Ajker Patrika

পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমান হারানোর দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের: ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা

অনলাইন ডেস্ক
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে অচেনা বিমান বিধ্বস্ত। ছবি: এএফপি
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে অচেনা বিমান বিধ্বস্ত। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে তথাকথিত সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী যে যুদ্ধবিমানগুলো হারিয়েছে তার পেছনে দায়ী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা। এমনটাই জানিয়েছেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্যাপ্টেন শিব কুমার। গত মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শিব কুমার বলেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) গত ৭ মে রাতে পাকিস্তানে অবস্থিত তথাকথিত সন্ত্রাসবাদী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সময় যে যুদ্ধবিমানগুলো হারিয়েছে, তা মূলত ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেওয়া সীমাবদ্ধতার কারণেই।’ শিব কুমার ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইন্দোনেশিয়ার ইউনিভার্সিটাস দিরগান্তারা মার্সেকাল সুরিয়াধর্মায় গত ১০ জুন ‘পাকিস্তান-ভারত বিমানযুদ্ধ বিশ্লেষণ এবং বিমানশক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বপ্রস্তুতি’—শীর্ষক ওই সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেখানে ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে ক্যাপ্টেন শিব কুমার বলেন, ‘আমি হয়তো (ইন্দোনেশিয়ার এক আগের বক্তার বক্তব্যের সঙ্গে) একমত নই যে, আমরা এতগুলো বিমান হারিয়েছি, তবে এটা স্বীকার করছি যে আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি।’

বিমানযুদ্ধের শুরুর পর্যায়ে আইএএফ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষতির শিকার হয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা রাফালসহ বিভিন্ন ধরনের ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু বিমান হারানোর কথা স্বীকার করলেও নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ তথা প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান বলেন, ‘আসল বিষয়টি হলো সংখ্যা নয়, বরং কেন বিমানগুলো ভূপাতিত হয়েছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

ক্যাপ্টেন শিব কুমার আরও বলেন, ‘বিমান হারানোর পর আমরা আমাদের কৌশল বদলাই। এরপরই আমরা সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করি। আগে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করি, তারপর ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সহজেই আঘাত হানতে সক্ষম হই।’ তিনি সম্ভবত ১০ মে পাকিস্তানের বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে ভারতের হামলার কথাই উল্লেখ করছিলেন।

ভারতীয় এই প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, আইএএফ বিমানগুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের দেওয়া কঠোর রাজনৈতিক নির্দেশনার অধীনে কাজ করছিল। ওই নির্দেশনায় পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা কিংবা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানা নিষিদ্ধ ছিল। মূলত পারমাণবিক পরিবেশে সংঘাত যাতে আরও বড় আকার ধারণ না করে, সেজন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভারতের ধারণা ছিল, যদি তারা পাকিস্তানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত না করে, তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করা আইএএফ যুদ্ধবিমানগুলোর ওপর হামলা চালাবে না।

কিন্তু পাকিস্তান নিজে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীর উপ-প্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী, আইএএফ যখন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী স্থাপনায় হামলা চালায়, তখনই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান ‘নিরুৎসাহিতকরণ’ থেকে ‘ধ্বংস’ নীতিতে চলে যায়। ফলে আইএএফ-এর যুদ্ধবিমানগুলোকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শত্রু লক্ষ্যবস্তু এড়িয়ে চলতে হয়েছিল, যা সাধারণত যেকোনো অভিযানে আকাশে আধিপত্য কায়েমের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আঘাত করা হয়।

এই কৌশলগত অসুবিধা বুঝতে পেরে, ভারতীয় সামরিক নেতৃত্ব দ্রুত কৌশল বদলায়। কয়েক দিনের মধ্যেই আইএএফ তাদের পরিকল্পনা সংশোধন করে, যাতে ১০ মে’র অভিযানে ব্রহ্মসসহ অন্যান্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়।

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ক্যাপ্টেন কুমারের বক্তব্যকে ‘প্রসঙ্গ থেকে আলাদা করে প্রচার করা হয়েছে।’ দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সেই সেমিনারে আমাদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখেছি। তাঁর বক্তব্যকে প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সংবাদ প্রতিবেদনগুলো মূল বক্তব্যের অভিপ্রায় ও গুরুত্ব বিকৃত করেছে।’

উক্ত উপস্থাপনায় ব্যাখ্যা করা হয়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মতো নয়; তারা বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীন কাজ করে। এ ছাড়াও পরিষ্কার করে বলা হয়েছিল, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো ধ্বংস করা এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল সংঘাত বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যবিহীন, অর্থাৎ এটি ছিল একটি অ-উসকানিমূলক প্রতিক্রিয়া।

এদিকে, শিব কুমারের এই বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে বিরোধী দল কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমান হারানোর বিষয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। দলটি বলেছে, বিজেপি সরকার জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছে, যে কারণে তারা সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশনের বিরোধী দলের দাবি গ্রহণ করেনি।

কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেছেন, ‘ক্যাপ্টেন শিব কুমারের আরেকটি চমকপ্রদ প্রকাশে জানা গেছে যে ৭ মে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করার সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিমান হারিয়েছিল “শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতার কারণে”।’ তিনি বলেন, ‘ক্যাপ্টেন কুমারের এই প্রকাশ মোদি সরকারের সরাসরি অভিযোগ।’

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘প্রথমে সিডিএস সিঙ্গাপুরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ইন্দোনেশিয়া থেকে একই ধারা অনুসরণ করেন। কিন্তু কেন প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বদলীয় বৈঠকের সভাপতিত্ব করতে এবং বিরোধী দলগুলোকে আস্থায় নিতে অস্বীকার করছেন? কেন সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশনের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত