Ajker Patrika

তদন্তে বেরিয়ে এল কীভাবে ঘটেছিল আলোচিত ‘বেশিয়ান ইয়ট’ ট্র্যাজেডি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ২৩: ৫০
বেশিয়ান ইয়ট ট্র্যাজেডিতে নিহত সাতজনের মধ্যে প্রমোদতরীটির মালিক মাইক লিঞ্চ ও তাঁর মেয়ে হান্নাহ লিঞ্চও ছিলেন। ছবি: দ্য টাইমস
বেশিয়ান ইয়ট ট্র্যাজেডিতে নিহত সাতজনের মধ্যে প্রমোদতরীটির মালিক মাইক লিঞ্চ ও তাঁর মেয়ে হান্নাহ লিঞ্চও ছিলেন। ছবি: দ্য টাইমস

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট। ছুটি কাটানোর শেষ দিন ছিল এটি। বিলাসবহুল বেশিয়ান ইয়টে থাকা অতিথিরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই প্রমোদতরিটির মালিক ব্রিটিশ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মাইক লিঞ্চ। একটি প্রতারণা মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার খুশিতে তিনি বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে উদ্‌যাপনে ছিলেন। তবে আনন্দমুখর পরিবেশটি দ্রুত বিষণ্ন হয়ে ওঠে, যখন খবর আসে তাঁর সহ-আসামি স্টিফেন চেম্বারলেইন সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানতেন না, তাঁদের জন্যও অপেক্ষা করছে আরেক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘মেরিন অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ’-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেই রাতে কীভাবে আনন্দযাত্রাটি সাতজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বড় এক ট্র্যাজেডিতে রূপ নিয়েছিল।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, সেদিন শক্তিশালী বাতাসের পূর্বাভাস থাকায় ক্যাপ্টেন জেমস কাটফিল্ড প্রমোদতরিটি সেফালু থেকে নিরাপদ বন্দর সিসিলির পোর্টিচেলোতে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ৯টায় তাঁরা পোর্টিচেলো পৌঁছান। সমুদ্র শান্ত ছিল, বাতাস ছিল হালকা, কিন্তু দূরে বজ্রপাতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল। ক্যাপ্টেন ঘুমাতে যাওয়ার আগে বলে দিয়েছিলেন, বাতাসের গতি ২০ নটিক্যাল মাইল ছাড়িয়ে গেলে বা নোঙর সরে গেলে যেন তাঁকে জাগানো হয়।

এ অবস্থায় ওই প্রমোদতরি থেকে রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে ডেকহ্যান্ড ম্যাথিউ গ্রিফিথস তাঁর ফোনে আকাশের ঝলকানি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। তখন বাতাসের গতি ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। এরপর ৩টা ৫৭ মিনিটেই বাতাসের গতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ নটিক্যাল মাইলে। এমন বাতাসে প্রমোদতরিটির নোঙর সরে যেতে শুরু করে। ক্যাপ্টেনকেও জাগানো হয়।

প্রমোদতরিতে কেউ কেউ তখনো ঘুমাচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ জেগে ওঠেন। প্রমোদতরির পাচক রিকালডো থমাস রান্নাঘরে জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে মজার ছলে সঙ্গীকে বলেন, ‘সুপ্রভাত’! প্রধান প্রকৌশলী টিম পার্কার ইঞ্জিন কন্ট্রোল রুমে চলে যান, প্রধান স্টুয়ার্ড সাশা মারে ছাদে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন সবকিছু। ইয়টের মালিক ও লিঞ্চের স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা বাকারেস এসে জানতে চান অতিথিদের যাত্রার ব্যবস্থা নিয়ে।

তবে ৪টা ৬ মিনিটে সবকিছু পাল্টে যায়। হঠাৎ করেই বাতাসের গতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ নটিক্যাল মাইলের বেশি—যা হারিকেনের থেকেও ভয়াবহ। এ অবস্থায় প্রমোদতরিটি মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ৯০ ডিগ্রির বেশি কাত হয়ে পড়ে। জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়, জরুরি বাতি জ্বলে ওঠে। অনেকে পানিতে পড়ে যান, কেউ কেউ নিজের শক্তি আর উপস্থিত বুদ্ধিতে কোনোভাবে ওপরে উঠে আসেন।

কিন্তু হঠাৎ করেই প্রমোদতরির ডান পাশ দিয়ে সাগরের পানি ধেয়ে আসে। মুহূর্তেই ভেসে যায় কেবিন ও করিডর। কেউ কেউ দরজা খুলে পালাতে সক্ষম হন। কেউ কেউ এয়ার পকেটে আটকে থাকেন, কেউ আবার বাইরে থাকা অতিথিদের সাহায্যে উদ্ধার হন।

ডুবে যাওয়ার আগে বেশিয়ান ইয়ট। ছবি: সংগৃহীত
ডুবে যাওয়ার আগে বেশিয়ান ইয়ট। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে, রাত ৪টা ২৪ মিনিটে একটি ‘লাইফ র‍্যাফট’ (কয়েকজনকে পানিতে ভাসিয়ে রাখতে সক্ষম নৌকাবিশেষ) খোলা সম্ভব হয়। সাহায্যের আশায় সিগন্যাল লাইট ও ফ্লেয়ার ছুড়ে বার্তা পাঠানো হয়। ৪টা ৪৩ মিনিটে একটি ফ্লেয়ার নজরে পড়ে কাছাকাছি নোঙর করা আরেক প্রমোদতরি ‘স্যার রবার্ট ব্যাডেন পাওয়েল’-এর ক্যাপ্টেন কারস্টেন বার্নারের। তিনি দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।

তবে ততক্ষণে প্রমোদতরিটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। মুরায় নামে এক যাত্রী লাইফ র‍্যাফট থেকে দেখেন—প্রমোদতরিটির সামনের অংশটি ধীরে ধীরে খাড়া হয়ে যায়। এরপর চিরতরে এটি হারিয়ে যায় ৫০ মিটার গভীর জলে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিন যারা বাঁচতে পারেননি তাঁদের মধ্যে ছিলেন—মাইক লিঞ্চ এবং তাঁর মেয়ে হান্নাহ, আইনজীবী ক্রিস মর্ভিলো ও তাঁর স্ত্রী নেদা, মর্গান স্ট্যানলির চেয়ারম্যান জোনাথন ব্লুমার এবং তাঁর স্ত্রী জুডি এবং ইয়টের শেফ রিকালডো থমাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত