Ajker Patrika

তৃণমূলের মঞ্চ ভেঙেছে সেনারা, পরদিন সেনাবাহিনীর ট্রাক আটকাল কলকাতা পুলিশ

কলকাতা প্রতিনিধি  
মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক আটকে দেয় পুলিশ। ছবি: স্ক্রিনশট
মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক আটকে দেয় পুলিশ। ছবি: স্ক্রিনশট

কলকাতার বিবাদী বাগে এক নজিরবিহীন ঘটনায় শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক জব্দ করেছে কলকাতা পুলিশ। এই প্রশাসনিক পদক্ষেপটি দ্রুত রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই ঘটনা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

আজ মঙ্গলবার সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের ১৫৫ পাসপোর্ট অফিসের দিকে যাচ্ছিল সেনাবাহিনীর একটি মালবাহী ট্রাক। পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের জনবহুল রাস্তায় ট্রাকটি বিপজ্জনকভাবে চলছিল এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারত। ঘটনার সময় ঠিক ওই পথেই ছিলেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এবং তাঁর কনভয়ের ঠিক পেছনেই ছিল এই সেনাবাহিনীর ট্রাকটি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশ দ্রুত ট্রাকটি থামিয়ে দেয় এবং এটিকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যায়।

এই ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এর আগের দিন, গতকাল সোমবার, মেয়ো রোডে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদের ওপর হেনস্থা এবং তাঁদের ‘অবৈধ নাগরিক’ আখ্যা দেওয়ার প্রতিবাদে একটি মঞ্চ তৈরি করেছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেই মঞ্চটি ভেঙে দেওয়া হয়, যার ফলে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। আজকের এই ট্রাক আটকানোর ঘটনাটিকে সেই উত্তেজনারই সরাসরি ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের অবনতির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

সেনা এবং পুলিশ—দুই পক্ষের মধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে বিপরীতধর্মী বক্তব্য উঠে এসেছে। কলকাতা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যেকোনো বাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনীও যদি নির্দিষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন করে এবং জনবহুল শহরে নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তবে পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য।’

অন্যদিকে, সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ট্রাকের মধ্যে থাকা দুই সেনা কর্মকর্তা পাসপোর্ট অফিসে একটি জরুরি কাজে যাচ্ছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশের আচরণ ছিল অতিমাত্রায় কঠোর এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়।

এই ঘটনা দেশের নাগরিক সমাজের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি এক নতুন উত্তেজনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আজকের এই প্রশাসনিক পদক্ষেপটি গতকালের রাজনৈতিক মঞ্চ ভাঙার ঘটনার সঙ্গে মিলেমিশে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের চূড়ান্ত সূচনা করছে। সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে, কারণ এ ধরনের সংঘাত শহরের স্বাভাবিক জনজীবন এবং যান চলাচলে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। উভয় বাহিনীই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তা কঠিন হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যোগাযোগ করছেন। তবে শহরের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক চাপ এবং জনজীবনের স্বাভাবিকতা—এই তিনটির মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে

পাকিস্তানকে সমর্থন করায় ভারত এসসিওর সদস্যপদ আটকে দেয়: আজারবাইজান

সোনার দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে

দেশে চালু হলো ৫-জি নেটওয়ার্ক, কী কী সুবিধা মিলবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত