Ajker Patrika

গুজরাটে ৬২ লাখ ভুয়া ভোটার, তথ্যপ্রমাণ হাজির করলেন কংগ্রেস নেতা

কলকাতা প্রতিনিধি  
ভোটার তালিকায় অসংগতি নিয়ে ভারতজুড়ে উত্তেজনা চলছে। ছবি: সংগৃহীত
ভোটার তালিকায় অসংগতি নিয়ে ভারতজুড়ে উত্তেজনা চলছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুজরাট রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে এক নতুন এবং ব্যাপক বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অমিত ছাভড়া এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, রাজ্যে অন্তত ৬২ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি সরাসরি এই ‘ভোট চুরির’ দায় বিজেপির ওপর চাপিয়েছেন। দাবি করেছেন, এই ভুয়া ভোটারদের মাধ্যমেই বিজেপি সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে রেকর্ড জয়ের ভিত গড়েছে।

ছাভড়ার অভিযোগ কেবল সাধারণ নয়, বরং সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বলে কংগ্রেস দাবি করেছে। তিনি বলেন, শুধু নভসারি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চোরিয়াসি বিধানসভা এলাকাতেই প্রায় ৩০ হাজার ভুয়া ভোটারের হদিশ মিলেছে। এই বিধানসভার মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ, যার মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার ভোটারের তথ্য যাচাই করে কংগ্রেস কর্মীরা দেখতে পেয়েছেন যে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটারের নাম, বয়স, ছবি এবং এপিক কার্ডের তথ্যে গুরুতর অসংগতি রয়েছে।

কংগ্রেসের মতে, এই অসংগতিগুলো কোনো সাধারণ ত্রুটি নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত কৌশলের অংশ। তারা পাঁচটি প্রধান কৌশল চিহ্নিত করেছে যার মাধ্যমে এই নকল ভোটার তৈরি করা হয়েছে:

১. নকল নাম ও পদবি: একই ভোটারের নামে একাধিক এন্ট্রি, যেখানে নামের বানান সামান্য ভুল করে নতুন কার্ড তৈরি করা হয়েছে।

২. পদের হেরফের: পদবির এক-দুটি অক্ষর পাল্টে বা সম্পূর্ণ নতুন পদবি ব্যবহার করে একই ব্যক্তিকে একাধিকবার তালিকাভুক্ত করা।

৩. একাধিক এপিক কার্ড: একই ভোটারের জন্য একাধিক এপিক (EPIC) বা ভোটার কার্ড তৈরি করা।

৪. ভাষাগত বিভ্রান্তি: গুজরাটি ছাড়া অন্য ভাষায় তালিকা প্রকাশ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, যাতে সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য যাচাই করতে না পারে।

৫. ছবিতে গরমিল: একই ছবির ব্যবহার কিন্তু নাম ও তথ্যে ভিন্নতা।

অমিত ছাভড়া বলেন, এই ধরনের ‘ভোট চুরি’ শুধু ভোটের ফলাফলই বদলে দেয়নি, বরং ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকেই দুর্বল করেছে। তাঁর মতে, ভোটার তালিকা হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ, আর সেটিকে নষ্ট করা মানেই গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা। তিনি এই বিষয়টির জন্য সরাসরি গুজরাট বিজেপির সভাপতি সি আর পাতিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। পাতিল নভসারি থেকেই একাধিকবার রেকর্ড ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ছাভড়ার মতে, নিজ লোকসভা এলাকায় এত বড় ধরনের গরমিল ঘটে গেলেও তিনি জনগণকে সতর্ক করেননি বা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি।

কংগ্রেসের এই অভিযোগের বিপরীতে বিজেপি অবশ্য একে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র যজ্ঞেশ দাভে এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, কংগ্রেস নিজেদের রাজনৈতিক দুর্বলতা ঢাকতে এবং বারবার নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ আড়াল করতেই এই ধরনের অভিযোগ তুলছে। তিনি কংগ্রেসকে প্রমাণ থাকলে নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামা জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিজেপি আরও দাবি করেছে, ভোটার তালিকা তৈরি ও সংশোধনের কাজটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয় এবং সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, কংগ্রেসের এই অভিযোগ শুধু রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার নয়, বরং এটি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্যও একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। যখন ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই বিতর্কটি এখন আদালত, নির্বাচন কমিশন এবং জনমতের আদালতে পরীক্ষা হবে।

যদি কংগ্রেস তাদের উত্থাপিত তথ্যপ্রমাণ সফলভাবে উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে তা বিজেপির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। অন্যথায়, এই অভিযোগগুলো নিছক রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তবে ৬২ লাখের মতো একটি বিশাল সংখ্যক ভুয়া ভোটারের অভিযোগ ইতিমধ্যেই ভারতজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত