Ajker Patrika

যুদ্ধে কী অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, ইউক্রেনের শক্তি কীসে

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ২১: ৩৭
যুদ্ধে কী অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, ইউক্রেনের শক্তি কীসে

রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ পতনের মুখে ইউক্রেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঘটনা এটি। ইউক্রেনের বিভিন্ন দিক থেকে তিন ফ্রন্টে আক্রমণ পরিচালনা করছে রাশিয়া। 

রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। বড় ধরনের রকেট ও ভারী গোলা বর্ষণ চলছে। উভয় পক্ষে দেড় সহস্রাধিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর মধ্যে বেসামরিক নাগরিকেরাও রয়েছে। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা কোনো পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হচ্ছে না। 

এই সংঘাতে কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি জানা থাকলে হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞের একটা ধারণা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের একটি তালিকা দিয়েছে। 

যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র
রুশ সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিমান এবং ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। মূলত ইউক্রেনের বিশেষ করে সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে আঘাত হানার জন্য এই দুই সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা আছে। ইউক্রেনীয় সামরিক স্থাপনা এবং সরকারি ভবনগুলো রাজধানী কিয়েভ এবং দ্বিতীয় প্রধান শহর খারকিভে আবাসিক এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত। ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু এসব এলাকায় থাকার কারণে কিছু বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনা ঘটছে। 

একই কথা প্রযোজ্য রুশ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রেও। আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপ করা এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলেও আশপাশের অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

মূল লক্ষ্যগুলোতে আঘাত করার জন্য রুশ সামরিক বাহিনী ‘ইস্কান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ৩০০ মাইল) পর্যন্ত। এটি অনেক বেশি শক্তিশালী ওয়্যারহেড বহন করতে পারে। ফলে বৃহৎ ভবন এবং কিছু সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম। কিছু ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের সীমানা থেকে ছোড়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। বেলারুশের ভূমি এখন রুশ হামলার মঞ্চে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্কান্দাররকেট এবং আর্টিলারি (ভারী গোলা) 
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্য কর্মকর্তারা রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আবাসিক ভবন, স্কুল এবং হাসপাতালে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের অভিযোগ করছেন। 

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের ছবিগুলোতে তেমন দৃশ্যই প্রতীয়মান হচ্ছে। এপি ছবিগুলো যাচাই করে দেখেছে, আবাসিক ভবনগুলোতে রুশ রকেট হামলা হয়েছে। এতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। 

সোভিয়েত আমলের গ্রাদ (হেইল), স্মার্চ (টর্নেডো) এবং উরাগান (হারিকেন) নামের রকেট লাঞ্চারগুলো ডিজাইনই করা হয়েছে সৈন্য সমাবেশ বা একস্থানে জড়ো করা সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার জন্য শক্তিশালী রকেটের ঝাঁক নিক্ষেপ করার জন্য। জনবহুল এলাকায় এসব অস্ত্রের ব্যবহার অনিবার্যভাবে ব্যাপক প্রাণহানি এবং বেসামরিক অবকাঠামোর বড় ক্ষতির কারণ হয়। 

রুশ সামরিক বাহিনীতে সোভিয়েত আমলে ডিজাইন করা শক্তিশালী আর্টিলারি ইউনিটের সংখ্যাও কম নয়। মজার ব্যাপার হলো—এগুলো ফুলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন স্ব-চালিত ২০৩-মিমি পিওনি এবং ১৫২-মিমি হাইসিন্থ এবং অ্যাকাসিয়া স্ব-চালিত ছোট কামান। 

মস্কো দাবি করছে, তারা শুধু সামরিক ঘাঁটি এবং অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। কিয়েভ, খারকিভ এবং ইউক্রেনজুড়ে অন্যান্য শহরে বেসামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার তথ্য আসছে। রুশ কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী বেসামরিক লোকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার কারণে আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তৃতায় বলেন, ‘বেশির ভাগ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ভারী কামান, মাল্টি-লঞ্চ রকেট সিস্টেম এবং জনবহুল এলাকায় বিমান হামলার কারণে। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে গুচ্ছ গোলাবারুদের ব্যবহার হচ্ছে।’ তবে কোন পক্ষ থেকে এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি তিনি উল্লেখ করেননি। 

রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ট্যাংক পরীক্ষা করছেন ইউক্রেনের সেনা সদস্যক্লাস্টার মিউনিশন (গুচ্ছ যুদ্ধাস্ত্র) এবং থার্মোবারিক অস্ত্র
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্লাস্টার মিউনিশন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। অবশ্য ক্রেমলিন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 

এ ধরনের অস্ত্র একটি বিস্তৃত এলাকায় শত্রু সৈন্য এবং যুদ্ধাস্ত্র লক্ষ্য করে হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। জনবহুল এলাকায় এসব অস্ত্র ব্যবহার করলে অনিবার্যভাবে ব্যাপকভাবে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটবে। 

ক্লাস্টার বোমা, রকেট এবং আর্টিলারি শেলগুলো ছোড়ারা পর বাতাসে উন্মুক্ত হয়। এরপর এগুলো থেকে বেরিয়ে যায় আরও ছোট ছোট অনেকগুলো বিস্ফোরক বা বোমা। একটি বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এগুলো। একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে এসব অস্ত্র। 

এই ক্ষুদ্র বোমাগুলোর অবিস্ফোরিত থাকার হার উচ্চ। ফলে যুদ্ধ পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মানুষের প্রাণহানি বা পঙ্গুত্ব বরণের ঝুঁকি থাকে। 

থার্মোবারিক অস্ত্রে থাকে একটি জ্বালানি ধারক এবং দুটি পৃথক বিস্ফোরক চার্জ থাকে। প্রথম বিস্ফোরণে জ্বালানি ছড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় বিস্ফোরণে বাতাসে বিচ্ছুরিত জ্বালানি এবং অক্সিজেনের সমন্বয়ে চরম চাপ এবং তাপ উৎপাদী একটি বিস্ফোরণ তরঙ্গ তৈরি করে। এতে বিস্ফোরণস্থলে আংশিক শূন্যতা তৈরি হয়। একটি শ্বাসরুদ্ধ কর পরিবেশ সৃষ্টি করে এ অস্ত্র। ফলে বিস্ফোরণের স্থলের কাছাকাছি মানুষের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। 

পেন্টাগন বলছে, থার্মোবারিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার বহনযোগ্য লাঞ্চারগুলো ইউক্রেনের ভেতরে দেখা গেছে। তবে সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর। 

রাশিয়ার ভয়ংকর অস্ত্র থারমোবারিক বোম্বইউক্রেনের অস্ত্রভান্ডার
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হাতেও সোভিয়েত আমলের একাধিক রকেট লাঞ্চার এবং ছোট আকারের কামানের ভান্ডার রয়েছে। অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অস্ত্রেরও ওপর নির্ভর করছে তারা। এদিক থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন বাহিনী কিছু ক্ষেত্রে সমান সক্ষমতা নিয়ে লড়ছে। 

তবে রাশিয়ার ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারা কোনো অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে নেই। 

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে সোভিয়েত যুগের তোচকা-ইউ স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এটির শক্তিশালী ওয়্যারহেড আছে। কিন্তু রাশিয়ার আধুনিক অস্ত্রের তুলনায় নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানার সক্ষমতার দিকে থেকে অতীব দুর্বল। 

পুরোনো সোভিয়েত-নির্মিত অস্ত্রাগার ছাড়াও, ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্রের বড় চালান পেয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জ্যাভলিন ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং কাঁধে বহনযোগ্য বিমান বিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র অন্যতম। 

সংঘাত শুরুর আগে আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তুরস্কের কাছ থেকে পাওয়া বায়রাক্টার ড্রোন ব্যবহার করেছে। রাশিয়ার একটি সামরিক কনভয়ের বিরুদ্ধে বায়রাক্টার ড্রোন হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব: জাকসু নির্বাচন কমিশন

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু গ্রেপ্তার

নতুন ট্রেন্ড ন্যানো ব্যানানা, নিজের থ্রিডি ফিগারিন বানাবেন যেভাবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত