Ajker Patrika

ভারতের ‘স্বাধীন’ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের ‘স্বাধীন’ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠছে

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের অন্যতম বিশ্বস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে পড়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কমিশনকে বিরোধীদের একের পর এক অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে আছে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও ভোটার তালিকায় অসংগতি।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে কমিশন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বড় আকারে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির বিরোধী দলগুলোর নেতারা।

এই নেতারা জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে অপসারণের জন্য অভিশংসন প্রস্তাব আনার কথা ভাবছে তারা। তবে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের শেষ দিন অর্থাৎ, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা এই প্রস্তাব জমা দেয়নি। তাদের হাতে সেই প্রস্তাব পাস করানোর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বিহার রাজ্যে ১৬ দিনের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছেন। এ সময় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন তিনি ও তাঁর দল। একে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের নাটকীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ বছরের শেষে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সম্প্রতি রাজ্যটিতে বড় ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

রাহুল গান্ধী প্রথমবার ভোট চুরির অভিযোগ আনেন গত আগস্ট মাসে। তিনি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে যোগসাজশে নির্বাচন কমিশনকে কারচুপির জন্য অভিযুক্ত করেন।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব রেকর্ডের সূক্ষ্ম তথ্য ব্যবহার করে রাহুল অভিযোগ করেন, দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকের একটি নির্বাচনী এলাকায় ১ লাখের বেশি জাল ভোটার রয়েছে, যার মধ্যে নকল ভোটার, ভুল ঠিকানা এবং একই জায়গায় একাধিক ভোটারের নাম নিবন্ধন করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বারবার তাঁর এই দাবিগুলোকে ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছে। বিজেপিও এই অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলো এই ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ করছে, কারণ তারা বিহারে পরাজয়ের আশঙ্কা করছে।

বিবিসি জানিয়েছে, স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) গত জুন ও জুলাই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। নির্বাচন কমিশন জানায়, এই প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিনিধিরা বিহারের মোট ৭ দশমিক ৮৯ কোটি ভোটারের সবার বাড়িতে গিয়ে যাচাই-বাছাই করেন।

নির্বাচন কমিশন বলছে, ২০ বছরের বেশি সময় পর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য এটি করা হয়েছিল।

কিন্তু বিরোধী দলের নেতাদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে এবং এর জন্য যে প্রমাণপত্র দরকার ছিল, তা অনেক জটিল ছিল। তাই হাজার হাজার মানুষের, বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকদের নাম বাদ পড়ে গেছে, যা তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।

গত ১ আগস্ট হালনাগাদ করা তালিকার একটি খসড়া প্রকাশের পর বিবিসিসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সেই গণনায় ত্রুটি তুলে ধরে। তারা দেখায়, তালিকায় মানুষের নামের পাশে ভুল লিঙ্গ ও ছবি রয়েছে এবং মৃত ভোটারদের নামও তালিকায় রয়ে গেছে।

নতুন খসড়া তালিকায় ৭ দশমিক ২৪ কোটি নাম রয়েছে, যা আগের চেয়ে ৬ দশমিক ৫ কোটি কম।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বাদ পড়া নামগুলোর মধ্যে নকল, মৃত এবং অভিবাসী ভোটাররা রয়েছেন। যাঁদের নাম ভুলভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন, তাঁরা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পেয়েছেন।

তবে নির্বাচন কমিশন ৬ দশমিক ৫ কোটি বাদ পড়া মানুষের নামের তালিকা যেভাবে প্রকাশ করেছে, তা নিয়েও সমালোচনা তীব্র হয়েছে।

বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলেছে, কেন কমিশন বাদ পড়া ভোটারদের এমন তালিকা দিয়েছে, যা স্ক্যান করা শারীরিক প্রতিলিপি, যা কম্পিউটার দিয়ে পড়া বা অনুসন্ধান করা যায় না। এর বদলে কেন মেশিন-রিডেবল তালিকা দেওয়া হয়নি, যা বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারত।

পরবর্তীতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বাদ পড়া ভোটারদের একটি অনুসন্ধানযোগ্য তালিকা প্রকাশ করতে এবং তাদের বাদ পড়ার কারণ জানাতে নির্দেশ দেয়।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুর একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়, আদালতের এই হস্তক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের ‘প্রক্রিয়াগত ব্যর্থতা’ তুলে ধরেছে এবং এটিকে ‘কড়া বার্তা’ হিসেবে দেখা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত