অনলাইন ডেস্ক
ইরানে টানা ১১ দিন বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এই দাবি আসলেই কি অর্জিত হয়েছিল? প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়।
স্বল্প সময়ের এ যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু দুটি লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের বিনাশ এবং শাসনব্যবস্থার বদল।
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের মূলোৎপাটন কি আদৌ করতে পেরেছে ইসরায়েল? সম্ভবত না। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের কোনো ক্ষতি হয়নি। অতএব ইসরায়েলের এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলা যাচ্ছে না।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় শক্তিশালী বাংকার-বাস্টিং বোমা ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি) ব্যবহার করে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পেরেছিল ইসরায়েল। তবে এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এ যুদ্ধে তেমন কোনো সহায়তা দেয়নি। বাংকার বাস্টার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষয়ক্ষতি করেছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ ইরান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেবে, এ আশা ক্ষীণ।
আর ইরানের শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে ইসরায়েল যে কৌশল নিয়েছিল, তার পরিণতি হিসেবে যা ভেবে রেখেছিল, বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।
ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যা করে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ উসকে দিতে চেয়েছিল ইসরায়েল। এই কৌশলের পেছনে ছিল ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস। ইসরায়েল মনে করে, শত্রু রাষ্ট্রকে অস্থির করতে হলে দেশটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কিন্তু ইতিহাস বলছে এই কৌশল কার্যকর হওয়ার নজির নেই বললেই চলে।
একটা ব্যতিক্রম ছিল, লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু। তবে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পাশাপাশি দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকটও এক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছিল। আর অন্যান্য ঘটনায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডগুলো বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইরানে ইসরায়েলের এই কৌশলের ফলে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার বদলে ইরানের জনগণ একত্র হয়েছে। একসঙ্গে হয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। এই মৃত্যুগুলো তাঁদের শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। ইরানের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি এবং একই সঙ্গে জনগণের একটি বড় অংশের কাছে ঘৃণিত এই আরজিসি। এরপরও অনেক ইরানিই এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, ইরানিরা এ হামলাকে শুধু শাসনব্যবস্থা নয়, বরং গোটা ইরানের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে।
শাসন ব্যবস্থার ওপর আঘাতের নামে শাসনব্যবস্থার প্রতীক লক্ষ্য করে ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেছিল, সেটি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
এর একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুখ্যাত এভিন কারাগারে হামলার কথা। রাজনৈতিক বন্দীদের নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত এই কারাগারে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল বোঝাতে চেয়েছিল দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামের সহায়তা করতে চায় তারা। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। এই হামলার পর বন্দীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদের সরিয়ে নিয়েছে অজ্ঞাত জায়গায়।
এছাড়া ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে ইরানের প্রতিশ্রুতির প্রতীক ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ লক্ষ্য করে চালানো হামলাও ছিল চরম হতাশাজনক ও ব্যর্থ। অনেকেই বলছেন, এই হামলা ইসরায়েলের এক হাস্যকর পদক্ষেপ ছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবিতে ইসরায়েলের হামলাও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা শাসকগোষ্ঠীর প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর প্রচেষ্টা থামাতে চাচ্ছিল। কিন্তু অনেক ইসরায়েলিই বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইরানিদের উল্টো সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে পাল্টা ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে লক্ষ্য বানানোর।
এত কিছুর পরও ইসরায়েল তার ঘোষিত যুদ্ধলক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। আরও প্রশ্ন উঠছে, এই হামলা চালিয়ে অন্তত বিশ্বের সমর্থন কি আদায় করতে পেরেছে ইসরায়েল? বা গাজা প্রসঙ্গ আড়ালে ফেলে ‘ন্যায়ের লড়াইকারী’ হিসেবে ভাবমূর্তি গঠনের চেষ্টায় কি সফল হয়েছে? ইসরায়েল যদি এমন দাবি করে তা সত্যিই অমূলক বলে মনে হবে।
নিঃসন্দেহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন বলা যায়। আর তার এ কাজের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেননি। হামলার পরপরই মার্কিন বোমারু বিমানগুলো ফিরে গেছে দেশে।
আবার এই হামলার আগে-পরে ট্রাম্প বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এতে বোঝা যায়, ট্রাম্প এই হামলা মূলত নিজের এবং উপসাগরীয় মিত্রদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চালিয়েছিলেন।
বিশ্বের কয়েকজন নেতা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পক্ষে এবং ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’-এর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। যাদের মধ্যে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্জ। তবে নেতাদের কেউই ইসরায়েলের কঠোর শর্তগুলোর সমর্থন করেননি, যার মধ্যে আছে—ইরান কোনো অবস্থাতেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হতে পারবে না।
এদিকে বিশ্ব আবার সেই পুরোনো নীতিতে ফিরে গেছে, ‘পারমাণবিক অস্ত্র নয়’। অথচ এই নীতিতে বহু আগেই ইরান সম্মতি জানিয়েছিল।
অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্ব এখন ইরানকে ব্যবসার জন্য বৈধ ও গ্রহণযোগ্য অংশীদার হিসেবেই দেখছে। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি পরাজয় এবং ইরানের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতিও গুরুত্বপূর্ণ। এটা সত্য, ইসরায়েল খুব দ্রুত ইরানের আকাশসীমায় আধিপত্য নিয়ে ইচ্ছেমতো হামলা চালিয়েছিল। তবে ইরানও থেমে থাকেনি। বারবার ইসরায়েলের বিখ্যাত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির রাজধানীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। পুরো দেশ অচল করে তোলে এবং নজিরবিহীন হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
যুদ্ধ চলাকালে, ইসরায়েলের প্রতিরোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারসেপ্টর মিসাইল) দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল এবং তা দ্রুত পূরণের সম্ভাবনাও ছিল না। যার ফলে, যুদ্ধের চাপ ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতিও দ্রুত ভেঙে পড়ছিল। এটিও ছিল ইরানের আরেকটি বড় সাফল্য।
১২ দিনের যুদ্ধ শেষ। টানা বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত-বিধ্বস্ত ইরান। শত শত প্রাণহানি হয়েছে দেশটিতে। তবুও ভেঙে পড়েনি এই ইসলামি প্রজাতন্ত্র। বরং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সঠিক লক্ষ্যভেদ করেছে। বিশ্বব্যাপী বেশির ভাগ দেশই ইরানকে এই যুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার হিসেবে দেখছে। পাল্টা তুমুল হামলা চালিয়েও ইরানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়নি। বরং পাল্টা জবাব হিসেবে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার আগে সতর্কবার্তা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
ইরান এমনভাবেই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ট্রাম্পকে ইসরায়েলকে সতর্ক করতে বাধ্য করেছে যেন আর কোনো হামলা না চালানো হয়।
শেষ পর্যন্ত, ইরান এমনভাবে যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছে, যেমনটা তারা সব সময় চায়। ‘শত আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও দৃঢ়ভাবে টিকে থাকা এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনা রেখে দেওয়া।’
আল-জাজিরাতে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গের মতামত।
ইরানে টানা ১১ দিন বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এই দাবি আসলেই কি অর্জিত হয়েছিল? প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়।
স্বল্প সময়ের এ যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু দুটি লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের বিনাশ এবং শাসনব্যবস্থার বদল।
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের মূলোৎপাটন কি আদৌ করতে পেরেছে ইসরায়েল? সম্ভবত না। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের কোনো ক্ষতি হয়নি। অতএব ইসরায়েলের এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলা যাচ্ছে না।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় শক্তিশালী বাংকার-বাস্টিং বোমা ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি) ব্যবহার করে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পেরেছিল ইসরায়েল। তবে এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এ যুদ্ধে তেমন কোনো সহায়তা দেয়নি। বাংকার বাস্টার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষয়ক্ষতি করেছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ ইরান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেবে, এ আশা ক্ষীণ।
আর ইরানের শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে ইসরায়েল যে কৌশল নিয়েছিল, তার পরিণতি হিসেবে যা ভেবে রেখেছিল, বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো।
ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যা করে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ উসকে দিতে চেয়েছিল ইসরায়েল। এই কৌশলের পেছনে ছিল ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস। ইসরায়েল মনে করে, শত্রু রাষ্ট্রকে অস্থির করতে হলে দেশটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কিন্তু ইতিহাস বলছে এই কৌশল কার্যকর হওয়ার নজির নেই বললেই চলে।
একটা ব্যতিক্রম ছিল, লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু। তবে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পাশাপাশি দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকটও এক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছিল। আর অন্যান্য ঘটনায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডগুলো বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইরানে ইসরায়েলের এই কৌশলের ফলে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার বদলে ইরানের জনগণ একত্র হয়েছে। একসঙ্গে হয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। এই মৃত্যুগুলো তাঁদের শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। ইরানের রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি এবং একই সঙ্গে জনগণের একটি বড় অংশের কাছে ঘৃণিত এই আরজিসি। এরপরও অনেক ইরানিই এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, ইরানিরা এ হামলাকে শুধু শাসনব্যবস্থা নয়, বরং গোটা ইরানের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে।
শাসন ব্যবস্থার ওপর আঘাতের নামে শাসনব্যবস্থার প্রতীক লক্ষ্য করে ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেছিল, সেটি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
এর একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুখ্যাত এভিন কারাগারে হামলার কথা। রাজনৈতিক বন্দীদের নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত এই কারাগারে হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল বোঝাতে চেয়েছিল দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামের সহায়তা করতে চায় তারা। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। এই হামলার পর বন্দীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদের সরিয়ে নিয়েছে অজ্ঞাত জায়গায়।
এছাড়া ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে ইরানের প্রতিশ্রুতির প্রতীক ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ লক্ষ্য করে চালানো হামলাও ছিল চরম হতাশাজনক ও ব্যর্থ। অনেকেই বলছেন, এই হামলা ইসরায়েলের এক হাস্যকর পদক্ষেপ ছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবিতে ইসরায়েলের হামলাও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা শাসকগোষ্ঠীর প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর প্রচেষ্টা থামাতে চাচ্ছিল। কিন্তু অনেক ইসরায়েলিই বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইরানিদের উল্টো সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে পাল্টা ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে লক্ষ্য বানানোর।
এত কিছুর পরও ইসরায়েল তার ঘোষিত যুদ্ধলক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। আরও প্রশ্ন উঠছে, এই হামলা চালিয়ে অন্তত বিশ্বের সমর্থন কি আদায় করতে পেরেছে ইসরায়েল? বা গাজা প্রসঙ্গ আড়ালে ফেলে ‘ন্যায়ের লড়াইকারী’ হিসেবে ভাবমূর্তি গঠনের চেষ্টায় কি সফল হয়েছে? ইসরায়েল যদি এমন দাবি করে তা সত্যিই অমূলক বলে মনে হবে।
নিঃসন্দেহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন বলা যায়। আর তার এ কাজের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেননি। হামলার পরপরই মার্কিন বোমারু বিমানগুলো ফিরে গেছে দেশে।
আবার এই হামলার আগে-পরে ট্রাম্প বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এতে বোঝা যায়, ট্রাম্প এই হামলা মূলত নিজের এবং উপসাগরীয় মিত্রদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চালিয়েছিলেন।
বিশ্বের কয়েকজন নেতা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পক্ষে এবং ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’-এর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। যাদের মধ্যে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্জ। তবে নেতাদের কেউই ইসরায়েলের কঠোর শর্তগুলোর সমর্থন করেননি, যার মধ্যে আছে—ইরান কোনো অবস্থাতেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হতে পারবে না।
এদিকে বিশ্ব আবার সেই পুরোনো নীতিতে ফিরে গেছে, ‘পারমাণবিক অস্ত্র নয়’। অথচ এই নীতিতে বহু আগেই ইরান সম্মতি জানিয়েছিল।
অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্ব এখন ইরানকে ব্যবসার জন্য বৈধ ও গ্রহণযোগ্য অংশীদার হিসেবেই দেখছে। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি পরাজয় এবং ইরানের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতিও গুরুত্বপূর্ণ। এটা সত্য, ইসরায়েল খুব দ্রুত ইরানের আকাশসীমায় আধিপত্য নিয়ে ইচ্ছেমতো হামলা চালিয়েছিল। তবে ইরানও থেমে থাকেনি। বারবার ইসরায়েলের বিখ্যাত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির রাজধানীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। পুরো দেশ অচল করে তোলে এবং নজিরবিহীন হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
যুদ্ধ চলাকালে, ইসরায়েলের প্রতিরোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র (ইন্টারসেপ্টর মিসাইল) দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল এবং তা দ্রুত পূরণের সম্ভাবনাও ছিল না। যার ফলে, যুদ্ধের চাপ ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতিও দ্রুত ভেঙে পড়ছিল। এটিও ছিল ইরানের আরেকটি বড় সাফল্য।
১২ দিনের যুদ্ধ শেষ। টানা বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত-বিধ্বস্ত ইরান। শত শত প্রাণহানি হয়েছে দেশটিতে। তবুও ভেঙে পড়েনি এই ইসলামি প্রজাতন্ত্র। বরং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সঠিক লক্ষ্যভেদ করেছে। বিশ্বব্যাপী বেশির ভাগ দেশই ইরানকে এই যুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার হিসেবে দেখছে। পাল্টা তুমুল হামলা চালিয়েও ইরানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়নি। বরং পাল্টা জবাব হিসেবে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার আগে সতর্কবার্তা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
ইরান এমনভাবেই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ট্রাম্পকে ইসরায়েলকে সতর্ক করতে বাধ্য করেছে যেন আর কোনো হামলা না চালানো হয়।
শেষ পর্যন্ত, ইরান এমনভাবে যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসেছে, যেমনটা তারা সব সময় চায়। ‘শত আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও দৃঢ়ভাবে টিকে থাকা এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনা রেখে দেওয়া।’
আল-জাজিরাতে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গের মতামত।
মামদানি তাঁর মুসলিম পরিচয়কে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পাবলিকলি মুসলিম হিসেবে দাঁড়ানো মানে হচ্ছে কিছু নিরাপত্তা হারানো... কিন্তু এই ভয়কে আমরা জয় করব।’
৩ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার কার্যকারিতা নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। পেন্টাগনের একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট ফাঁসের পর তাদের এই সন্দেহ প্রকাশ করলেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই হামলায় ইরানের
৬ মিনিট আগেইরানের পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতসংক্রান্ত একটি বিতর্কিত বিল অনুমোদন করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ জানিয়েছে, আজ বুধবার এই বিল অনুমোদিত হয়। এর ফলে দেশটির পরমাণু কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও স্বচ্ছতার পথ আরও সংকুচিত হলো।
৩২ মিনিট আগেফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আঘাতের পর নতুন বিস্ফোরণের গর্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি প্রকাশ করেছে ম্যাক্সার টেকনোলজিস। আজ বুধবার (২৪ জুন) ধারণ করা স্যাটেলাইট ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।
৩৯ মিনিট আগে