Ajker Patrika

ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু

আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৬: ০০
ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন তথা জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ভোট দেবেন। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

যুক্তরাজ্যের এই সাধারণ নির্বাচনে বড় ও ছোট উভয় ধরনের মোট ৯৫টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে এবার মোট ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী লড়ছেন। এসব আসন ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসের মধ্য বণ্টিত। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায়। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘ ১৪ বছর পর এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভদের হারিয়ে বিরোধী লেবার পার্টি ক্ষমতায় ফিরে আসবে। অর্থনৈতিক সংস্কার, উৎপাদনশীলতা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণসহ নানা কারণেই এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। 

নতুন সরকার বেছে নিতে আজ সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও একটি ভঙ্গুর সামাজিক কাঠামো থেকে বের হতেই লেবার পার্টিকে বেছে নেবেন ভোটাররা। 

বেশির ভাগ জরিপে দেখা যায়, এবারের সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের জয় নিয়ে নির্বাচিত হতে চলেছেন লেবার পার্টি। দলটির ৬২ বছর বয়সী নেতা কিয়ের স্টারমার ঋষি সুনাককে সরিয়ে তাঁর জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জরিপ সংস্থা ইউগভ জানিয়েছে, পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৪২২ থেকে ৪৫৬টি আসন পেতে পারে লেবার পার্টি। 

উল্লেখ্য, ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে লড়ছেন রেকর্ড ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থী লড়ছেন স্বতন্ত্র হয়ে। দলীয় জায়গা বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী আছেন লেবার পার্টিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির দেওয়া তথ্য বলছে, এই ৩৪ জনের অধিকাংশই এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে লড়ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুপার টাইফুন ধেয়ে আসছে ফিলিপাইনের দিকে, বাতিল একাধিক ফ্লাইট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফিলিপাইনে টাইফুন কালমায়েগি যেতে না যেতেই আবার আসছে সুপার টাইফুন ফুং ওয়াং। ছবি: এএফপি।
ফিলিপাইনে টাইফুন কালমায়েগি যেতে না যেতেই আবার আসছে সুপার টাইফুন ফুং ওয়াং। ছবি: এএফপি।

ফিলিপাইনে টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া জনপদে আবারও ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। যাকে ‘সুপার টাইফুন’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যেই সারা দেশে দুর্যোগ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে।

দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ফুং ওয়াং নামের এই টাইফুনের বায়ুপ্রবাহ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার (প্রায় ১৫৫ মাইল)। এ সময় প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ রোববার একাধিক এলাকায় এ ঝড় আঘাত হানবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ফিলিপাইনে এর নাম দেওয়া হয়েছে উয়ান। আজ রোববার সকালেই ফিলিপাইনের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। সন্ধ্যার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ লুজনের উপকূলে অবস্থান করতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে, সুপার টাইফুনের পূর্বাভাসের পর বেশ কয়েকটি স্কুল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় একাধিক ফ্লাইট বাতিল করেছে ফিলিপাইন এয়ারলাইনস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আশা করছে, সুপার টাইফুন ফুং ওয়াং স্থলে ওঠার পর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়বে। লুজন দ্বীপ অতিক্রমের সময় এটি ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই থাকবে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, দেশটির পূর্বাঞ্চলে ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে।

ঝড়ের প্রভাবে গোটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কায় সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায়। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের কাতান্দুয়ানেস দ্বীপের অবস্থা আজ সকালে চরম বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেখানের বাসিন্দাদের নিরাপদ উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

টাইফুন ফুং ওয়াং-এর প্রভাবে আবারও নিচু এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে কাদামাটির স্রোত নেমে এসেছে। সম্প্রতি দেশটির ওপর তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগির পরবর্তী উদ্ধার অভিযানও স্থগিত করতে হয়েছে। এখনো শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ফিলিপাইন বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। এখানে প্রায়ই ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বা ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রতি বছর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ২০টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, যার অর্ধেক সরাসরি ফিলিপাইনে প্রভাব ফেলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসি শতভাগ ভুয়া ও বামপন্থী প্রচারযন্ত্র, দেখলে দিনটাই নষ্ট: ট্রাম্পের প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রচারযন্ত্র।’ সম্প্রতি সম্প্রচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ক্যারোলিন লেভিট বলেন, যুক্তরাজ্যে সফরের সময় যখনই তিনি বিবিসির খবর দেখেন, তাঁর ‘দিনটাই নষ্ট হয়ে যায়।’ তাঁর অভিযোগ, ব্রিটিশ করদাতারা ‘বামপন্থী প্রচারযন্ত্রের’ খরচ বহনে বাধ্য হচ্ছেন।

কিছুদিন আগে, যুক্তরাজ্যের এমপিরা বলছেন, বিবিসিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভাষণ সম্পাদনার বিষয়ে ‘গুরুতর প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।’ এর পরপরই লেভিট এই মন্তব্য করলেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ফাঁস হওয়া নথির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিবিসির ‘প্যানোরামা’ নামের চলতি ঘটনাবলির এক পর্বে ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি দুইটি ভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে দেখিয়েছে, যেন ট্রাম্প সমর্থকদের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার আগে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ‘প্রাণপণে লড়তে’ বলছেন। কিন্তু ভাষণের যে অংশে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশপ্রেমিকের মতো নিজেদের মত প্রকাশের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসি এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে পারে বলে জানা গেছে। সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, আগামী সোমবার বিবিসির চেয়ারম্যান সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া কমিটিকে ‘সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা’ দেবেন। টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেভিট বলেন, ‘বিবিসির এই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিকৃত ও নির্বাচিত সম্পাদনা প্রমাণ করে তারা সম্পূর্ণ ভুয়া সংবাদমাধ্যম। যুক্তরাজ্যের জনগণের সময় নষ্ট করার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা তাদের আর নেই।’

লেভিট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যখনই আমি যুক্তরাজ্যে যাই এবং হোটেলে বিবিসি চালাতে বাধ্য হই, তাদের প্রচারণা আর মিথ্যা শুনে আমার দিনটা বিষিয়ে যায়। তারা বারবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তাঁর আমেরিকাকে উন্নত করা ও বিশ্বকে নিরাপদ করার প্রচেষ্টা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ায়।’

টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, তাদের প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বিবিসির সম্পাদকীয় নীতি ও মানদণ্ড বিষয়ক কমিটির সাবেক উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকটের লেখা এক স্মারক বা মেমোর ভিত্তিতে। প্রেসকট চলতি বছর শুরুর দিকে পদত্যাগ করেন এবং নথি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, নথিটি এক হুইসেলব্লোয়ার ফাঁস করেছেন।

প্রকাশিত অংশে বলা হয়েছে, ‘প্যানোরামায় ভাষণ সম্পাদনার ধরন সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ছিল। ট্রাম্প সরাসরি সমর্থকদের ক্যাপিটলে গিয়ে লড়ার আহ্বান দেননি—এই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা উসকানির অভিযোগে কোনো ফেডারেল মামলা হয়নি।’ নথিতে আরও বলা হয়, প্রেসকট বিবিসি আরবির গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনের দিকেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

টেলিগ্রাফের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রেসকট অভিযোগ করেছেন যে বিবিসির ভেতরে ‘ব্যবস্থাগত সমস্যা’ রয়েছে, যা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এখনো সমাধান করেনি। তিনি দাবি করেন, বিবিসি আরবি ও মূল বিবিসি ওয়েবসাইটের গাজা যুদ্ধ কাভারেজে ‘স্পষ্ট পার্থক্য’ রয়েছে। প্রেসকটের অভিযোগ, বিবিসি আরবি নিয়মিত এমন বিশ্লেষকদের ব্যবহার করেছে, যারা ইহুদি-বিরোধী বা হামাসপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আসামের গোয়ালপাড়ায় আরও ৫৮০ পরিবারকে উচ্ছেদ, অধিকাংশই ‘বাংলাভাষী মুসলমান’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের গোয়ালপাড়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত
আসামের গোয়ালপাড়ায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ছবি: সংগৃহীত

আসামে ফের শুরু হয়েছে তথাকথিত উচ্ছেদ অভিযান। স্থানীয় সময় আজ রোববার সকালে পশ্চিম আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় জেলা প্রশাসন ও বন কর্তৃপক্ষ মিলে প্রায় ১ হাজার ১৪০ বিঘা (প্রায় ১৫৩ হেক্টর) জমিতে একটি বড় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের শিকার অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলমান। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

গোয়ালপাড়া জেলা কমিশনার প্রদীপ তিমুং বলেছেন, এই উচ্ছেদ অভিযান অন্তত দুই দিন লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৫৮০টি পরিবারকে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছি। পুরো এলাকা দহিকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এই লোকজন সেই বনভূমি দখল করে বসতি গঠন করেছিল।’

এ বছরে আসামে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান দেখা গেছে। রাজ্য সরকার বলছে, এটি ‘এক ধর্মের লোকদের জনমিতিক আগ্রাসন’ রোধ করার প্রয়াস। উচ্ছেদের ফলে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

জুলাই ও আগস্ট মাসে এই উচ্ছেদ অভিযান সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে ১৯ সেপ্টেম্বর আসামের সুপরিচিত শিল্পী গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর তাঁকে ঘিরে রাজ্যের খবর কেবলই সেই ঘটনার দিকে ঘুরে যাওয়ায় অভিযান কিছুটা থমকে পড়ে। রোববারের এই অভিযান হচ্ছে গত দুই মাসে প্রথম বড় উচ্ছেদ অভিযান।

গোয়ালপাড়া জেলায় আগেও একাধিক বড় উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ১২ জুলাই পাইকান সংরক্ষিত বনে প্রায় ১৪০ হেক্টর বনভূমি দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ চালানো হয়েছিল। আর ১৬ জুন জেলার হাসিলা বিল এলাকায় জলাভূমি দখল করে থাকা কিছু ৬০০ পরিবারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দুই দিন আগে ফেসবুক লাইভে এই উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর রাজ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এবং তদন্ত নিয়ে সরকারের ওপর যে চাপ এসেছে, তা নিয়েই কিছু লোক ‘নেপালের মতো পরিস্থিতি’ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

বিশ্বশর্মা বলেন, ‘অনেকে ভাবছিল, উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ভেবেছিল, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ওপর এত চাপ পড়েছে, তিনি আর অভিযান চালানোর সাহস দেখাবেন না। আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি কাউকে খুশি করে দিতে পারব না। ৯ ও ১০ নভেম্বর গোয়ালপাড়ার দহিকাটা বনে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’

কেন্দ্রীয় আসাম ফরেস্ট সার্কেল, সেন্ট্রাল আসাম সার্কেলের বন সংরক্ষক সানিদেও ইন্দ্রদেও চৌধুরী জানিয়েছেন, রোববারের অভিযানে ১ হাজারেরও বেশি বনকর্মী ও পুলিশ সদস্য নিয়োজিত ছিল। তিনি বলেন, ‘শুধু গোয়ালপাড়া জেলাতেই এ বছর আমরা উচ্ছেদ করে ৯০০ হেক্টরেরও বেশি বনভূমি পুনরুদ্ধার করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি হামলার কুফল: গাজার মাটি-পানি বিষাক্ত, সর্বব্যাপী সংকটে ফিলিস্তিনিরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ১১
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান শহরের সেই সুপেয় পানির উৎস—শেখ রাদওয়া পুকুর। ছবি: এএফপি
গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান শহরের সেই সুপেয় পানির উৎস—শেখ রাদওয়া পুকুর। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন পুরো অঞ্চলের বাড়িঘরই ধ্বংস করেনি, পরিবারগুলোকে বারবার বাস্তুচ্যুত করেছে, হাসপাতাল-ক্লিনিক গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আর এর সঙ্গে বিষাক্ত করে তুলেছে সেই মাটি ও পানি, যার ওপর নির্ভর করে টিকে আছে ফিলিস্তিনিরা।

নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির চার সপ্তাহ পেরিয়েছে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রভাবে পরিবেশের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ইসরায়েল এখনো প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে।

গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকা একসময় ছিল প্রাণচঞ্চল মহল্লা। এখন সেটি পরিণত হয়েছে এক বিরানভূমিতে। ভাঙা ঘরবাড়ির পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকার যে পুকুরটি ছিল একসময় মানুষের পানির উৎস, সেখানে এখন জমেছে নোংরা পয়োবর্জ্য আর ধ্বংসাবশেষ। অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য এই জায়গাই এখন একদিকে আশ্রয়, অন্যদিকে বিপদ।

গর্ভবতী উম্মে হিশাম নিজের সন্তানদের নিয়ে প্রতিদিন হাঁটছেন এই দুর্গন্ধে ভরা পানির মধ্য দিয়ে। যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই তাঁদের। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। মশার যন্ত্রণা, বাড়তে থাকা পয়োনিষ্কাশনের পানি, চারপাশে ধ্বংসস্তূপসহ সব রকম কষ্টের মধ্যে আছি। সব মিলিয়ে আমাদের আর সন্তানদের জীবন হুমকিতে।’

বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য তৈরি সেই পুকুর এখন কাঁচা পয়োনিষ্কাশনে ভরা। ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার পানির পাম্পগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দূষিত পানি ক্রমেই বাড়ছে, যা আশপাশের ঘরবাড়ি ও তাঁবুগুলোর কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।

গাজা সিটির পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, পচা পানি আর মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। পৌর কর্মকর্তা মাহের সালেম বলেন, ‘সব নাগরিকই মারাত্মক প্রভাবের মধ্যে। দুর্গন্ধ, মশা, পোকামাকড়—সবকিছুই ছড়িয়ে পড়েছে। পচা পানির স্তর এখন ছয় মিটারের বেশি উঁচু। নিরাপত্তা বেড়া ভেঙে গেছে। যেকোনো শিশু, নারী, বৃদ্ধ, এমনকি গাড়িও এই পুকুরে পড়ে যেতে পারে।’

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, স্থির হয়ে থাকা এই পানি থেকে রোগব্যাধি ছড়াতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। কিন্তু গাজার মানুষদের সামনে বিকল্প কিছু নেই। গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ জানে কুয়া, ট্যাংক বা পানিবাহী ট্রাক থেকে যে পানি পাচ্ছে, তা দূষিত। তবু তাদের বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার জন্য সেটাই খেতে হচ্ছে।’

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আল-জেবেন এই সংকটকে ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত এক পরিবেশগত বিপর্যয়’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, গাজা আজও ভুগছে ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার কারণে। এই যুদ্ধ প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তৈরি করেছে ৬ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ, যার বড় অংশই বিষাক্ত পদার্থে দূষিত।’

আল-জেবেন আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ও পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি ও উপকূলীয় পানিও দূষিত হয়েছে। এখন গাজা ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখে, পরিবেশগত ঝুঁকিও দ্রুত বাড়ছে।’ তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অধিকাংশ কৃষিজমিও ‘ধ্বংস হয়ে গেছে’। ফলে অঞ্চলটি এখন ‘তীব্র খাদ্য-সংকট ও দুর্ভিক্ষে ভুগছে, যেখানে খাবারকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, গাজার সুপেয় পানির উৎস এখন ‘ভয়াবহভাবে সীমিত এবং বাকি যা আছে, তার বেশির ভাগ দূষিত।’ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার পতন, পাইপলাইন ধ্বংস এবং স্যানিটেশনের জন্য মাটির গর্ত ব্যবহারের কারণে গাজাকে পানি সরবরাহ করা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে।’

শেখ রাদওয়ানে এখন বাতাস ভারী পচা গন্ধ আর হতাশায়। প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, ‘যখন প্রতিদিনই বাঁচার লড়াই—পানি, খাবার আর এক টুকরা রুটির জন্য, তখন নিরাপত্তা ভাবার সময় থাকে না।’

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত