Ajker Patrika

রাহুলের দ্বারস্থ মতুয়ারা, বাংলার ভোটের আগে অশনিসংকেত বিজেপিতে

কলকাতা প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ৫৮
গত ৩০ আগস্ট বিহারের সারন জেলার একমা এলাকায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মতুয়া সমাজের প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত
গত ৩০ আগস্ট বিহারের সারন জেলার একমা এলাকায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মতুয়া সমাজের প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত

ভোটার তালিকার বিশেষ পর্যালোচনা বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তার আঁচ এখন মতুয়া সমাজের ভেতরেও প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গত ৩০ আগস্ট বিহারের সারন জেলার একমা এলাকায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মতুয়া সমাজের প্রতিনিধিদলের বৈঠক রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে।

২৪ সদস্যের এ প্রতিনিধিদল রাহুলের সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিট আলোচনা করে এবং তাঁকে জানায়, এসআইআরের কারণে ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা প্রত্যাশা করে, কংগ্রেস এ বিষয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে। বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য জানান, রাহুল তাঁদের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং ভবিষ্যতে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে, এ সাক্ষাৎ কেবল মতুয়াদের জন্য নয়, বিজেপির ভোট সমীকরণেও বড়সড় ধাক্কার ইঙ্গিত বহন করছে। কারণ, মতুয়ারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ফ্যাক্টর, বিশেষ করে, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়ার মতো জেলায় তাঁদের ভোট যেকোনো দলকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বিজেপি ইতিমধ্যে মতুয়া ভোটব্যাংক ধরে রাখতে শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মতুয়াদের আস্থায় তা সেভাবে কাজে আসছে না। এর ওপর এসআইআরের আতঙ্ক ও সিএএর প্রতিশ্রুতির দীর্ঘসূত্রতা মিলিয়ে মতুয়া মহলে হতাশা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি আরও বিব্রতকর হয়ে ওঠে যখন রাহুলের বৈঠকে স্থানীয় বিজেপি নেতা তপন হালদারকে দেখা যায়। পরে বিজেপি তাঁকে শোকজ নোটিশ দিলেও প্রশ্ন থেকে যায়, মতুয়া রাজনীতির ভেতরকার অসন্তোষ বিজেপির জন্য কতটা অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটের সময় সিএএ ও নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশ্বাস দেখানো হলেও পরে তা কার্যকর না হওয়ায় মতুয়ারা ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একই সঙ্গে এসআইআর নিয়ে অনিশ্চয়তা তাঁদের আতঙ্ক আরও বাড়াচ্ছে। ফলে তাঁরা বিকল্প রাজনৈতিক আশ্রয়ের সন্ধান করছেন এবং রাহুল গান্ধীর দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনা এর প্রমাণ। আর ঠিক এ মুহূর্তেই যখন এক বছরের মাথায় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, তখন মতুয়া ভোটে ভাঙন যে বিজেপির পক্ষে অশনিসংকেত, তা নিয়ে সংশয় নেই।

কংগ্রেস এ সুযোগে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে এবং যদি মতুয়া সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে বিজেপির জন্য তা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দীর্ঘদিনের অসন্তোষ বিজেপিকে যে চাপে ফেলছে, এ বৈঠক তারই প্রতিফলন এবং নির্বাচনের আগে এ প্রবণতা যদি আরও বাড়ে, তবে বাংলার সমীকরণ আমূল বদলে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত