Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ: পুতিন-উইটকফ ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও মিলল না সমাধান সূত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪২
পুতিনের সঙ্গে ক্রেমলিনে বৈঠকে উইটকফ ও কুশনার। ছবি: এএফপি
পুতিনের সঙ্গে ক্রেমলিনে বৈঠকে উইটকফ ও কুশনার। ছবি: এএফপি

রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি নিয়ে ক্রেমলিনে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের পরও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ দূতদের বৈঠক শেষে বুধবার এসব কথা জানানো হয়।

ট্রাম্প বহুবার আক্ষেপ করে বলেছেন, ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘাতের অবসান ঘটানো তাঁর প্রেসিডেন্সির অন্যতম কঠিন ও অধরা থাকা বৈদেশিক নীতি লক্ষ্য। কখনো পুতিনকে, আবার কখনো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তিনি তিরস্কারও করেছেন।

মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনারের আলোচনা মধ্যরাত পেরিয়ে যায়। এরপর পুতিনের শীর্ষ পররাষ্ট্র বিষয়ক সহায়ক ইউরি উশাকভ জানান, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো সমঝোতায় আসা সম্ভব হয়নি। এখানে এখনো অনেক কাজ বাকি।’

উশাকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রস্তাবে পুতিন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আলোচনার পর উইটকফ মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে হোয়াইট হাউসকে ব্রিফ করেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক এখনো পরিকল্পনায় নেই। তবে উশাকভ পুতিন-উইটকফ-কুশনার বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ আখ্যা দেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

উশাকভ জানান, পুতিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা এবং শুভেচ্ছা ট্রাম্পের কাছে পাঠিয়েছেন, তবে দুই পক্ষই গণমাধ্যমে এসবের বিস্তারিত প্রকাশ না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁরা ‘আঞ্চলিক সমস্যা’ নিয়েও আলোচনা করেছেন। ক্রেমলিনের ভাষায় যার মানে দনবাসের পুরো অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের দাবি। যদিও ইউক্রেন এখনো ওই অঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার (১,৯০০ বর্গমাইল) নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, যেটি রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করে। প্রায় সব দেশ দনবাসকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়।

উশাকভ বলেন, ‘কিছু আমেরিকান খসড়া প্রস্তাব মোটামুটি গ্রহণযোগ্য, কিন্তু সেগুলো এখনো আলোচনা দরকার। কিছু ভাষ্য আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়, সুতরাং কাজ চলতেই থাকবে।’

এর আগে, মার্কিন বিলিয়নিয়ার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও আশির দশক থেকে ট্রাম্পে ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুশনারকে নিয়ে মস্কোর রেড স্কয়ারের লেনিনের সমাধি পেরিয়ে ক্রেমলিনের টাওয়ারের সামনে দিয়ে হেঁটে আলোচনাস্থলে প্রবেশ করেন। তাঁরা দোভাষীর মাধ্যমে পুতিন, উশাকভ এবং পুতিনের বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে কথা বলেন।

এই বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের লোকজন এখন রাশিয়ায় আছে, দেখছে আদৌ কি কোনো সমাধান টানা যায়। সহজ কিছু না, সত্যি বলছি। পুরো অবস্থা একেবারে জগাখিচুড়ি।’ তিনি দাবি করেন, এই যুদ্ধে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছে।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়, যা স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মস্কো ও পশ্চিমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোকাবিলার জন্ম দেয়। গত নভেম্বরে ২৮ দফা মার্কিন খসড়া শান্তি প্রস্তাব ফাঁস হয়ে গেলে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তাদের অভিযোগ ছিল, ওই প্রস্তাব মস্কোর মূল দাবিগুলোকেই মাথায় তুলেছে।

এরপর ইউরোপীয় দেশগুলো পাল্টা প্রস্তাব দেয়। জেনেভায় আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন জানায়, তারা যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি ‘হালনাগাদ ও ঘষামাজা করা’ শান্তি কাঠামো তৈরি করেছে। ডাবলিনে জেলেনস্কি বলেন, মস্কোতে চলমান আলোচনার ফলের ওপরই সব নির্ভর করছে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি প্রক্রিয়ায় আগ্রহ হারাতে পারে। তিনি বলেন, ‘সহজ কোন সমাধান নেই...সবকিছু ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ থাকা জরুরি, যাতে ইউক্রেনের পেছনে লুকিয়ে কোন খেলা না হয়।’

উইটকফের সঙ্গে ক্রেমলিন বৈঠকের ঠিক আগে পুতিন বলেন, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। কিন্তু ইউরোপ যদি যুদ্ধ শুরু করে, তবে তা এত দ্রুত শেষ হবে যে আলোচনা করার মতো কেউ আর টিকে থাকবে না। কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ ট্যাংকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জবাবে ইউক্রেনের সমুদ্রপথ কেটে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে সিবিহা বলেন, পুতিনের এসব মন্তব্যই প্রমাণ করে যে তিনি যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত নন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...