Ajker Patrika

পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমান হারানোর দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের: ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে অচেনা বিমান বিধ্বস্ত। ছবি: এএফপি
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে অচেনা বিমান বিধ্বস্ত। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে তথাকথিত সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী যে যুদ্ধবিমানগুলো হারিয়েছে তার পেছনে দায়ী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা। এমনটাই জানিয়েছেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্যাপ্টেন শিব কুমার। গত মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শিব কুমার বলেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) গত ৭ মে রাতে পাকিস্তানে অবস্থিত তথাকথিত সন্ত্রাসবাদী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সময় যে যুদ্ধবিমানগুলো হারিয়েছে, তা মূলত ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেওয়া সীমাবদ্ধতার কারণেই।’ শিব কুমার ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইন্দোনেশিয়ার ইউনিভার্সিটাস দিরগান্তারা মার্সেকাল সুরিয়াধর্মায় গত ১০ জুন ‘পাকিস্তান-ভারত বিমানযুদ্ধ বিশ্লেষণ এবং বিমানশক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বপ্রস্তুতি’—শীর্ষক ওই সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেখানে ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে ক্যাপ্টেন শিব কুমার বলেন, ‘আমি হয়তো (ইন্দোনেশিয়ার এক আগের বক্তার বক্তব্যের সঙ্গে) একমত নই যে, আমরা এতগুলো বিমান হারিয়েছি, তবে এটা স্বীকার করছি যে আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি।’

বিমানযুদ্ধের শুরুর পর্যায়ে আইএএফ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষতির শিকার হয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা রাফালসহ বিভিন্ন ধরনের ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু বিমান হারানোর কথা স্বীকার করলেও নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ তথা প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান বলেন, ‘আসল বিষয়টি হলো সংখ্যা নয়, বরং কেন বিমানগুলো ভূপাতিত হয়েছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

ক্যাপ্টেন শিব কুমার আরও বলেন, ‘বিমান হারানোর পর আমরা আমাদের কৌশল বদলাই। এরপরই আমরা সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করি। আগে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করি, তারপর ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সহজেই আঘাত হানতে সক্ষম হই।’ তিনি সম্ভবত ১০ মে পাকিস্তানের বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে ভারতের হামলার কথাই উল্লেখ করছিলেন।

ভারতীয় এই প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, আইএএফ বিমানগুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের দেওয়া কঠোর রাজনৈতিক নির্দেশনার অধীনে কাজ করছিল। ওই নির্দেশনায় পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা কিংবা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানা নিষিদ্ধ ছিল। মূলত পারমাণবিক পরিবেশে সংঘাত যাতে আরও বড় আকার ধারণ না করে, সেজন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভারতের ধারণা ছিল, যদি তারা পাকিস্তানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত না করে, তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করা আইএএফ যুদ্ধবিমানগুলোর ওপর হামলা চালাবে না।

কিন্তু পাকিস্তান নিজে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীর উপ-প্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী, আইএএফ যখন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী স্থাপনায় হামলা চালায়, তখনই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান ‘নিরুৎসাহিতকরণ’ থেকে ‘ধ্বংস’ নীতিতে চলে যায়। ফলে আইএএফ-এর যুদ্ধবিমানগুলোকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শত্রু লক্ষ্যবস্তু এড়িয়ে চলতে হয়েছিল, যা সাধারণত যেকোনো অভিযানে আকাশে আধিপত্য কায়েমের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আঘাত করা হয়।

এই কৌশলগত অসুবিধা বুঝতে পেরে, ভারতীয় সামরিক নেতৃত্ব দ্রুত কৌশল বদলায়। কয়েক দিনের মধ্যেই আইএএফ তাদের পরিকল্পনা সংশোধন করে, যাতে ১০ মে’র অভিযানে ব্রহ্মসসহ অন্যান্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যাপ্টেন কুমারের বক্তব্যকে ‘প্রসঙ্গ থেকে আলাদা করে প্রচার করা হয়েছে।’ দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সেই সেমিনারে আমাদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখেছি। তাঁর বক্তব্যকে প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সংবাদ প্রতিবেদনগুলো মূল বক্তব্যের অভিপ্রায় ও গুরুত্ব বিকৃত করেছে।’

উক্ত উপস্থাপনায় ব্যাখ্যা করা হয়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মতো নয়; তারা বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীন কাজ করে। এ ছাড়াও পরিষ্কার করে বলা হয়েছিল, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো ধ্বংস করা এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল সংঘাত বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যবিহীন, অর্থাৎ এটি ছিল একটি অ-উসকানিমূলক প্রতিক্রিয়া।

এদিকে, শিব কুমারের এই বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে বিরোধী দল কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমান হারানোর বিষয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। দলটি বলেছে, বিজেপি সরকার জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছে, যে কারণে তারা সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশনের বিরোধী দলের দাবি গ্রহণ করেনি।

কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেছেন, ‘ক্যাপ্টেন শিব কুমারের আরেকটি চমকপ্রদ প্রকাশে জানা গেছে যে ৭ মে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করার সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমান হারিয়েছিল “শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতার কারণে”।’ তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন কুমারের এই প্রকাশ মোদি সরকারের সরাসরি অভিযোগ।’

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘প্রথমে সিডিএস সিঙ্গাপুরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ইন্দোনেশিয়া থেকে একই ধারা অনুসরণ করেন। কিন্তু কেন প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বদলীয় বৈঠকের সভাপতিত্ব করতে এবং বিরোধী দলগুলোকে আস্থায় নিতে অস্বীকার করছেন? কেন সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ নিয়ে পাকিস্তান সরকারকে আদালতে তুললেন ২৫ বছরের এক নারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মাহনুর ওমর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
মাহনুর ওমর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিজের নাম লাহোর হাইকোর্টের নথিতে দেখে খানিকটা শঙ্কিত হয়েছিলেন মাহনুর ওমর। কিন্তু ‘মাহনুর ওমর বনাম পাকিস্তান ফেডারেশন’ মামলার প্রথম শুনানি হওয়ার পর থেকেই রাওয়ালপিন্ডির এই তরুণ আইনজীবী আলোচনায় উঠে এসেছেন। তিনি পাকিস্তানের তথাকথিত ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ এর বিরুদ্ধে লড়ছেন, যা নারীদের জন্য অত্যন্ত অন্যায্য এক ব্যবস্থা হিসেবে সমালোচিত।

সোমবার (৩ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পাকিস্তানে স্যানিটারি প্যাডের ওপর আরোপিত উচ্চ কর ও শুল্কের কারণে এসব পণ্য অনেক নারীর নাগালের বাইরে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এসব কর পণ্যের খুচরা দামে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘটায়। এক জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণ নারীদের মাত্র ১৬.২ শতাংশ নিয়মিত প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। অথচ দেশটির সরকার ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে গবাদিপশুর বীর্য, দুধ ও চিজের মতো জিনিসকে করমুক্ত করেছে। আর নারীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যরক্ষার পণ্যগুলোকে বিলাসদ্রব্য হিসেবে করের আওতায় রেখেছে।

ওমর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যখন দেশে নারী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জন প্রতিনিধিরা রয়েছেন, তখন কীভাবে এমন লিঙ্গ-অন্ধ নীতি প্রশ্নহীনভাবে পাস হয়? এটা যদি ভুলেও হয়ে থাকে, তবুও সংশোধন জরুরি।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ বলছে, মাসিক স্বাস্থ্য একটি মানবাধিকারের অংশ। কিন্তু পাকিস্তানে গরিব নারী ও স্কুলছাত্রীদের জন্য এটি এখনো কষ্টকর বাস্তবতা।

ওমরের মামলায় সহায়তা দিচ্ছে ‘মাহওয়ারি জাস্টিস’ নামে একটি তরুণ নেতৃত্বাধীন সংগঠন যা ঋতুচক্রকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয় ও দরিদ্র নারীদের মধ্যে স্যানিটারি পণ্য বিতরণ করে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর সংগঠনটি গড়ে ওঠে। কারণ সে সময় হাজারো নারী নিরাপদ বিকল্পের অভাবে নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছিলেন।

আইনজীবী আহসান জেহাঙ্গির খানের মতে, ‘নারীদের একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য কর আরোপ করা মানে তাদের মর্যাদা হরণ করা।’ গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানে প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজন মাসিকের সময় স্কুল মিস করে। এ ছাড়া, অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহারে সংক্রমণ ও প্রজনন সমস্যার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।

সরকার এখনো মামলাটির জবাব দেয়নি। তবে মাহনুর ওমরের আশা—রায় যদি অনুকূলে আসে, তাহলে শুধু প্যাডের দামই কমবে না, বরং পাকিস্তানি সমাজে নারীদের ঋতুচক্র নিয়ে ট্যাবু ও নীরবতার সংস্কৃতিও ভাঙবে। তিনি বলেন, ‘সমস্যা মাসিক নয়, বরং সমাজের সেই নীরবতা, যা এটিকে অদৃশ্য করে রেখেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বামী হত্যার দায়ে বালিকাবধূর মৃত্যুদণ্ড, রেহাই পেতে দিতে হবে কোটি টাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরান বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। ছবি: এএফপি
ইরান বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। ছবি: এএফপি

ইরানে স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বালিকাবধূর প্রাণ বাঁচাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ কোটি তুমান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা) জোগাড় করতে হবে। নইলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ২৫ বছর বয়সী গোলি কোহকান নামের এই নারী সাত বছর ধরে উত্তর ইরানের গোরগান কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায়। ২০১৮ সালের মে মাসে ১৮ বছর বয়সে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে আদালত তাঁকে ‘কিসাস’ (প্রতিশোধমূলক শাস্তি) আইনে মৃত্যুদণ্ড দেন।

গোলি কোহকান ইরানের অবহেলিত জাতিগোষ্ঠী বেলুচ সম্প্রদায়ের সদস্য। দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ এই সম্প্রদায়ের। গোলি পরিচয়হীন একজন নারী। মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। এরপর ১৩ বছর বয়সে তিনি গর্ভবতী হন এবং এক ছেলের জন্ম দেন।

২০১৮ সালের মে মাসে ঘটনার দিন গোলি দেখতে পান, তাঁর স্বামী পাঁচ বছরের ছেলেকে মারধর করছেন। তখন তিনি চাচাতো ভাইকে ফোন করে সাহায্য চান। তাঁর চাচাতো ভাই এসে পৌঁছালে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে গোলির স্বামী নিহত হন। পরে গোলি নিজেই অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

স্থানীয় পুলিশ এসে আইনজীবী ছাড়াই গোলিকে জোর করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে। নিরক্ষর গোলি জেরার চাপে জবানবন্দিতে সই করে হত্যার দায় স্বীকার করেন, যা পরে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ভিত্তি হয়।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গোলির মামলা ইরানে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতীক। দেশটিতে বাল্যবিবাহ বৈধ ও পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা নেই বললেই চলে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, গোলি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর একজন দরিদ্র নারী। সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। তাঁর শাস্তি ইরানি কর্তৃপক্ষের ভয় সৃষ্টির হাতিয়ার ও বৈষম্যমূলক আইনের বাস্তব উদাহরণ।

আইএইচআর জানিয়েছে, গোলি দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর স্বামী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। একবার স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি বাবার বাড়িতে ফিরে যান। তখন তাঁর বাবা বলেন, ‘আমি মেয়েকে সাদা পোশাকে (বিয়ের সময়) বিদায় দিয়েছি, এখন সে শুধু কাফনের কাপড়েই ফিরতে পারবে।’

ইরানি আইনে হত্যা মামলায় ভুক্তভোগীর পরিবার চাইলে ‘দিয়াহ’ বা রক্তঋণ নিয়ে আসামিকে ক্ষমা করতে পারে। জানা গেছে, কারাগার কর্তৃপক্ষ গোলির স্বামীর পরিবারকে রাজি করিয়েছে। এখন গোলি যদি ১০০ কোটি তুমান পরিশোধ করেন এবং গোরগান শহর ছেড়ে চলে যান, তবে তাঁর সাজা মওকুফ হবে।

তবে শর্ত অনুযায়ী, মুক্তি পেলেও গোলি তাঁর ১১ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন না। ছেলেটিকে বর্তমানে তাঁর দাদা-দাদির কাছে রাখা হয়েছে।

ইরানে নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ব্রামশের (Bramsh) সদস্য জিবা বাক্তিয়ারি বলেন, গোলি কোহকানের ঘটনা নতুন নয়। বেলুচ নারীদের পাশাপাশি ইরানের অধিকাংশ নারীই এমন নির্যাতনের শিকার। তাঁদের কথা কেউ জানে না, কেউ শোনে না। দারিদ্র্যের কারণে পরিবারগুলো মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপরই তাদের জীবনে নেমে আসে এমন নির্যাতন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিপ্টো ব্যবসায়ী ঝাওকে ক্ষমা করেও ট্রাম্প বললেন, ‘আমি চিনি না, উনি কে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৩
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চ্যাংপেং ঝাও। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চ্যাংপেং ঝাও। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জানেন না কে চ্যাংপেং ঝাও। অথচ গত মাসেই তিনি এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীকে ক্ষমা করেছিলেন। রোববার (২ নভেম্বর) সম্প্রচারিত সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ওই মন্তব্য করেন।

এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, চ্যাংপেং ঝাও ২০২৩ সালে অর্থপাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি চার মাস কারাভোগও করেন এবং নিজ প্রতিষ্ঠিত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ ‘বাইন্যান্স’ এর প্রধান নির্বাহী পদ থেকেও সরে দাঁড়ান।

সাম্প্রতিক সময়ে ঝাওয়ের কোম্পানিগুলো ট্রাম্প–সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন ডিজিটাল মুদ্রা প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে ডোমিনারি হোল্ডিংস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব অ্যাডভাইজার্সে ট্রাম্পের দুই ছেলে রয়েছেন, যা ট্রাম্প টাওয়ারেই অবস্থিত।

সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক নোরা ও’ডনেল জানতে চান—সরকার যখন ঝাওয়ের কর্মকাণ্ডকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলেছে, তখন কেন ট্রাম্প তাঁকে ক্ষমা করলেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানিই না উনি কে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে কখনো দেখা করেছি বলে মনে পড়ে না। কেউ আমাকে বলেছিল, তিনি বাইডেন প্রশাসনের উইচ হান্টের শিকার।’

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই খাতে নেতৃত্ব না দেয়, তবে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এগিয়ে যাবে।

এদিকে ট্রাম্পের ক্ষমার মাধ্যমে ঝাওয়ের ওপর আর্থিক ব্যবসা পরিচালনায় থাকা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও, বাইন্যান্সে তাঁর ভূমিকা কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, ক্রিপটোকারেন্সির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে ঝাওয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাইডেন প্রশাসন। তিনি বলেন, ‘এটি ছিল বাড়াবাড়ি রকমের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) এটি সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধন করেছেন।’

উল্লেখ্য, বাইন্যান্স বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ। ট্রাম্প প্রশাসন অতীতেও ক্রিপটো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করেছে। এর মধ্যে বিটমেক্স প্রতিষ্ঠাতারা সহ ‘সিল্ক রোড’-এর প্রতিষ্ঠাতা রস উলব্রিক্টও তাঁর ক্ষমা পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয়কে অপহরণের পর সুদানের অপহরণকারীদের প্রশ্ন—তুমি কি শাহরুখ খানকে চেনো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অপহরণকারীদের মাঝখানে অপহৃত ভারতীয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া (এনডিটিভি)
অপহরণকারীদের মাঝখানে অপহৃত ভারতীয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া (এনডিটিভি)

সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে বিপদে পড়েছেন এক ভারতীয়। ওডিশার জগতসিংহপুর জেলার বাসিন্দা আদর্শ বেহেরা নামের ওই ব্যক্তিকে সুদানের ভয়ংকর মিলিশিয়া গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ৩৬ বছর বয়সী বেহেরা দুজন সশস্ত্র আরএসএফ যোদ্ধার মাঝে বসে আছেন। তাঁদের একজন তাঁকে প্রশ্ন করছেন, ‘তুমি কি শাহরুখ খানকে চেনো?’ অন্যজন তাঁকে নির্দেশ দেন, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ‘দাগালো গুড’ বলার জন্য। এই শব্দযুগলের মাধ্যমে মূলত মিলিশিয়া নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে ‘হেমেতি’-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয়।

সূত্র জানায়, বেহেরাকে উত্তর দারফুরের আল ফাশির শহর থেকে অপহরণ করা হয়েছে। রাজধানী খার্তুম থেকে ওই অঞ্চলটি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে দক্ষিণ দারফুরের রাজধানী নিয়ালা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা আরএসএফের একটি ঘাঁটি।

বেহেরার পরিবার জানিয়েছে, তিনি ২০২২ সাল থেকে সুকারাতি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তাঁর স্ত্রী সুষ্মিতা বেহেরা এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমাদের দুই ছেলে, একজন আট বছর, আরেকজন তিন। আমরা শুধু চাই, ও যেন নিরাপদে ফিরে আসে।’

পরিবারের পাঠানো আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আদর্শ বেহেরা হাত জোড় করে অনুরোধ করছেন, ‘আমি আল ফাশিরে আছি, এখানে পরিস্থিতি খুব খারাপ। আমি দুই বছর ধরে অনেক কষ্টে আছি। আমার পরিবার ও বাচ্চারা খুব চিন্তিত। আমি ওডিশা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমাকে সাহায্য করুন।’

গত ১৮ মাসের অবরোধের পর উট ও টয়োটা গাড়িতে চড়ে আরএসএফ যোদ্ধারা সম্প্রতি আল ফাশির শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সতর্ক করেছে—ওই অঞ্চলে আরএসএফের গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

ভারতে নিযুক্ত সুদানের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ আবদাল্লা আলি এলতোম এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘আল ফাশির বর্তমানে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আমরা আশা করছি, আদর্শ বেহেরাকে যেন কোনো ক্ষতি করা না হয়। পরিস্থিতি অনিশ্চিত হলেও আমরা তাঁর নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের আশায় আছি।’

সুদানে ২০২৩ সাল থেকে সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আরএসএফের সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আদর্শ বেহেরার অপহরণ সেই ভয়াবহ সংঘাতেরই নতুন করুণ অধ্যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত