Ajker Patrika

জার্মানিতে নতুন গণকবরের সন্ধান, মিলল ‘প্লেগে’ মারা যাওয়া ১০০০ মানুষের কঙ্কাল

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১৭: ৫৪
জার্মানিতে নতুন গণকবরের সন্ধান, মিলল ‘প্লেগে’ মারা যাওয়া ১০০০ মানুষের কঙ্কাল

দক্ষিণ জার্মানিতে একটি গণকবরের খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। এটি এখন পর্যন্ত খনন করা ইউরোপের সবচেয়ে বড় গণকবর হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।

নুরেমবার্গ শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই গণকবরটিতে প্লেগে মারা যাওয়া মানুষের এক হাজারের মতো কঙ্কাল পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা দেড় হাজারের বেশি মানুষকে সমাধিস্থ করা হয় এখানে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির সূত্রে এ তথ্য জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

শহরে নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের আগে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের সময় এ গণকবর আবিষ্কৃত হয়। 

নুরেমবার্গের হেরিটেজ সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা বিভাগের মেলানি ল্যাংবেইন সিএনএনকে জানান, প্লেগে আক্রান্তদের সমাধিস্থ করতে ব্যবহার করা আটটি গর্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিটিতে কয়েক শ মৃতদেহ রয়েছে। 

‘এই লোকেদের সাধারণ গোরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়নি।’ বলেন ল্যাংবেইন, ‘এর অর্থ হলো বিপুলসংখ্যক মৃত লোক যাদের খ্রিষ্টানদের রীতি-নীতি বা প্রথার কথা বিবেচনা না করেই অল্প সময়ের মধ্যে সমাধিস্থ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।’ 

ল্যাংবেইন মনে করেন এ ধরনের গণকবরের সবচেয়ে যুক্তসংগত ব্যাখ্যা, কোনো মহামারি যেমন প্লেগে এদের মৃত্যু হয়েছে। 

১৪ শতক থেকে নুরেমবার্গ প্রায় প্রতি ১০ বছরে প্লেগের প্রাদুর্ভাবের শিকার হয়। এটিই এই গণকবরের তারিখ নির্ধারণ কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করেন ল্যাংবেইন। 

নুরেমবার্গ শহরে নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের আগে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের সময় এই গণকবর আবিষ্কৃত হয়। ছবি: ইন তেরা ভেরিতাস প্রত্নতাত্ত্বিকেরা চৌদ্দ শতকের শেষ থেকে ষোলো দশকের গোড়ার সময়কার মধ্যকার একটি গণকবরের তারিখ নির্ধারণে রেডিও কার্বন ডেটিং ব্যবহার করেছিলেন। সেখানে সেই পরিসরের শেষ সময়কার মৃৎপাত্র ও মুদ্রার খণ্ড খুঁজে পাওয়া যায়। 

তারা ১৬৩৪ সালের একটি নোটও আবিষ্কার করেন। যাতে ১৬৩২-৩৩ সালে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় এমন একটি প্লেগ মহামারির বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ আছে। যেখানে বলা হয় প্রায় ২ হাজার লোককে সেন্ট সেবাস্টিয়ান স্পিটালের কাছে সমাহিত করা হয়েছিল। এটি বর্তমান খননের এলাকাই। 

এই প্রমাণ দলটিকে এই উপসংহারে নিয়ে যায় যে নতুন আবিষ্কৃত দেহাবশেষগুলোর মধ্যে পুরোনোগুলো সম্ভবত ১৬৩২-৩৩ মহামারির সময়কালের। 

জুলিয়ান ডেকার, যার প্রতিষ্ঠান ইন তেরা ভেরিতাস খননকাজ চালাচ্ছে, সিএনএনকে জানান তিনি এই আবিষ্কারে বিস্মিত হয়েছেন। গোড়ার দিকের কয়েকটি কঙ্কাল আবিষ্কারের পর তিনি ভেবেছিলেন এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা বর্ষণে নিহতদের হতে পারে। ডেকার এখন বিশ্বাস করেন এখানে দেড় হাজারের বেশি মৃতদেহ আছে। 

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি যে সংখ্যাটি দুই হাজার বা তারও বেশি হবে। যা এটিকে ইউরোপের বৃহত্তম গণকবরে পরিণত করবে।’ বলেন ডেকার। 

ল্যাংবেইন সিএনএনকে বলেছিলেন, ১৬৩২-৩৩ সালের মহামারিটি আগের গুলির চেয়ে ভয়াবহ ছিল। এর পেছনে ভূমিকা রাখে থার্টি ইয়ারস ওয়ার বা ১৬১৮ থেকো ১৬৪৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধ।

‘নুরেমবার্গ বিভিন্ন সৈন্য দল দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল এবং এখানকার অধিবাসীরা বেশ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে বাস করছিল।’ বলেন তিনি। 

এই গণকবরে সেই সময়ের সমাজের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা রয়েছে বলে জানান গবেষকেরা। অর্থাৎ সেখানকার অধিবাসীদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে এটি। 

‘আমরা একটি প্রদর্শনীর পরিকল্পনাও করছি। তবে এতে কিছু সময় লাগবে। ২০২৫ সালের শরতে হয়তো প্রস্তুত হতে পারব আমরা।’ বলেন ল্যাংবেইন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমলিঙ্গ বিবাহ বৈধ করার রায় বাতিলের আবেদন খারিজ মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৯ সালের অক্টোবরে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সামনে এলজিবিটিকিউ সমর্থকেরা তাঁদের পতাকা উড়িয়েছিলেন। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৯ সালের অক্টোবরে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সামনে এলজিবিটিকিউ সমর্থকেরা তাঁদের পতাকা উড়িয়েছিলেন। ছবি: এপির সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট দেশজুড়ে সমলিঙ্গ বিবাহ বৈধ করার রায় বাতিলের একটি আহ্বান নাকচ করে দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার আদালত কোনো মন্তব্য না করেই কেনটাকির সাবেক কোর্ট ক্লার্ক কিম ডেভিসের করা আবেদন খারিজ করে দেন।

‘ওবারফেল বনাম হজেস’ নামে পরিচিত ওই মামলার নথি থেকে জানা যায়, কেনটাকির সাবেক কোর্ট ক্লার্ক কিম ডেভিস ২০১৫ সালে এক সমলিঙ্গ দম্পতির বিবাহের লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ওই দম্পতি মামলা করলে সুপ্রিম কোর্ট কিম ডেভিসকে ৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ ও আইনজীবীর ফি পরিশোধের নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি আদালতের আদেশ অবমাননার দায়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইনের সভাপতি কেলি রবিনসন আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন, অন্যদের সাংবিধানিক অধিকার অস্বীকার করার পরিণতি ভোগ করতেই হবে।’

২০১৫ সালে কিম ডেভিস দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন কেনটাকির রোয়ান কাউন্টিতে সমলিঙ্গ দম্পতিদের বিবাহ লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে। তিনি দাবি করেন, তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তিনি আদালতের নির্দেশ মানতে পারছেন না।

ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাঁর অফিসের অন্য কর্মীরা তাঁর অনুপস্থিতিতে লাইসেন্স দেওয়া শুরু করলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এরপর কেনটাকি রাজ্য একটি আইন পাস করে, যাতে রাজ্যের সব কোর্ট ক্লার্কের নাম বিবাহ লাইসেন্স দেওয়ার কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাল কেল্লায় তৃতীয়, ১৯৯৭ সালের পর দিল্লিতে সন্ত্রাসী হামলার ফিরিস্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লা। ছবি: সংগৃহীত
দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লা। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে আশপাশের তিন থেকে চারটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়।

এটি ১৯৯৭ সালের পর থেকে লাল কেল্লা এলাকায় ঘটে যাওয়া তৃতীয় বিস্ফোরণ। ভারতের রাজধানী দিল্লি গত দুই দশকে বহুবার ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছে। কখনো জনাকীর্ণ বাজার, কখনো আদালত এলাকা—সব জায়গাতেই ভয় ছড়িয়েছে এসব বিস্ফোরণ।

নিচে দিল্লিতে ১৯৯৭ সালের পর থেকে ঘটে যাওয়া বড় বড় বিস্ফোরণের ঘটনার একটি সময়রেখা তুলে ধরা হলো—

৯ জানুয়ারি ১৯৯৭: দিল্লি পুলিশের সদর দপ্তরের বিপরীতে আইটিও এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে ৫০ জন আহত হয়।

১ অক্টোবর ১৯৯৭: সদর বাজার এলাকায় একটি শোভাযাত্রার কাছে দুটি বিস্ফোরণে ৩০ জন আহত হয়।

১০ অক্টোবর ১৯৯৭: শান্তিবন, কৌরিয়া পুল ও কিংসওয়ে ক্যাম্প এলাকায় তিন দফা বিস্ফোরণে ১ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়।

১৮ অক্টোবর ১৯৯৭: রানীবাগ বাজারে দুই দফা বিস্ফোরণে ১ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়।

২৬ অক্টোবর ১৯৯৭: করোলবাগ বাজারে দুই দফা বিস্ফোরণে ১ জন নিহত এবং ৩৪ জন আহত হয়।

৩০ নভেম্বর ১৯৯৭: লাল কেল্লা এলাকার দুই দফা বিস্ফোরণে ৩ জন নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়।

৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৭: পাঞ্জাবিবাগ এলাকায় একটি বাসে বোমা বিস্ফোরণে ৪ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।

২৬ জুলাই ১৯৯৮: কাশ্মীরি গেট আইএসবিটিতে (ইন্টার-স্টেট বাস টার্মিনাল) পার্ক করা বাসে বিস্ফোরণে ২ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়।

১৮ জুন ২০০০: লাল কেল্লার কাছে দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণে এক শিশুসহ ২ জন নিহত এবং এক ডজনের বেশি আহত হয়।

২২ মে ২০০৫: দিল্লির দুটি সিনেমা হলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১ জন নিহত এবং ৬০ জন আহত হয়।

২৯ অক্টোবর ২০০৫: দিল্লির সরোজিনী নগর, পাহারগঞ্জ বাজার এবং গোবিন্দপুরীর একটি বাসে তিন দফা বিস্ফোরণে ৫৯ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হয়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশিও ছিলেন।

১৪ এপ্রিল ২০০৬: পুরান দিল্লির জামা মসজিদ প্রাঙ্গণে দুটি বিস্ফোরণে ১৪ জন আহত হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮: রাজধানীর কনট প্লেস, করোলবাগের ঘাফফার মার্কেট এবং গ্রেটার কৈলাশ এলাকায় ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে পাঁচ দফা ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ২৫ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮: মেহরাউলি ফুল মার্কেটে কম তীব্রতার বিস্ফোরণে ৩ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়।

২৫ মে ২০১১: দিল্লি হাইকোর্টের বাইরে গাড়ি পার্কিং এলাকায় ছোট আকারের একটি বিস্ফোরণ ঘটে, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুমুল হট্টগোলে পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন, সেনাপ্রধান আসিম মুনির আরো ক্ষমতাধর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

তুমুল হট্টগোল, স্লোগান, কাগজ ছোড়া ও ওয়াকআউটের মধ্যে পাকিস্তান সিনেটে সোমবার পাস হয়েছে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল। মোট ৯৬ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষে ৬৪ জন সিনেটর বিলটির পক্ষে ভোট দেন, ফলে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিলটি সহজেই গৃহীত হয়।

এই ভোটে সরকারের জোটসঙ্গীদের পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের দুই সদস্য ভিন্নমত দিয়ে সরকারের পক্ষে ভোট দেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে। ভোটাভুটির আগে বিরোধী বেঞ্চে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়; তারা বিলের কপি ছিঁড়ে আইনমন্ত্রীর টেবিলের দিকে ছুড়ে দেন এবং ‘গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে’ স্লোগান তুলতে থাকেন।

বিক্ষোভ শেষে বেশিরভাগ বিরোধী সদস্য সিনেট চেম্বার থেকে ওয়াকআউট করেন, ফলে বিলটি পাসে আর কোনো বাধা থাকেনি।

বিলটি সিনেটে উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার, আর অধিবেশন পরিচালনা করেন সিনেট চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ রজা গিলানি। ধারা-ধারাভিত্তিক ভোটের পর প্রোটোকল অনুযায়ী সিনেটের প্রবেশদ্বার বন্ধ রেখে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংশোধনীর মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে—

‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি হবে, কার্যকর ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে।

সেনাপ্রধান একই সঙ্গে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ারফোর্স, অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট উপাধি আজীবন বহাল থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের’ সুপারিশে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডার নিয়োগ দেবেন।

‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ নামে নতুন আদালত গঠন হবে।

আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বাড়বে।

সুপ্রিম কোর্টের কিছু এখতিয়ার নতুন আদালতে স্থানান্তর হবে।

রাষ্ট্রপতি আজীবনের জন্য ফৌজদারি দায়মুক্তি পাবেন।

বিতর্কিত ধারাগুলো ও কমিটির প্রস্তাব

আইন ও বিচারবিষয়ক যৌথ সংসদীয় কমিটির (যা বিরোধী দল বয়কট করে) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিলটিতে কয়েকটি ছোট সংশোধন আনা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর ফারুক এইচ. নাইক জানান, প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী একটি ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকেও একজন সদস্য যুক্ত হবেন।

কমিটি অন্যতম সিদ্ধান্ত ছিল, হাইকোর্টে পাঁচ বছর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরাই এ আদালতে মনোনীত হতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেউ নিয়োগ পেলে তাঁর জ্যেষ্ঠতা অপরিবর্তিত থাকবে।

বিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো— সংবিধানে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিল্ড মার্শাল পদ অন্তর্ভুক্ত করা। এর ফলে তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) জন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ তারকা জেনারেলের পদ সৃষ্টির সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি হলে। সংশোধনীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির সর্বেসর্বা ক্ষমতার অধিকারী হলেন।

পিটিআই থেকে সাইফুল্লাহ আবরোর নাটকীয় পদত্যাগ

বিল পাসের পরপরই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সিনেটর সাইফুল্লাহ আবরো নিজের আসন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি শুধু সৈয়দ জেনারেল আসিম মুনিরের জন্যই ভোট দিয়েছি। তিনি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ জিতে জাতিকে গর্বিত করেছেন।’

তিনি দাবি করেন, ২৬তম সংশোধনের সময় তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য অপহৃত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর দল কোনো সহায়তা দেয়নি। পদত্যাগের পর সিনেট চেয়ারম্যান গিলানি বলেন, ‘আমরা আপনাকে আবার সিনেটর করব।’

‘ঐতিহাসিক বিল’ বলে দাবি সরকারের

বিল পাস হওয়ার পর উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার একে ‘ঐতিহাসিক বিল’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘এটি ২০০৬ সালের চার্টার অব ডেমোক্রেসির অসমাপ্ত এজেন্ডা। বিচার বিভাগের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে সাংবিধানিক আদালত গঠন অত্যন্ত জরুরি ছিল।’

দার আরও বলেন, ‘ফিল্ড মার্শালের পদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সামরিক নেতৃত্বের কাঠামো এখন আরও স্পষ্ট হলো। এতে বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সিনিয়রিটি বা প্রধান বিচারপতির অবস্থানে কোনো প্রভাব পড়বে না।’

বিরোধীদের ক্ষোভ

পিটিআই সিনেটর আলি জাফর গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা এই সংশোধনের বিরোধিতা করব, কারণ কেউই—যে-ই হোক—আইন থেকে দায়মুক্তি পেতে পারে না। যদি কেউ অপরাধ করে, সে প্রেসিডেন্ট হোক বা গভর্নর, তার বিচার হওয়া উচিত।’

তবে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই রাষ্ট্রপ্রধানরা নির্দিষ্ট পরিমাণ দায়মুক্তি ভোগ করেন। এটি কোনো ব্যতিক্রম নয়।’ তিনি আরও দাবি করেন, এই সংশোধনটি সুশাসন, প্রাদেশিক ভারসাম্য এবং প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে।

সাংবিধানিক আদালতের ক্ষমতা

বিল অনুযায়ী, নবগঠিত সাংবিধানিক আদালতও সুপ্রিম কোর্টের মতো সুয়োমোটো (নিজ উদ্যোগে মামলা নেওয়ার) ক্ষমতা রাখবে, তবে তা প্রয়োগের আগে আদালত যাচাই করবে যে আবেদনটি ন্যায্য ও প্রয়োজনীয় কিনা।

বিচারক বদলির নতুন নিয়ম

এখন থেকে একজন বিচারককে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে বদলি করা যাবে শুধুমাত্র জুডিশিয়াল কমিশন অব পাকিস্তানের (জেসিপে) মাধ্যমে, যেখানে নির্বাহী, বিচার বিভাগ, সংসদ ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি থাকবেন।

সাংবিধানিক সংশোধনের প্রেক্ষাপট

একটি সাংবিধানিক সংশোধন পাসের জন্য সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন হবে। ৯৬ সদস্যের সিনেটে অন্তত ৬৪ ভোট লাগত, যা সরকার পেয়েছে। বিলটি এখন জাতীয় পরিষদে যাবে, যেখানে সরকারী জোটের মোট ২৩৩ আসন থাকায় এটি পাস হওয়া প্রায় নিশ্চিত।

বিলটি শনিবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সিনেটে উত্থাপন করা হয়। এতে প্রধান দুটি লক্ষ্য ছিল — ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠন এবং ফিল্ড মার্শালের পদকে সংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সিদ্ধান্ত

বিলে প্রধানমন্ত্রীকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিজে তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে আইনের আদালত ও জনগণের আদালত উভয়ের কাছেই জবাবদিহি থাকতে হবে।’

তিনি জোটসঙ্গীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশের স্বার্থে, প্রাদেশিক সম্প্রীতি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধীরে ধীরে চলছিল গাড়িটি, ট্রাফিক সিগন্যালে থামতেই বিকট বিস্ফোরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: পিটিআই
ছবি: পিটিআই

দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোর একটি। অন্যান্য দিনের মতো আজকেও অসংখ্য মানুষের ভিড় ছিল লালকেল্লার সামনে।

সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে আছে অনেক গাড়ি। কিন্তু ছোট একটি গাড়ি ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। ওই গাড়িতেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দিল্লি পুলিশ কমিশনার সত্যেশ গোলচা সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভাঙাচুড়া গাড়ি, ছিন্নভিন্ন লাশ এবং রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে আছে কাচের টুকরা।

গোলচা আরও জানান, ফরেনসিক দল, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং তাঁকে প্রতিনিয়ত আপডেট জানানো হচ্ছে।’

দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি চিফ এ কে মালিক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, বিস্ফোরণের পর যে আগুন লেগেছিল, তা সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল।

ফায়ার সার্ভিসের আরও এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানান, আগুনে ছয়টি গাড়ি, দুটি ই-রিকশা ও একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে অবস্থিত চাঁদনি চক ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ভরগবের দোকান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে পুরো ভবন কেঁপে উঠেছিল।

আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি গুরুদুয়ারায় ছিলাম, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনি। শব্দটা এতটাই জোরে ছিল, আমি বুঝতেই পারিনি কী ঘটেছে।’

এ ঘটনার পর দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত