল চীন। বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গতকাল বিজয় দিবসের বিশাল কুচকাওয়াজে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেন, চীনের পুনরুত্থান অবশ্যম্ভাবী। এটি আর ঠেকানো যাবে না। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে আধুনিকায়নের পথে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। এই পুনর্জাগরণ শুধু চীনের জন্য নয়, মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

কুচকাওয়াজ ছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আকাশে উড়ে যায় যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের বহর, মাঠে প্রদর্শিত হয় ট্যাংক, ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, পানির নিচের ড্রোন এবং অন্যান্য আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম। সবচেয়ে নজর কাড়ে স্থল, সমুদ্র ও আকাশভিত্তিক কৌশলগত পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন।

সিএমজির খবরে বলা হয়, অনুষ্ঠানে সি চিন পিং ভাষণে তাঁর দেশের অতীতের সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আট দশক আগে চীনা জনগণ বিশ্ববাসীর সঙ্গে মিলে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লড়েছিল। ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে তারা শান্তির পতাকা উড়িয়েছে। বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সেই জয় মানবসভ্যতাকে রক্ষা এবং বিশ্বশান্তির ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে রয়েছে।’

সি চিন পিং সতর্ক করেন, মানবজাতি এখন একটি সংকটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। শান্তি নাকি যুদ্ধ, সংলাপ নাকি সংঘাত, জয়-জয় সহযোগিতা নাকি শূন্য-শূন্য ফলাফল? এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সি চিন পিং বলেন, চীনা জনগণ ইতিহাসের সঠিক বাঁকে থাকবে, শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অটল থাকবে এবং বিশ্ববাসীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মানবজাতির অভিন্ন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।

সামরিক শক্তিকে চীনের পুনর্জাগরণের অপরিহার্য অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন সি চিন পিং। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পিপলস লিবারেশন আর্মি চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করবে এবং বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিজয় দিবসের মহাসমাবেশ শুরু হয় প্রেসিডেন্ট ও বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের পদযাত্রার মধ্য দিয়ে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ বিশ্বের ২৬টি দেশের নেতারা কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আকাশ ও স্থলে নানা নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। আকাশে ছোড়া হয় হাজারো রঙিন বেলুন, সঙ্গে আতশবাজির বর্ণিল আলোকচ্ছটা।

সি চিন পিং সামরিক প্রদর্শনী উপভোগের পাশাপাশি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অতীতের ট্র্যাজেডির যেন আর কখনো পুনরাবৃত্তি না হয়। সব জাতিগোষ্ঠীর চীনা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আধুনিকায়নের পথে শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়া সম্ভব।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে বেইজিংয়ের প্রধান সড়ক ও ভবনগুলো লাল পতাকা, আলোকসজ্জা ও ব্যানারে সাজানো হয়। শহরজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের সামরিক ক্ষমতা সম্প্রতি বিশ্বের নজর কাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া গত দশকে বিপুল গতি পেয়েছে। হাইপারসনিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি সমুদ্র ও আকাশভিত্তিক কৌশলগত সক্ষমতা দেশটির বৈশ্বিক প্রভাবকে শক্তিশালী করছে। বাণিজ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি সামরিক শক্তির সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বরাজনীতিতে নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করছে।

সি চিন পিংয়ের গতকালের ভাষণে শুধু সামরিক শক্তি নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের কথাও বলা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, চীনা জনগণ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকবে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চীনের এই কুচকাওয়াজ শুধু শৌর্য প্রদর্শন নয়, বরং প্রতিপক্ষের প্রতি একটি সুস্পষ্ট বার্তা। শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন ও বৈশ্বিক দায়িত্বের সঙ্গে সামরিক সক্ষমতাকে মিলিয়ে দেশটি নিজেকে ২১ শতাব্দীর একটি নেতৃত্বশীল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত