Ajker Patrika

রূপপুর প্রকল্পে আত্মসাতের অর্থে লন্ডনে বাড়ি কিনেছেন টিউলিপ, দুদকের বরাতে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৪৯
টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত
টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের সাবেক নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর মা ও খালার যোগসাজশে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে তহবিল তছরুপ করে সেই অর্থ দিয়ে লন্ডনে বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক, তাঁর খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা রুশ অর্থায়নে নির্মিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। সেই আত্মসাৎ করা অর্থের একটি অংশ ৭ লাখ পাউন্ড ব্যবহার করে টিউলিপ লন্ডনে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত শেষে জানান, টিউলিপ সিদ্দিক অনিচ্ছাকৃতভাবে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এরপর তিনি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ট্রেজারি মন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্বের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে কয়েক সপ্তাহজুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের পর তিনি নিজেই বিষয়গুলো তদন্তের জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, লন্ডনে তিনি যেসব বাড়ি বা ফ্ল্যাট এবং অন্যান্য সম্পত্তি ব্যবহার করেন, সেগুলো বাংলাদেশে তাঁর খালা হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ৭৭ বছর বয়সী হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার এবং গোপনে আটক রাখার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার লুটপাট করেছেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে রুশ অর্থায়নে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে।

তদন্তের সর্বশেষ আপডেটে দুদক জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তারা জানতে পেরেছে, লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট টিউলিপ সিদ্দিক পেয়েছেন। দুদকের অনুমান, এটি বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করা অর্থে কেনা হতে পারে।

তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, এই অবৈধ অর্থ মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে লন্ডনে হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের জন্য উচ্চমূল্যের সম্পত্তি কেনার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘গোপন অনুসন্ধানে এসব অভিযোগ সত্য বলে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা প্রকাশ্য তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে যে, তিনি বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচার ও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’ সূত্রটি আরও বলেছে, ‘অফশোর ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রেও টিউলিপের নাম উঠে এসেছে, যা অবৈধ অর্থের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’

দুদক জানিয়েছে, শুধু টিউলিপ সিদ্দিকই নন, তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও লন্ডনে বিভিন্ন বাড়ি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন, যার মধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং উত্তর লন্ডনে ১৫ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড মূল্যের একটি বাড়ি উল্লেখযোগ্য।

তদন্তকারীদের দাবি, এসব লেনদেন আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং চক্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ এখন এই সম্পদের প্রকৃত অর্থের উৎস তদন্ত করছে। তবে এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে, এগুলো সেই একই সম্পত্তি কিনা, যা যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের নৈতিকতা উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করেছিলেন।

লেবার পার্টির সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ সালে এক ব্যবসায়ী টিউলিপ সিদ্দিককে যে ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন, সেটির বর্তমান মূল্য ৭ লাখ পাউন্ড। কিন্তু এটি রূপপুর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না, কারণ রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালে।

টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘এ ক্ষেত্রে সময়সীমা মিলছে না। টিউলিপ সিদ্দিকের বিদেশে কোনো সম্পত্তি বা ব্যাংক হিসাব নেই।’ স্যার লরি ম্যাগনাসও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।’

শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে দুদক জানিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং টিউলিপসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা সরকারি তহবিলের অপব্যবহার থেকে লাভবান হয়েছেন।

এর আগে, ২০১৩ সালে মস্কোতে এক বৈঠকে হাসিনার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছিল টিউলিপকে। ওই বৈঠকেই রাশিয়া বাংলাদেশে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়।

দুদক অভিযোগ করেছে, ‘টিউলিপ সিদ্দিক এই চুক্তি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন এবং তাঁর পরিবার প্রকল্প থেকে £৩.৯ বিলিয়ন আত্মসাৎ করেছে।’ দুদক আরও জানিয়েছে, তারা অন্যান্য বড় অবকাঠামো প্রকল্পেও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশি ব্যাংক হিসাবে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিককে এই বিষয়ে এখনো কোনো নোটিশ পাঠানো হয়নি এবং তিনি এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয়কে অপহরণের পর সুদানের অপহরণকারীদের প্রশ্ন—তুমি কি শাহরুখ খানকে চেনো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অপহরণকারীদের মাঝখানে অপহৃত ভারতীয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া (এনডিটিভি)
অপহরণকারীদের মাঝখানে অপহৃত ভারতীয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া (এনডিটিভি)

সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে বিপদে পড়েছেন এক ভারতীয়। ওডিশার জগতসিংহপুর জেলার বাসিন্দা আদর্শ বেহেরা নামের ওই ব্যক্তিকে সুদানের ভয়ংকর মিলিশিয়া গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ৩৬ বছর বয়সী বেহেরা দুজন সশস্ত্র আরএসএফ যোদ্ধার মাঝে বসে আছেন। তাঁদের একজন তাঁকে প্রশ্ন করছেন, ‘তুমি কি শাহরুখ খানকে চেনো?’ অন্যজন তাঁকে নির্দেশ দেন, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ‘দাগালো গুড’ বলার জন্য। এই শব্দযুগলের মাধ্যমে মূলত মিলিশিয়া নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে ‘হেমেতি’-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয়।

সূত্র জানায়, বেহেরাকে উত্তর দারফুরের আল ফাশির শহর থেকে অপহরণ করা হয়েছে। রাজধানী খার্তুম থেকে ওই অঞ্চলটি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে দক্ষিণ দারফুরের রাজধানী নিয়ালা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা আরএসএফের একটি ঘাঁটি।

বেহেরার পরিবার জানিয়েছে, তিনি ২০২২ সাল থেকে সুকারাতি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তাঁর স্ত্রী সুষ্মিতা বেহেরা এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমাদের দুই ছেলে, একজন আট বছর, আরেকজন তিন। আমরা শুধু চাই, ও যেন নিরাপদে ফিরে আসে।’

পরিবারের পাঠানো আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আদর্শ বেহেরা হাত জোড় করে অনুরোধ করছেন, ‘আমি আল ফাশিরে আছি, এখানে পরিস্থিতি খুব খারাপ। আমি দুই বছর ধরে অনেক কষ্টে আছি। আমার পরিবার ও বাচ্চারা খুব চিন্তিত। আমি ওডিশা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমাকে সাহায্য করুন।’

গত ১৮ মাসের অবরোধের পর উট ও টয়োটা গাড়িতে চড়ে আরএসএফ যোদ্ধারা সম্প্রতি আল ফাশির শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সতর্ক করেছে—ওই অঞ্চলে আরএসএফের গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

ভারতে নিযুক্ত সুদানের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ আবদাল্লা আলি এলতোম এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘আল ফাশির বর্তমানে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আমরা আশা করছি, আদর্শ বেহেরাকে যেন কোনো ক্ষতি করা না হয়। পরিস্থিতি অনিশ্চিত হলেও আমরা তাঁর নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের আশায় আছি।’

সুদানে ২০২৩ সাল থেকে সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আরএসএফের সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আদর্শ বেহেরার অপহরণ সেই ভয়াবহ সংঘাতেরই নতুন করুণ অধ্যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুপেয় পানির সংকটে ইরানের রাজধানী তেহরান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাজধানী তেহরানের অন্যতম প্রধান পানির উৎস আমির কবির বাঁধে বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি রয়েছে। ছবি: এএফপি
রাজধানী তেহরানের অন্যতম প্রধান পানির উৎস আমির কবির বাঁধে বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি রয়েছে। ছবি: এএফপি

ইরানের রাজধানী তেহরানে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সুপেয় পানির উৎস শুকিয়ে যেতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। টানা খরার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

গতকাল রোববার দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানায়, রাজধানীর অন্যতম প্রধান পাঁচটি পানির উৎসের মধ্যে আমির কবির বাঁধ একটি। বর্তমানে আমির কবির বাঁধে মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি রয়েছে, যা বাঁধটির ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ। তেহরান পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বেহজাদ পারসা জানান, এই পরিমাণ পানি রাজধানীতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সরবরাহ করা যাবে। এরপর আর কোনো পানির উৎস থাকবে না।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি এখন তেহরান ও এর আশপাশের অঞ্চল। গত মাসে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এ বছর প্রদেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ‘গত এক শতাব্দীর মধ্যে নজিরবিহীনভাবে’ কম।

১ কোটির বেশি মানুষের এই নগরী আলবুর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। ৫ হাজার ৬০০ মিটার উঁচু এসব তুষারাচ্ছন্ন পর্বত থেকে গড়িয়ে আসা নদীগুলোই রাজধানীর পাঁচটি প্রধান জলাধারে পানি সরবরাহ করে।

এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল বলে জানান পারসা। কিন্তু এ বছর তেহরানে কোনো বৃষ্টিপাত নেই, ফলে পানির মজুত কমে গেছে। তবে তিনি অন্যান্য জলাধারের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

ইরানি গণমাধ্যমগুলো জানায়, তেহরানের মানুষ প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানি ব্যবহার করে। পানি সাশ্রয়ের জন্য ইতিমধ্যে কয়েকটি এলাকার সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এর আগেও কিছু শহরে সাময়িকভাবে পানির সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

গত জুলাই ও আগস্ট মাসে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। ওই সময় তীব্র দাবদাহে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পৌঁছায় এবং কিছু এলাকায় ৫০ ডিগ্রির বেশি হয়।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সে সময় বলেছিলেন, ‘আমাদের পানির সংকট আসলে যতটা বলা হচ্ছে তারচেয়ে বেশি গুরুতর।’

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে পানির সংকট আরও প্রকট। খরা ছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এ সংকট বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এর সঙ্গে যুক্ত।

এদিকে ইরানের প্রতিবেশী ইরাকও ১৯৯৩ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে। দেশটির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানির স্তর ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এর কারণ কম বৃষ্টিপাত ও উজানে পানির প্রবাহে বাধা। এতে ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে গুরুতর মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিপ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছে চীন: হোয়াইট হাউস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস এই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করে। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস এই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করে। ছবি: এএফপি

গাড়ি তৈরিতে অপরিহার্য কম্পিউটার চিপ রপ্তানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা চীন ধীরে ধীরে শিথিল করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে হওয়া বাণিজ্য চুক্তির অংশ বলে জানানো হয়েছে।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস এই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করে।

চুক্তিতে গাড়ির চিপ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন রপ্তানি, বিরল খনিজ পদার্থের সরবরাহ ও ফেন্টানিল নামের মাদক তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের বাণিজ্য নিয়েও সমঝোতা হয়।

বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর চীনের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন, যার জেরে পাল্টা শুল্ক ও বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, সেসবের বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক মূলত পারস্পরিকভাবে লাভজনক। প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং যেমন বলেছেন—দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হওয়া উচিত তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের নোঙর ও চালিকাশক্তি; কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।

গত শনিবার হোয়াইট হাউস প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য কর্মকর্তারা মূল চুক্তির বিষয়গুলো ঘোষণা করেন।

ওই বৈঠককে ‘অসাধারণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে বেইজিং বলছে, এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ইস্যু সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিমের সাক্ষাৎ চান জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৭
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ছবি: সংগৃহীত
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান তিনি।

গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কোনো জাপানি নেতাকে এমনটা চাইতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে সিএনএন।

আজ সোমবার এক সমাবেশে তাকাইচি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়াকে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছি, আমরা শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করতে চাই।’

উত্তর কোরিয়া কয়েক দশক আগে জাপানের যে নাগরিকদের অপহরণ করেছিল, তাদের ফেরানোর দাবিতে সমাবেশটি আয়োজন করা হয়।

অপহরণের এ ঘটনা বহুদিন ধরে এক অনিষ্পন্ন ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে, যাদের সম্পর্কের ইতিহাস উপনিবেশবাদ ও সংঘাতে পরিপূর্ণ।

তাকাইচি বলেন, ‘আমি চাই, দুই দেশের নেতা সরাসরি মুখোমুখি হোক এবং বাস্তবসম্মত ফলাফল অর্জন করুক। আমার দায়িত্বকালেই আমি অপহরণসংক্রান্ত এ সমস্যার সমাধান করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

জাপানের দাবি, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে অন্তত ১৭ জন জাপানি নাগরিককে উত্তর কোরিয়ার এজেন্টরা অপহরণ করেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে ২০০২ সালে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অপহরণ ছিল উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচরবৃত্তি কর্মসূচির অংশ।

তবে পিয়ংইয়ং এ সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত জানিয়ে দাবি করে, কয়েকজন দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে বা আত্মহত্যায় মারা গেছেন। তাদের মতে, বিষয়টি এরই মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার এই দাবি অবশ্য নিখোঁজ ব্যক্তিদের (যাঁদের কেউ কেউ কিশোর বয়সে অপহৃত হন) পরিবারগুলোকে স্বস্তি দিতে পারেনি। তারা বহু বছর ধরে জাপানের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে এই ইস্যুতে চাপ অব্যাহত রেখেছে। তবে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল ২০০২ সালে। সে বছর তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি পিয়ংইয়ং সফর করেন এবং কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের সঙ্গে দেখা করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেটিই ছিল প্রথম কোনো জাপানি প্রধানমন্ত্রীর উত্তর কোরিয়া সফর।

সে বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকারের পর প্রথম উত্তর কোরিয়া স্বীকার করেছিল, তারা অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল। কিম জং ইল তখন ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং জানান, যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত