Ajker Patrika

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ করতে চেয়েছিল সিআইএ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এক সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে ‘এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তবে এসপিওনাজে এজেন্ট বলতে যেমনটা বোঝানো হয়, সিআইএ তাঁকে সেভাবে কাজে লাগাতে চায়নি। বরং, সিআইএ উইনস্টন চার্চিলকে দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নতুন করে প্রকাশিত নথিতে দেখা গেছে, পূর্ব ইউরোপে সিআইএ-সমর্থিত সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও লিবার্টি তৎকালীন সোভিয়েত নাগরিকদের নিজেদের কমিউনিস্ট নেতাদের বিরুদ্ধে উসকে দিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৮ সালে রেডিও স্টেশনটির নিয়ন্ত্রকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে অবস্থিত সিআইএ সদর দপ্তরে জানায়, তারা কার্ল মার্কসের মৃত্যুর ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে সময় রাশিয়ায় ‘সংস্কারপন্থীদের’ উত্থান ঘটছিল। এদের আলোচনা সোভিয়েত মার্কসবাদ-লেনিনবাদের কট্টর কাঠামো থেকে বিপরীতে ছিল অনেকটা।

আমেরিকান গোয়েন্দারা এই সংস্কারপন্থী চিন্তকদের কাজে লাগাতে চেয়েছিল। এরা মস্কোকেন্দ্রিক একক সোভিয়েত ব্লকের ধারণার বিরোধিতা করে স্বাধীন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। রেডিও লিবার্টির অনুষ্ঠানগুলো তৈরি করা হয় ‘নতুন ও অপ্রচলিত রাজনৈতিক চিন্তার পরিবেশকে কাজে লাগাতে’ এবং পশ্চিমা চিন্তাবিদদের তুলে ধরতে, যাতে সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভাবাদর্শকে দুর্বল করা যায়।

সিআইএ—এর তথ্য অধিকার আইনে প্রকাশিত এক ব্রিফ্রিং নোটে দেখা যায়, ১৯৫৮ সালের ১৪ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত সময়জুড়ে একটি বিশেষ প্রচারণা অভিযান পরিচালিত হয়। এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘বিপরীতধর্মী চিন্তাভাবনা উসকে দেওয়া’ এবং ‘মার্কসবাদের মূল ভিত্তি, ইতিহাস পদ্ধতি ও ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে যে কোনো ধরনের মার্কসবাদের ওপর আস্থা নষ্ট করা।’

তৎকালীন সোভিয়েত নাগরিকদের কাছে এটা বোঝা সম্ভব ছিল না যে রেডিও লিবার্টি আসলে সিআইএ অর্থায়িত ও ওয়াশিংটন নিয়ন্ত্রিত একটি মাধ্যম। চার্চিল ছিলেন সেই কয়েকজন ব্রিটিশ ব্যক্তিত্বের একজন, যাদের রেডিও লিবার্টি তাদের সম্প্রচারে অংশগ্রহণের আশা করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

চার্চিল সম্পর্কিত ওই ব্রিফিং নোটে তাঁর সম্ভাব্য সম্প্রচারের বিস্তারিত না থাকলেও উল্লেখ করা আছে, মিউনিখের বিশেষ ইভেন্ট টিম নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের কাছে লিখবে এবং কয়েকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে।’ সেই তালিকায় ছিলেন আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ ব্যক্তি—সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি, আনিউরিন বেভান ও হিউ গেইটস্কেল—যাঁরা ছিলেন যুদ্ধ-পরবর্তী প্রভাবশালী লেবার পার্টির নেতা। পাশাপাশি ছিলেন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী আর্থার কোয়েস্টলার ও আর্নল্ড টয়েনবি।

অন্য দেশ থেকেও কিছু সম্ভাব্য অতিথির নাম ছিল—মার্কিন দার্শনিক সিডনি হুক, রুশ বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ইউজিন লায়ন্স, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট অরিওল এবং অস্ট্রিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর ব্রুনো পিটারম্যান।

রেডিও লিবার্টি নিজেকে উপস্থাপন করত এক ধরনের প্রবাসী রেডিও স্টেশন হিসেবে, যা সোভিয়েত নাগরিকদের বিশ্ব ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিত। ১৯৫১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্টেশনটি গোপনে সিআইএ অর্থায়নে চলেছে এবং পরবর্তীতে ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপ’ এর সঙ্গে একীভূত হয়, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট স্টেট বা রাষ্ট্রগুলোকে লক্ষ্য করে কাজ করত। বর্তমানে স্টেশনটি এখনো সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থেই পরিচালিত।

চার্চিল ব্যক্তিগতভাবে সিআইএ–এর পরিচালক অ্যালেন ডালেস এবং তাঁর ভাই, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডালেসের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তিনি ওয়াশিংটন ও লন্ডনে একাধিকবার ছবি তুলেছেন। ১৯৫৮ সালের বসন্তে, যখন তাঁকে রেডিও লিবার্টির ক্যাম্পেইনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল, তিনি অসুস্থতার কারণে ওয়াশিংটনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।

তখন তাঁর বয়স ছিল ৮৩ বছর। পরের বছর তিনি শেষবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর ১৯৬৫ সালে মৃত্যুর আগে আর কখনো আমেরিকায় যাননি। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও গোয়েন্দা ইতিহাসের অধ্যাপক ররি কোরম্যাক বলেন, ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েতবিরোধী কর্মকৌশলের দিক থেকে চার্চিলকে সিআইএ কর্তৃক টানার চেষ্টা ছিল স্বাভাবিক পদক্ষেপ।

তিনি বলেন,১ শীতল যুদ্ধের সময় প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল কর্তৃত্ব দুর্বল করা, প্রতিষ্ঠিত ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আর চিন্তার ভেতর সন্দেহের জন্ম দেওয়া।’ প্রফেসর কোরম্যাকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ‘বিশ্বাসযোগ্য বক্তা’ খুঁজছিল, যারা সোভিয়েত নাগরিকদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে পারবে। সিআইএ অনেক সময় সরাসরি নয়, বরং রেডিও লিবার্টির মতো মাধ্যম বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে সেই কাজ করত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান, এর মধ্যেই নতুন সংঘর্ষে নিহত ৩০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি
সীমান্তের ওপার থেকে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি

ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই দুই দেশের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের খবর এসেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দাবি, গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার আফগান সীমান্ত পেরিয়ে আসা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচ সেনা ও ২৫ সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার (আইএসপিআর) বিবৃতির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা খুররম ও উত্তর ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। পাহাড়ি ও দুর্গম এই দুই জেলায় সংঘর্ষটি ঘটে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সীমান্ত অতিক্রমের এই চেষ্টা প্রমাণ করে যে আফগান সরকারের সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রকৃত অবস্থান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ সংঘর্ষের পর আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে জানতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এদিকে, এ সংঘর্ষের সময়ই দুই দেশের প্রতিনিধিদল ইস্তাম্বুলে আলোচনায় বসেছে, যাতে সীমান্তে উত্তেজনা কমানো যায়। চলতি মাসের শুরুর দিকে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়, তা ছিল ২০২১ সালে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনা। পাকিস্তানের দাবি, তালেবান সরকার সীমান্তে সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযোগ ঘিরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও পাকিস্তান আফগানিস্তানে বিমান হামলা করে। পরে দোহায় এক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

তবে তালেবান সরকার বরাবরই পাকিস্তানের এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। বরং তারা অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানি সামরিক অভিযানে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হয়েছে।

গতকাল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি টিকে আছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন, আফগানিস্তানও শান্তি চায়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ইস্তাম্বুলে কোনো সমঝোতা না হলে যুদ্ধ অনিবার্য।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত শুক্রবার ও গতকাল যাঁরা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরা ‘ফিতনা আল খারিজ’ নামের এক সংগঠনের সদস্য। সেনাবাহিনী বলেছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এবং উগ্রবাদী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির সাক্ষাৎকার

আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চান কমলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস। ছবি: বিবিসি
বিবিসির সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে কমলা হ্যারিস। ছবি: বিবিসি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জানিয়েছেন, তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেন—ভবিষ্যতে একদিন তিনি নিজেই হয়তো হোয়াইট হাউসে বসবেন এবং কোনো এক সময় যে একজন নারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন, সেই বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজয়ের পর কমলা হ্যারিস এবারই প্রথম প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিলেন, ২০২৮ সালে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এমনকি বিভিন্ন জরিপে ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁকে অনেক পিছিয়ে দেখানো হলেও তিনি তা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

হ্যারিস বলেন, ‘যদি আমি জরিপের ফল শুনতাম, তবে জীবনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতাম না। আমি এখনো শেষ হইনি—সারা জীবন জনসেবায় কাটিয়েছি, সেটাই আমার রক্তে মিশে আছে।’

সাক্ষাৎকারে হ্যারিস তাঁর সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ‘একজন স্বৈরাচারী’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প সম্পর্কে যেসব সতর্কবার্তা তিনি দিয়েছিলেন, তা এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। কমলা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম তিনি (ট্রাম্প) বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন—এবং সেটাই তিনি এখন করছেন।’

উদাহরণ হিসেবে কমলা কৌতুক অভিনেতা জিমি কিমেলকে ট্রাম্প-নিযুক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপের মুখে টেলিভিশন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। হ্যারিসের ভাষায়, ‘ট্রাম্পের চামড়া এতটাই পাতলা যে একটি রসিকতাও সহ্য করতে পারেন না।’

মার্কিন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই ট্রাম্পের ক্ষমতার সামনে নতি স্বীকার করেছে উল্লেখ করে কমলা বলেন, ‘অনেকে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চায়, কোনো তদন্ত এড়াতে চায়, কিংবা নিজের স্বার্থে কিছু অনুমোদন করাতে চায়।’

হোয়াইট হাউস অবশ্য কমলা হ্যারিসের এসব মন্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেছেন, ‘কমলা হ্যারিস যখন বিপুল ব্যবধানে নির্বাচনে হেরে যান, তখনই আমেরিকান জনগণ তার প্রতি মত জানিয়ে দিয়েছে।’

সম্প্রতি কমলা প্রকাশ করেছেন তার নির্বাচনী স্মৃতিকথা ‘১০৭ ডেজ’। তিনি বাইডেনের পদত্যাগের পর মাত্র ১০৭ দিন সময় পান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য। সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন—যদি বাইডেন আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে কি এখন ট্রাম্পের বদলে আপনিই প্রেসিডেন্ট হতেন? জবাবে কমলা বলেছেন, ‘ওটা এক অনিশ্চিত প্রশ্ন—যা আমেরিকার ভাগ্য বদলাতে পারত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেসিয়াল রিকগনিশনে বিদেশিদের ওপর নজরদারি করবে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিদেশি নাগরিকদের আগমন ও প্রস্থান নজরদারিতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, সব বিদেশি নাগরিককে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলসীমান্তে মুখের ছবি তুলতে বাধ্য করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর লক্ষ্য ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পর থেকে যাওয়া ও পাসপোর্ট জালিয়াতি রোধ করা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই বিধান কার্যকর হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষ চাইলে বিদেশিদের কাছ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবে।

নতুন নীতিতে আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে ১৪ বছরের নিচে শিশু ও ৭৯ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্কদেরও ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা যাবে। এত দিন এই দুই শ্রেণির মানুষ এ ব্যবস্থার বাইরে ছিল।

এই উদ্যোগকে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন এবার ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পর থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্তকরণেও গুরুত্ব দিচ্ছে।

তবে বিমানবন্দরগুলোতে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির বাড়তি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই প্রযুক্তির ভুল শনাক্তকরণ হার এখনো বেশি এবং এটি কৃষ্ণাঙ্গ বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বৈষম্যপূর্ণ ফলাফল দিতে পারে।

২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে মার্কিন নাগরিক অধিকার কমিশন (US Commission on Civil Rights) জানিয়েছিল, পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ভুল শনাক্তের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।

২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস অনুমান করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসীর মধ্যে ৪২ শতাংশেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

এমনকি ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস একটি স্বয়ংক্রিয় ‘এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু তা কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বর্তমানে মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) সংস্থা সব বাণিজ্যিক ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের জন্য ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে বাইর হওয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা এখনো কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে সীমিত।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সব বাণিজ্যিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম চালু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিল শিকারে সীমা আরোপের দাবি তোলা ইউক্রেনীয় জীববিজ্ঞানীকে আটক করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভ। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের জীববিজ্ঞানী লিওনিদ পশেনিচনভকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার জের ধরে শুরু হয়েছে তীব্র কূটনৈতিক বিরোধ। ইউক্রেন দাবি করেছে, অ্যান্টার্কটিকায় ক্রিল মাছ ধরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই পশেনিচনভকে ‘মিথ্যা’ অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লিওনিদ পশেনিচনভ অ্যান্টার্কটিকা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক জীববিজ্ঞানী। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি ‘অ্যান্টার্কটিক সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিশন’-এর গবেষণায় যুক্ত আছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি ইউক্রেনের প্রতিনিধি হিসেবে ওই কমিশনের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পশেনিচনভ। ওই সম্মেলনে অ্যান্টার্কটিকার সামুদ্রিক প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ক্রিল মাছ ধরার সীমা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। ঠিক এমন সময়ই রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছে।

রুশ কর্তৃপক্ষের এক নথিতে দাবি করা হয়েছে, পশেনিচনভ ‘রাশিয়ার নাগরিক’ হিসেবে ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন এবং শত্রুপক্ষের সহায়তা করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি তাঁর গবেষণাকে ব্যবহার করেছেন রাশিয়ার অ্যান্টার্কটিক ক্রিল ধরার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে। ইউক্রেনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্রিল আহরণে সীমা আরোপের আহ্বান জানানোয় রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্বার্থ নষ্ট হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অ্যান্টার্কটিকার উপদ্বীপ ঘিরে একটি সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা গঠনের প্রস্তাব নিয়েই মূলত এই বিতর্ক। বহু বছর ধরে রাশিয়া ও চীন এমন সংরক্ষিত এলাকা গঠনের বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বছর প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে ক্রিল আহরণের পরিমাণ টেকসই সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

পশেনিচনভের আটক নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আর যুক্তরাজ্য আহ্বান করেছে, রাশিয়া যেন ইচ্ছাকৃতভাবে আটক সব বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দেয়। পশেনিচনভ সম্পর্কে ইউক্রেনের অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ভাসিল মিরোশনিচেঙ্কো বলেছেন, ‘তিনি একজন বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ নন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ৭০ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ইভজেনি পাখোমভ বলেছেন, ‘তিনি (পশেনিচনভ) অতি সদালাপী ও সহৃদয় মানুষ। তাঁর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

ব্লু মেরিন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যান ক্রকেট মন্তব্য করেছেন, ‘পশেনিচনভকে কারাবন্দী করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তিনি ক্রিল আহরণের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করেন। এখন এই বৃদ্ধ বিজ্ঞানীর জীবনও সেই আইনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত