Ajker Patrika

গাজার মানুষের জীবন বাঁচানো লন্ডনের সার্জন বললেন—এটা কেয়ামত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউকে-মেড পরিচালিত গাজার আল মাওয়াসির তাঁবু শিবির হাসপাতালের সামনেই মার্টিন গ্রিফিথস। ছবি: দ্য টাইমস
ইউকে-মেড পরিচালিত গাজার আল মাওয়াসির তাঁবু শিবির হাসপাতালের সামনেই মার্টিন গ্রিফিথস। ছবি: দ্য টাইমস

৬০ বছর বয়সী প্রফেসর মার্টিন গ্রিফিথস লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ডে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি রয়্যাল হাসপাতাল, হোয়াইটচ্যাপেল-এর এনএইচএস ট্রমা সার্জন। কিশোর গ্যাং কালচার, মাদক ব্যবসা কিংবা ছুরি ও গুলির আঘাতে আহত তরুণদের নিয়ে কাজ করা তাঁর দৈনন্দিন দায়িত্ব। ইউরোপের ব্যস্ততম ট্রমা সেন্টারগুলোর একটিতে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। সহিংসতা রোধে প্রথম হাসপাতাল-ভিত্তিক সেবা চালু করার জন্য তিনি সিবিই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর ছুটি নিয়ে তিনি গাজায় প্রবেশ করেন। বহু বছরে আগে তিনি যুক্তরাজ্যের মানবিক সংস্থা ‘ইউকে-মেড’ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সেই সুবাদে দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। এবার গাজা থেকে সাহায্যের ডাক পেয়ে পরিবার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গাজায় ঢোকার পর গ্রিফিথসের প্রথম অনুভূতি ছিল, সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ধূসর ইটের ধুলোয় ঢাকা চাঁদের মতো এক দৃশ্য। বোমার আঘাতে কোনো উঁচু ভবন অবশিষ্ট নেই, মানুষজন শুধু বাঁচার চেষ্টা করছে।’

বর্তমানে দক্ষিণ গাজার আল মাওয়াসি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন গ্রিফিথস। এখানে ইউ-মেড পরিচালিত দুটি ফিল্ড হাসপাতালের একটি চলছে। এখানেই এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ চিকিৎসা পরামর্শ, চার হাজারের বেশি অস্ত্রোপচার এবং শত শত নবজাতকের জন্ম হয়েছে।

হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশির ভাগই বিস্ফোরণ ও গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। কেউ কেউ দিন-সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়া পুরোনো ও মারাত্মক সংক্রমিত ক্ষত নিয়ে আসছেন। ক্ষুধা, অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। গ্রিফিথস বলেন, ‘অঙ্গহানি, গুলিবিদ্ধ হওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা—সবই এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। ভয়ংকর আঘাতপ্রাপ্ত অনেক শিশুকেও আনা হচ্ছে। তাদের কেউ পরিবার হারিয়েছে, কেউ একা হয়ে গেছে। এদের যন্ত্রণাদায়ক চিৎকার শোনার পর নিজেকে সামলে নেওয়া কঠিন।’

বর্তমানে ওই ফিল্ড হাসপাতালে ১৫ জন ব্রিটিশ চিকিৎসক ও কর্মীসহ প্রায় ৫০০ স্থানীয় মানুষ কাজ করছেন। স্থানীয় কর্মীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ—পরিবার হারানোর পাশাপাশি দুই বছরে তাঁদের অনেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজন হারিয়েছেন। তবু তাঁরা প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গ্রিফিথস বলেন, ‘ওরা দুর্দান্ত মানুষ। প্রতিদিনের ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেও অবিশ্বাস্য সাহস নিয়ে কাজ করেন।’

আল মাওয়াসির তাঁবু শিবির হাসপাতাল। ছবি: দ্য টাইমস
আল মাওয়াসির তাঁবু শিবির হাসপাতাল। ছবি: দ্য টাইমস

গাজার মানুষও চিকিৎসা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তবে শীতের আগে ওষুধ, ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফুরিয়ে যাচ্ছে। আশ্রয় সংকুচিত হচ্ছে, আর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত।

গ্রিফিথসের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে বোমা বিস্ফোরণ এখন দৈনন্দিন ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণ শুনে যখন বুঝি সেটা আমার দিকে নয়। তখন কিছুটা স্বস্তি লাগে, আবার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়—কারও ওপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।’

সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও হাসপাতাল কর্মীরা গ্রফিথসকে একবেলা গরম খাবার দেন। পথ যদি নিরাপদ থাকে তবে আগামী মাসে (অক্টোবর) লন্ডনে ফেরার পরিকল্পনা করছেন গ্রিফিথস। ফিরে গিয়ে তিনি আবার এনএইচএস ট্রমা সেন্টারে দায়িত্ব নেবেন। তিনি বলেন, ‘আমি আর কোনো দিন এনএইচএস নিয়ে অভিযোগ করব না।’

গাজার আল মাওয়াসির তাঁবু শিবির হাসপাতাল থেকে কথা বলার সময় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘আজ কিছুটা শান্ত। অস্ত্রোপচার শেষ করে কয়েকজন রোগী দেখে হয়তো ঘুমাতে পারব। কিন্তু বাইরে তাকালেই মনে হয়—এ যেন কেয়ামতের দৃশ্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত