Ajker Patrika

অবশেষে পাকিস্তানে হামলা করে যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করল ভারত

অনলাইন ডেস্ক
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। ছবি: এএনআই
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। ছবি: এএনআই

অপারেশন সিঁদুরের প্রায় তিন সপ্তাহ পর ভারত এই প্রথম স্বীকার করেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের ‘নির্দিষ্টসংখ্যক’ যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। তবে ঠিক কয়টি বা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু জানায়নি ভারত। চার দিনের এই সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধের কাছাকাছি যায়নি বলেও দাবি করে তারা। শনিবার (৩১ মে) সাংগ্রি-লা ডায়ালগে অংশ নিতে গিয়ে সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান।

জেনারেল চৌহান বলেন, ‘যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়াটা বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সেগুলো কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল।’ তিনি পাকিস্তানের ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবিকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে আখ্যা দেন। তবে ভারত কতটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।

যুদ্ধবিমানগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেনারেল চৌহান বলেন, ‘সেগুলো কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল, কী কী টেকনিক্যাল ভুল হয়েছিল—সেগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ জেনারেল চৌহান বলেন, ‘ভালো খবর হলো, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি। সেগুলো শুধরে নিয়ে দুই দিন পরে আবার আক্রমণ করেছি।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়ে এটিই প্রথম কোনো সরকারি বা সামরিক কর্মকর্তার বক্তব্য। এর আগে চলতি মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেছিলেন, তাঁরা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছেন, যদিও তাঁর এই দাবি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর আগে ভারতও সাম্প্রতিক এই সংঘাতে তাদের যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল।

এই সংঘাত ছিল পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনা। উভয় পক্ষ আকাশ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, পাশাপাশি তাদের সীমান্ত বরাবর কামান ও ছোট অস্ত্রের গোলাবর্ষণও হয়েছিল। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে গত ২২ এপ্রিল একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই সংঘাত শুরু হয়। হামলায় সন্ত্রাসীরা ২৬ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে। ভারত এটিকে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী হামলা বলে দাবি করে। তবে ইসলামাবাদ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ব্লুমবার্গ টিভির সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি মন্তব্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। গত ১০ মে যুদ্ধবিরতির কথা তিনিই প্রথম জানান এবং দাবি করেন, তাঁর কথাতেই পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং একটি পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে জেনারেল চৌহান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, উভয় পক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কাছাকাছি ছিল, এমনটা বলা ‘খুবই বাড়াবাড়ি’।

জেনারেল চৌহান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রচলিত সামরিক অভিযান ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে অনেক তফাত আছে।’ তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের পথ ‘সব সময় খোলা ছিল’। তিনি আরও বলেন, উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই ‘আরও অনেক ছোট ছোট উপায় ছিল, যা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজে লাগানো যেত’।

চীন এবং অন্য কয়েকটি দেশ পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দিয়েছিল কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেনারেল চৌহান বলেন, দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো কোনো ‘কাজে আসেনি’। ভারতীয় সামরিক প্রধান বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের ৩০০ কিলোমিটার ভেতরে থাকা সুরক্ষিত বিমানঘাঁটিতে নির্ভুলভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছি। বিদেশ থেকে পাওয়া প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও আমাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেনি।’

সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তান এই সংঘাত সম্পর্কে বৈশ্বিক ধারণা প্রভাবিত করতে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। জেনারেল চৌহান বলেন, যুদ্ধবিরতি বজায় আছে এবং এর ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করবে। আমরা তাদের ‘রেড লাইন’ এঁকে দিয়েছি। এর নড়চড় হলে আবারও অভিযান চালানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত