Ajker Patrika

ওড়ার পরই আছড়ে পড়ল ভারতের উড়োজাহাজ

  • ২৪২ আরোহীর ২৪১ জনই নিহত, আহত ১।
  • আরোহীদের মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিক ৫৩ জন।
  • ওড়ার ৩২ সেকেন্ড পরই বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ২৩: ১৪
সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। গতকাল ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে। 	ছবি: এএফপি
সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। গতকাল ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে। ছবি: এএফপি

‘মে ডে’ সংকেত পাঠানোর পরপরই রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন; এরপরই আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ল উড়োজাহাজটি। গতকাল বৃহস্পতিবার এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাছে আবাসিক এলাকায়। এতে প্রাণ হারিয়েছেন বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রী।

গতকাল বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন পাইলট ও ১০ জন কেবিন ক্রু। যাত্রীদের মধ্যে ভারতীয় ১৬৯, ব্রিটিশ ৫৩, কানাডীয় ১ এবং পর্তুগালের ৭ জন নাগরিক ছিলেন। গতকাল এ দুর্ঘটনার পর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, উড়োজাহাজের সবাই মারা গেছেন। তবে রাতে ওই বার্তা সংশোধন করে জানানো হয়, আসলে সবাই নন, ১ জন বেঁচে গেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর ওই ব্যক্তির নাম বলা হয় বিশ্বকুমার রমেশ।

১১-এ আসনের ওই যাত্রী হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর চিকিৎসা চলছে।

যেভাবে ঘটে দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর এলাকাটি ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। জরুরি সেবা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং দুই ডজনের বেশি অ্যাম্বুলেন্স সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। ফ্লাইট রাডারের তথ্য অনুযায়ী, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা ওপরের দিকে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং দ্রুত নিচে নেমে আসে। এরপরই উড়োজাহাজটি বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ আগুনে পরিণত হয়। দুর্ঘটনার আগে পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল বিমান নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি ‘মে ডে’ সংকেত পাঠান। ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়ার আগমুহূর্তে পাইলট এই বিপৎসংকেত পাঠান। দুর্ঘটনার আগে উড়োজাহাজটি ৬২৫ ফুট ওপরে উঠেছিল। উড্ডয়নের ৩২ সেকেন্ড পর এটি বিধ্বস্ত হয়।

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজটি যে ভবনের ওপর আছড়ে পড়েছে, সেই ভবনে চিকিৎসক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। ওই ভবনে থাকা ৬ মেডিকেল শিক্ষার্থী মারা গেছেন। জনাকীর্ণ ওই এলাকা থেকে এএফপির সাংবাদিক জানিয়েছেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হচ্ছে।

লাশ চেনা যাচ্ছে না

এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই সেখানে আগুন ধরে যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন জীবন বাঁচাতে। সেখানকার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘আমরা দেখেছি, যে ভবনের ওপর উড়োজাহাজের অংশবিশেষ পড়েছে, সেই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা থেকে অনেকে ঝাঁপ দিয়েছেন।’

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা পুনম পাটনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, অনেক লাশ পড়ে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখান আগুন নেভাতে কাজ করছেন। অনেক লাশ সেখানে পাওয়া গেছে, যেগুলো পুড়ে গেছে।’

কলকাতার গণমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, গতকালের বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশের লাশই চেনা যাচ্ছে না। দ্রুত তা শনাক্ত করার জন্য পরিবারের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা চাইছে গুজরাট প্রশাসন। আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিএনএ নমুনা দিতে বলা হয়েছে। তবেই দেহ শনাক্তকরণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। গতকাল এমনটিই জানিয়েছেন গুজরাটের স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী মুখ্য সচিব ধনঞ্জয় দ্বিবেদী। বিমানের যাত্রীদের সম্পর্কে খোঁজখবর করার জন্য দুটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে।

ডিএনএ নমুনার কথা জানিয়ে ধনঞ্জয় বলেন, ‘যাঁদের আত্মীয়, নিকটজনেরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে ছিলেন, তাঁদের অনুরোধ করা হচ্ছে, বিজে মেডিকেল কলেজে এসে ডিএনএ নমুনা দিয়ে যান, যাতে মৃতদেহগুলো দ্রুত শনাক্ত করা যায়।’ এ ছাড়া, বিমানে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে কারও কিছু জানার থাকলে দুটি হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে, সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। যাত্রীদের আত্মীয়দের অপেক্ষা করার জন্য মেডিকেল কলেজের একটি ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।

শোক ও সমবেদনা

এদিকে দুর্ঘটনার পর শোক জ্ঞাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা এই উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে একটি দল পাঠাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় শোক জ্ঞাপন করেছেন। এ ছাড়া তিনি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সার্বক্ষণিক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

এদিকে আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১ কোটি রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে টাটা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরণ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার খরচও বহন করবে টাটা গ্রুপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত