Ajker Patrika

‘সিরিয়ায় গত রাতে কেউ ঘুমায়নি’

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ০১
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বসবাস করেন রানিয়া কাতাফ। ছবি: বিবিসি
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বসবাস করেন রানিয়া কাতাফ। ছবি: বিবিসি

গতকাল শনিবারের রাতটুকু উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটিয়েছেন সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দারা। রাত শুরু হওয়ার আগে থেকেই তারা জানত বিদ্রোহীরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে। আর রাত গভীর হতেই শোনা যায়, বাশার আল-আসাদের শাসন শেষ হয়ে গেছে! দামেস্ক এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে!

আজ রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রাত থেকেই সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে অবিশ্বাস্য সব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। এসবে দেখা যায়—মানুষ রাস্তায় নেমে বিদ্রোহীদের স্বাগত জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে সাইদনায়া কারাগার থেকে বন্দীদের মুক্ত করার দৃশ্যও ভাইরাল হয়ে গেছে।

‘হিউম্যানস অব দামেস্ক’ নামে দামেস্কের একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করেন রানিয়া কাতাফ। পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গত রাতে সিরিয়ায় কেউ ঘুমায়নি। এমনকি বিদেশে থাকা সিরিয়ানরাও জেগে ছিলেন। পুরো জাতি মোবাইল হাতে চূড়ান্ত খবরের জন্য অপেক্ষায় ছিল।’

মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রানিয়া আরও বলেন, ‘৩০ বছরের ডুবন্ত অবস্থা থেকে উঠে এসে একটি গভীর নিশ্বাস নেওয়ার মতো এখন আমাদের অনুভূতি।’

রানিয়া জানান, বিগত দিনগুলোতে তাঁর অনুভূতি ছিল মিশ্র। তবে বিদ্রোহীদের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সাহস বেড়ে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘আগে আমি কখনো নিজের মতামত প্রকাশ করতে সাহস করতাম না। এমনকি কাউকে সমর্থন জানাতে একটি হার্ট ইমোজি দেওয়ারও সাহস ছিল না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দামেস্কের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো সত্যিকারের স্বাধীনতার অনুভূতি হয়েছে।’ তিনি জানান, দামেস্কের উমাইয়াদ স্কয়ারে মানুষ আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ উদ্‌যাপন করছে। বন্দুকের গুলির শব্দও শোনা গেছে। তবে বেশির ভাগই ছিল আতশবাজি। ২০১১ সালে দেশটিতে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, হঠাৎ করেই সেই সময়টি সামনে হাজির হয়ে যাওয়ার মতো একটি অবস্থা।

দামেস্কের দক্ষিণে অবস্থিত দারা শহরে থাকেন ইয়াজান আল-আমারি। ছোট একটি দোকান চালান তিনি। ইয়াজান বলেন, ‘খবর শুনে প্রথমে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে নিশ্চিত হওয়ার পর গাড়ি নিয়ে আমরা দামেস্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি উদ্‌যাপনের জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের মনে হচ্ছিল, যেন তারা স্বপ্ন দেখছে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। এত দিন আমরা ভয়ে আতঙ্কে ছিলাম।’

এদিকে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে অনেকের মধ্যে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করা এক সিরিয়ান বলেন, ‘আমার পরিবার সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে থাকে। আমরা ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। আমি ভীত যে আমার পরিবারকে হত্যা করা হবে।’

তাঁর পরিবার সিরিয়া থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে লেবানন ও জর্ডানের সীমান্ত বন্ধ। পরিবারের সদস্যরা ব্যাগপত্র গুছিয়ে কোনো বিমানবন্দর চালু হয় কি না দেখছে। সীমান্ত দিয়ে বিশেষ অনুমতি নিয়ে বের হওয়ার সুযোগও খুঁজছে।

লন্ডনবাসী সিরিয়ান বলেন, ‘মানুষ ভয়ে উদ্‌যাপন করছে। তারা উদ্‌যাপন করছে যেন দেখাতে পারে যে, তারা খুশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসাদ শাসন শেষ হওয়া আনন্দের হলেও বিকল্প সরকার কেমন হবে তা অজানা। যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে সরকারের পতন হয়েছে, সেটি আল কায়েদারই একটি শাখা।’

এদিকে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেওয়া হায়াত তাহরির আল-শাম গোষ্ঠী জানিয়েছে, খ্রিষ্টানরা সিরিয়ায় নিরাপদে থাকবে। তবে এই প্রতিশ্রুতি কতটা সত্য, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত