Ajker Patrika

ট্রাম্পের স্টাইলে অভিবাসী ধরতে যুক্তরাজ্যে ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলোতে ব্যাপক অভিযান

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৪৪
অবৈধ অভিবাসীদের ধরে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
অবৈধ অভিবাসীদের ধরে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করেছেন। মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকা ও ভারতীদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সরকারও একই স্টাইলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবৈধ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। ‘যুক্তরাজ্যজুড়ে ব্লিটজ’ শীর্ষক এই কঠোর পদক্ষেপ ভারতীয় রেস্তোরাঁ, নেইল বার, কনভেনিয়েন্স স্টোর এবং গাড়ি ধোয়ার স্থানগুলোতে পরিচালিত হয়েছে। এসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার নিজেই এই অভিযান তদারকি করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত জানুয়ারিতে রেকর্ড-সংখ্যক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ৮২৮টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ধরনের অভিযানের সংখ্যা আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৯–এ, যা গত বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি।

ইভেট কুপারের দপ্তর জানিয়েছে, যদিও আইনশৃঙ্খলা রখক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন খাতে অবৈধ কর্মসংস্থানের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে, তবে গত মাসে অভিযানে রেস্তোরাঁ, টেকঅ্যাওয়ে, ক্যাফে এবং খাদ্য, পানীয় ও তামাকশিল্পে নজর দেওয়া হয়। শুধু উত্তর ইংল্যান্ডের হাম্বারসাইডে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় চালানো অভিযানে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং চারজনকে আটক করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কুপার বলেছেন, ‘অভিবাসন নিয়মকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। অনেক দিন ধরে নিয়োগকর্তারা অবৈধ অভিবাসীদের কাজে নিয়োগ করছেন এবং তাঁদের শোষণ করে আসছেন। অনেক মানুষ কোনো ধরনের নথিপত্র ছাড়া বিনা বাধায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে কাজ করছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি (সরকারি নজরদারি এড়িয়ে কাজের সুযোগ) শুধু মানুষকে ছোট নৌকায় করে (ইংলিশ) চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করে না, বরং এটি দুর্বল ব্যক্তিদের শোষণ, অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার এবং আমাদের অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হয়।’

এদিকে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন খাত, বিশেষ করে অভিবাসন নীতিতে সংস্কারের দাবি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাঁর সরকারকে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। তাঁর সরকার ‘অভিবাসন অপরাধীদের’ বহিষ্কারের জন্য বিশেষ চার্টার ফ্লাইট ব্যবহার করছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে চারটি বৃহত্তম অভিবাসন প্রত্যাবাসন ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে, এসব ফ্লাইটের মাধ্যমে ৮০০ জনের বেশি মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

‘শো, নট টেল’ (কথা নয়, কাজে প্রমাণ দাও) কৌশলের অংশ হিসেবে, স্টারমার সরকার ট্রাম্পের স্টাইলে অভিবাসন বিরোধী অভিযানের টিভি ফুটেজ প্রকাশ করছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বহিষ্কারের জন্য পুরুষদের একটি বাস থেকে নামিয়ে চার্টার বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে মাদক অপরাধী, চুরি, ধর্ষণ এবং খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিটেন সরকার প্রথমবারের মতো অভিবাসীদের বহিষ্কারের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে হাতকড়া পরা এক ব্যক্তিকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীরা সদস্যরা নিয়ে যাচ্ছেন। লেবার সরকার জানিয়েছে, তাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রায় ১৯ হাজার বিদেশি অপরাধী ও অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের বিষয়ে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নতুন আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান চালু করেছি। ডিসেম্বর থেকে ভিয়েতনামে এবং জানুয়ারিতে আলবেনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন চালু করা হয়েছে, যেখানে বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়েছে—যেখানে দেখা গেছে যে, অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারীরা ঋণের বোঝা, শোষণ এবং প্রতিশ্রুত জীবনের চেয়ে অনেক খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ জুলাই থেকে এই বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অবৈধ কর্মসংস্থান ও গ্রেপ্তার প্রায় ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে ১ হাজার ৯০টি নাগরিক শাস্তিমূলক নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে, যেখানে দোষী প্রমাণিত নিয়োগকর্তাদের কর্মীপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

হোম অফিসের এনফোর্সমেন্ট, কমপ্লায়েন্স ও ক্রাইম ডিরেক্টর এডি মন্টগোমারি বলেন, ‘এই সংখ্যাগুলো প্রমাণ করে যে আমার দল কঠোর পরিশ্রম করছে যারা আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমি আশা করি এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য কোনো লুকানোর জায়গা নেই এবং আমরা আমাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি যে অবৈধভাবে কাজ করা অনেক মানুষ অত্যন্ত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, তাই আমরা সবচেয়ে দুর্বলদের রক্ষা করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

এই অভিযান এমন এক সময়ে চালানো হচ্ছে যখন লেবার পার্টির সীমান্ত সুরক্ষা, আশ্রয় ও অভিবাসন বিল সংসদে দ্বিতীয়বারের জন্য উত্থাপিত হচ্ছে। এই নতুন আইন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের মতে, ‘সীমান্ত সুরক্ষা দুর্বলকারী অপরাধী চক্রগুলোকে ধ্বংস করার’ জন্য তৈরি করা হয়েছে।

এই বিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কার্যকরভাবে অপরাধী সংগঠনের বিরুদ্ধে আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেবে, যার মধ্যে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে গ্রেপ্তারের আগেই মোবাইল ফোন জব্দ করার অনুমতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি এই বিলকে ‘দুর্বল বিল যা (অভিবাসীবাহী) নৌকাগুলো থামাবে না’ বলে আখ্যায়িত করেছে। সমস্ত অভিবাসীর জন্য স্থায়ী বসবাসের সুযোগ সীমিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত