Ajker Patrika

ইউক্রেন সংকট সমাধানে এবার রাশিয়া সফরে জার্মান চ্যান্সেলর

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২: ১৩
ইউক্রেন সংকট সমাধানে এবার রাশিয়া সফরে জার্মান চ্যান্সেলর

‘চলমান ইউক্রেন সংকট সমাধানে এবার রাশিয়া সফরে গেলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার পর শলৎস মস্কো পৌঁছান। এই সফরে শলৎস রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চলমান সংকট নিরসনে উভয় পক্ষের করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার মতানৈক্য নিরসনে এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। 

বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, শলৎসের এই সফরে পশ্চিমাদের তরফ থেকে রাশিয়ার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে যে—আলোচনার দরজা খোলা আছে এবং তাঁরা রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন। তবে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে দেশটির ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করা হবে। 

উল্লেখ্য, এই সফরে রাশিয়ায় গিয়ে দেশটির করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পিসিআর টেস্ট দেননি শলৎস। তাঁর পরিবর্তে তিনি জার্মানি থেকে সঙ্গে করে তাঁর চিকিৎসক দল নিয়ে গিয়েছেন। এর আগে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁও রাশিয়া সফরকালে রাশিয়ায় গিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাননি। 

এর আগে সোমবার শলৎস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। 

এ দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন লয়েডও চলমান ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে ইউরোপ সফর করবেন বলে জানা গেছে। ওই সফরে লয়েড ন্যাটোভুক্ত দুই দেশ লিথুনিয়া এবং পোল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সংকট নিরসনে আলোচনার পথ খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়ার এক দিন পর এই ঘোষণা এল। 

এ দিকে চলমান সংকটের মধ্যেই ইউক্রেনের জন্য ১০০ কোটি ডলার সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আফগান বালিকাবধূ এখন ইউরোপের শীর্ষ বডিবিল্ডার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রোয়া করিমি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রোয়া করিমি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ক্রিস্টাল বসানো বিকিনিতে ঝলমল করছেন মঞ্চে দাঁড়ানো একজন নারী। তাঁর উজ্জ্বল, ট্যান করা ত্বক পেশির প্রতিটি সুনির্দিষ্ট রেখা ফুটিয়ে তুলছে। রোয়া করিমির নিখুঁত মেকআপ ও সোনালি চুল দেখে মনে হবে, তিনি যেন মিস ইউনিভার্সের ফাইনালে দাঁড়িয়ে আছেন।

কিন্তু আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে যে এই নারীই ১৫ বছর আগে আফগানিস্তানে একজন কিশোরী মা ছিলেন। বালিকাবধূ হিসেবে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে তিনি নতুন জীবন শুরু করেন।

বর্তমানে ৩০ বছর বয়সী রোয়া করিমি ইউরোপের শীর্ষ বডিবিল্ডারদের একজন এবং চলতি সপ্তাহে তিনি বিশ্ব বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। রোয়ার এই উত্থান যেন উল্কার মতো।

রোয়া যখন তাঁর মা ও ছোট ছেলেকে নিয়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে নরওয়েতে আশ্রয় নেন, তখন তাঁর জন্য এই বিষয়গুলো কল্পনা করাও কঠিন ছিল। নরওয়েতে এসে তিনি নতুন জীবন শুরু করেন। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি একজন নার্স হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানেই রোয়া তাঁর বর্তমান স্বামীর (যিনি নিজেও একজন বডিবিল্ডার) সঙ্গে পরিচিত হন।

রোয়া বলেন, বছরের পর বছর ধরে তাঁর ওপর চাপানো মানসিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে বডিবিল্ডিং তাঁকে সাহায্য করেছে। বিবিসি নিউজ আফগানকে তিনি বলেন, ‘যখনই আমি জিমে যাই, আমার মনে পড়ে আফগানিস্তানে এমন একটা সময় ছিল, যখন আমার স্বাধীনভাবে ব্যায়াম করারও অনুমতি ছিল না।’

রোয়া যখন আফগানিস্তানে ছিলেন, তখন সেখানে সামাজিক নানা বিধিনিষেধ ছিল, তবে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর তা আরও খারাপ হয়। এখন সেখানে ১২ বছর বয়সের পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া দূরপাল্লার ভ্রমণ ও উচ্চ স্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ।

রোয়া বলেন, ‘আমি সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে ভাগ্যবান, কিন্তু অনেক নারী এখনো তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং হৃদয়বিদারক।’

২০১১ সালে রোয়া তাঁর তৎকালীন স্বামীকে ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। নরওয়েতে এসে তাঁকে নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। নরওয়েজিয়ান ভাষা শিখতে হয়। শুরুটা কঠিন হলেও তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়—তিনি নার্সিং পড়েন এবং রাজধানী অসলোর একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন।

তবে রোয়ার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল বডিবিল্ডিং। জিমে যাওয়া শুধু শারীরিক ব্যায়ামের জন্য ছিল না; এটি তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত পরিচয় পুনর্গঠনের একটি উপায় ছিল। এখানেই তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্বামী, আফগান বংশোদ্ভূত কামাল জালালউদ্দিনের সঙ্গে পরিচিত হন। কামাল দীর্ঘদিন ধরে বডিবিল্ডিংয়ে যুক্ত এবং রোয়ার মেন্টরদের মধ্যে একজন।

রোয়া বলেন, ‘কামালের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি খেলাধুলা করতাম, কিন্তু পেশাদার পর্যায়ে নয়। তাঁর অনুপ্রেরণা আমাকে প্রতিযোগিতামূলক এবং প্রথা ভাঙার পথ বেছে নিতে সাহস জোগায়। আমি বিশ্বাস করি, একজন পুরুষ যদি একজন নারীর পাশে দাঁড়ায়, তবে দারুণ কিছু হতে পারে।’

আফগান বালিকাবধূ থেকে বডিবিল্ডিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রোয়া করিমি (মাঝে)। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
আফগান বালিকাবধূ থেকে বডিবিল্ডিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রোয়া করিমি (মাঝে)। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

১৮ মাস আগে রোয়া তাঁর নার্সিং ক্যারিয়ার ছেড়ে পেশাদার বডিবিল্ডিং জগতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আফগান কালচার থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দেশের, নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেই সমস্ত সীমা ও কাঠামো ভেঙে বের হওয়া, যা অন্যরা ধর্মের নামে আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।’

রোয়ার বর্তমান জীবন আফগানিস্তানের সামাজিক প্রথা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুর হুমকিসহ নানা সমালোচনায় জর্জরিত হন তিনি। তবে তিনি এই মন্তব্যগুলো পাত্তা দেন না।

রোয়া বলেন, ‘মানুষ কেবল আমার চেহারা আর বিকিনি দেখে। কিন্তু এই চেহারার পেছনে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তি, প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায়। এই সাফল্য সহজে আসেনি।’

তবে সোশ্যাল মিডিয়া রোয়ার জন্য একটি ইতিবাচক প্ল্যাটফর্মও বটে। এটি তাঁকে আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে কথা বলার, স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের পরিচয় পুনর্গঠনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানানোর সুযোগ দেয়। রোয়া মনে করেন, তাঁর জীবনসংগ্রাম শুধু কট্টর সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই নয়, একই সঙ্গে এটি তাঁর নিজ দেশের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার।

রোয়া বর্তমানে বার্সেলোনায় শুরু হতে যাওয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিটনেস অ্যান্ড বডিবিল্ডিং ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে এপ্রিল মাসে স্টপেরিয়েট ওপেন বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় তিনি ‘ওয়েলনেস’ বিভাগে স্বর্ণপদক জেতেন, যেখানে পেশি নয় বরং স্বাভাবিক ফিটনেস ও স্বাস্থ্যকর চেহারার ওপর জোর দেওয়া হয়।

এরপর তিনি নরওয়ে ক্লাসিক-২০২৫ প্রতিযোগিতায় আরেকটি জয় অর্জন করেন, যা তাঁকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্থান করে দেয় এবং সেখান থেকে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান।

রোয়া বলেন, ‘আজকের এই অবস্থানে আমি এক দিনে আসতে পারিনি। ধাপে ধাপে আমি এই অবস্থানে এসেছি। এখন যখন নিজের অবস্থানের কথা ভাবি, আমার ভালো লাগে। আমি গর্ববোধ করি।’ রোয়ার স্বামী কামাল বলেন, ‘রোয়াকে মঞ্চে দেখাটা আমাদের একসঙ্গে তৈরি করা স্বপ্নের বাস্তবায়ন।’

কিন্তু রোয়ার কাছে এই প্রতিযোগিতা কেবল তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং আমার সবটুকু উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। আশা করি, প্রথম কোনো আফগান মেয়ে হিসেবে আমি ইতিহাস তৈরি করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন হামলার আশঙ্কায় ভেনেজুয়েলায় গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনী । ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনী । ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো হামলার ক্ষেত্রে গেরিলা কৌশলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা বা দেশে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছে ভেনেজুয়েলা। এ সংক্রান্ত একাধিক নথি ও বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে। এই কৌশলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলা সরকার এরই মধ্যে পুরোনো রুশ মোতায়েন শুরু করেছে।

বিশ্লেষকেরা এই পদক্ষেপকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সামরিক জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতির এক নীরব স্বীকারোক্তি বলে মনে করছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালানোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেছেন ‘পরবর্তী লক্ষ্য হবে স্থল।’ এমন মন্তব্যের পর একাধিক সন্দেহভাজন মাদক পরিবহন জাহাজে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে এবং ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। পরে তিনি অবশ্য স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলার কথা ভাবছেন না।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন ট্রাম্প তাকে উৎখাত করার চেষ্টা করছেন এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিক ও সেনারা সেই চেষ্টা প্রতিরোধ করবে। ভেনেজুয়েলার সামরিক শক্তি মার্কিন সামরিক শক্তির তুলনায় যথেষ্ট ক্ষীণ। প্রশিক্ষণের অভাব, কম বেতন এবং পুরোনো সরঞ্জামের কারণে দুর্বল হয়ে আছে এই বাহিনী।

ভেনেজুয়েলার সামরিক সক্ষমতার বিষয়ে অবগত ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, কিছু ইউনিট কমান্ডার স্থানীয় খাদ্য উৎপাদকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সৈন্যদের খাবার জোগাড় করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, সরকারি সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়।

এই বাস্তবতা মাদুরোর সরকারকে দুইটি সম্ভাব্য কৌশলের ওপর বাজি ধরতে বাধ্য করেছে—এর মধ্যে একটি গেরিলা-কৌশলে প্রতিরোধ। এই পরিকল্পনা এরই মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, যদিও বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে এবং অন্য কৌশলটি কী তা এখনো জানা যায়নি।

মাদুরো বলেছেন, ৮০ লাখ নাগরিক মিলিশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ভেনেজুয়েলাকে রক্ষা করার জন্য এবং কিছু নাগরিক রয়টার্সকে সম্প্রতি বলেছেন—তারা বিদেশি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। তবে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সূত্রের অনুমান করেছে যে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষই প্রতিরোধে অংশ নেবে। তবে ভেনেজুয়েলার প্রায় ৬০ হাজার সদস্যের সেনা ও ন্যাশনাল গার্ড রয়েছে এবং এই বাহিনীই গেরিলা কৌশল বাস্তবায়নে মূল বাহিনী হবে।

তবে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীর সরঞ্জামের অধিকাংশই রাশিয়ান তৈরি এবং কয়েক দশক পুরোনো। দেশটি ২০০০-এর দশকে রাশিয়া থেকে প্রায় ২০টি সুখোই ফাইটার জেট কিনেছে, কিন্তু "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানের তুলনায় এগুলো কিছুই নয়—বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি সূত্র। তিনি আরও বলেছেন, ভেনেজুয়েলার রাশিয়ার হেলিকপ্টার, ট্যাংক এবং কম উচ্চতায় উড়ন্ত বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম কাঁধে বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও পুরোনো।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে জানিয়েছে তারা ভেনেজুয়েলার সহায়তার জন্য প্রস্তুত, তবে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। মাদুরো মস্কোর কাছে সুখোই জেট মেরামত, রাডার সিস্টেমের উন্নতি এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের আবেদন করেছেন। ভেনেজুয়েলা এরই মধ্যে রাশিয়ার তৈরি ৫ হাজার ইগলা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে এক সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিবিসির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মানহানির মামলা আদৌ সম্ভব?

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মানহানি মামলা করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মানহানি মামলা করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মানহানি মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি তথ্যচিত্র সম্পাদনা করেছে, যাতে মনে হয়, তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার উসকানি দিয়েছিলেন।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলা টিকিয়ে রাখতে হলে ট্রাম্পকে প্রথমে প্রমাণ করতে হবে—ফ্লোরিডায় ওই তথ্যচিত্র দেখে কেউ বিভ্রান্ত হয়েছেন কি না। এরপর আদালত ঠিক করবেন, বিবিসি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এখতিয়ারের আওতায় পড়ে কি না।

ট্রাম্প ও তাঁর আইনজীবীদের অভিযোগ, বিবিসি তাদের ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের এক ভাষণের দুটি অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে, যাতে মনে হয়, তিনি সমর্থকদের দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন।

বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ ইতিমধ্যে সম্পাদনায় ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন, আইনি নোটিশের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবিসিও সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে বিবিসির ডিরেক্টর জেনারেল টিম ডেভি ও নিউজ সিইও ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে বিবিসিকে পাঠানো ট্রাম্প প্রশাসনের চিঠির একটি কপি এসেছে। যাতে বলা হয়েছে, বিবিসিকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সম্প্রচারিত পর্বটি প্রত্যাহারের জন্য আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, নতুবা মামলা করা হবে।

এর আগে ট্রাম্প ফক্স নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি বাধ্য হয়েছি বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে। তারা জনগণকে প্রতারিত করেছে আর এখন নিজেরাই সেটা স্বীকার করছে।’

তবে মার্কিন আদালতে বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, বিবিসি একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। এর সদর দপ্তর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত ব্রডকাস্টিং হাউসে। প্রশ্ন হতে পারে, ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রে বসে বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন?

এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের আইনজীবীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, মামলা হবে ফ্লোরিডায়। তবে এখানেও কিছু প্রশ্ন হতে পারে। যেমন; আদালত প্রথম প্রশ্ন করতে পারেন—বিবিসি কি ফ্লোরিডায় সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থেকে ওই ভিডিওটি প্রচার করেছে এবং সেখানে কেউ কি ওই তথ্যচিত্র দেখে বিভ্রান্ত বা প্রভাবিত হয়েছেন?

দ্বিতীয়ত, মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে টিকবে কি না, তা নির্ভর করবে আদালতের এখতিয়ারের (Jurisdiction) ওপর। যদি ফ্লোরিডার আদালত এই এখতিয়ার অস্বীকার করেন, তাহলে মামলা দ্রুত খারিজ হয়ে যাবে।

ট্রাম্পকে কী প্রমাণ করতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রে মানহানির মামলা বেশ কঠিন। এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে—বিবিসির প্রচারিত বিষয়টি ভুল ও মানহানিকর এবং বিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাবশত সত্য গোপন করেছে।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ যাচাই করতে চাইবেন, যা প্রমাণ করবে যে তারা দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল বা সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিল।

আরও একটি বিষয় হলো, বিবিসির বিরুদ্ধে বামঘেঁষা পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। ট্রাম্পের আইনজীবীরা প্রমাণ হিসেবে এ ধরনের তথ্য কাজে লাগাতে পারেন।

বিবিসি কীভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী সংবাদমাধ্যমকে সবচেয়ে শক্তিশালী আইনি সুরক্ষা দেয়। ফ্লোরিডার আদালতে বিবিসি দাবি করতে পারে—তথ্যচিত্রটি সত্য, এর প্রচার বা সম্পাদনা দর্শককে বিভ্রান্ত করেনি এবং ট্রাম্পের সুনাম বা আর্থিক ক্ষতি হয়নি।

এ ছাড়া ফ্লোরিডায় একটি রাজ্য আইন রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, ফ্লোরিডায় মানহানির মামলা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে তা দ্রুত খারিজ করার বিধানও রয়েছে।

ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে মামলা করছেন না কেন

ব্রিটেনে মানহানির মামলা দাখিল করতে হয় কোনো ঘটনা ঘটার এক বছরের মধ্যে, যা ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে মানহানির মামলায় সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪.৭ লাখ ডলার), যা ট্রাম্পের দাবির তুলনায় অনেক কম।

অন্যদিকে, এই মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কয়েক শ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

ট্রাম্প কি সত্যিই ১ বিলিয়ন ডলার পেতে পারেন

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঙ্ক মূলত আলোচনার চাপ সৃষ্টি ও সমঝোতার কৌশল। শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ঠিক করবেন আদালত বা জুরি।

এর আগে ২০২৪ সালে ট্রাম্প মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের বিরুদ্ধে ২০ বিলিয়ন ডলারের মামলা করেছিলেন, যা পরে ১৬ মিলিয়ন ডলারে মীমাংসা হয়।

তা ছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ে তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধেও ১০ বিলিয়ন ডলারের মামলা করেছেন, যা এখনো চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজা যুদ্ধের ট্রমা: আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেক ইসরায়েলি সেনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৯
অনেক ইসরায়েলি সেনার স্মৃতিতে যুদ্ধের সময়গুলো যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল
অনেক ইসরায়েলি সেনার স্মৃতিতে যুদ্ধের সময়গুলো যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল

দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে আছে একটি সাপ। সরীসৃপটির শীতল স্পর্শ যেন এক মুহূর্তের জন্য শান্তি দিল। তবে চোখ বন্ধ করলেই ফিরে আসে যুদ্ধের শব্দ। আতঙ্কে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাজায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে সেনাবাহিনী ছাড়ার ১৮ মাস পার হয়ে গেলেও এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না। এ অবস্থা হামাসের হামলায় আহত ২৭ বছর বয়সী এক সার্জেন্ট মেজরের। যুদ্ধের ট্রমা থেকে বের হয়ে আসতে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের এক খামারে নিচ্ছিলেন প্রাণীর সংস্পর্শে থাকার থেরাপি।

সাবেক এক ইসরায়েলি সেনা জানান তাঁর দুই সহযোদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন। দুজনের বয়সই ছিল কুড়ির ঘরে। থেরাপি নেওয়ার পরের অবস্থার বোঝাতে এই ইসরায়েলি সেনা বলেন, ‘এখন পাশ দিয়ে যদি কোনো বিমান বা ড্রোন উড়ে যায় কিংবা কেউ চিৎকার করতে থাকে, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ আমি এখন এই সাপের সঙ্গে আছি।’

মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায়, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে কথা বলা এই সেনা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া গাজাযুদ্ধে চলছে ভঙ্গুর এক বিরতি। এই বিরতির চুক্তি অনেকবারই ভঙ্গ করছে ইসরায়েল। তবে গাজা ছেড়ে যাওয়া অনেক সেনার স্মৃতিতে যুদ্ধের সময়গুলো যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। বাড়ছে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি), বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা। পাশাপাশি আত্মহননের ঘটনাও ঘটছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে প্রায় ১১ হাজার সেনা ‘মানসিক আঘাত’ জনিত সমস্যায় ভুগছেন। এই সংখ্যা ইসরায়েলের ৮০ বছরের ইতিহাসে সব যুদ্ধ মিলিয়ে এমন আঘাতে আক্রান্ত মোট সেনার এক–তৃতীয়াংশেরও বেশি।

মন্ত্রণালয় ‘মানসিক আঘাত’ বলতে পিটিএসডি, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যাকে বুঝিয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাদের আত্মহত্যার হারও বেড়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এক দশক ধরে প্রতি বছর গড়ে ১৩ জন সেনা আত্মহত্যা করতেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর এই সংখ্যা বেড়ে গেছে। সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২১ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন।

তবে এই হিসাবের মধ্যে দায়িত্বরত সেনা ও রিজার্ভ সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত। সেনাবাহিনী ছাড়ার পর যারা আত্মহত্যা করেছেন, তারা এই পরিসংখ্যানে নেই।

গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত আরও ২৭৯ জন সেনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে তারা বেঁচে গেছেন।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান ও উপমহাপরিচালক লিমোর লুরিয়া বলেন, ‘মানসিক আঘাতের প্রভাব কতটা গভীর সেটা এখন সবাই উপলব্ধি করছে। এর চিকিৎসা প্রয়োজন এবং সম্ভবও।’

লুরিয়া আরও বলেন, ‘আমরা এখন প্রজন্মগত পার্থক্য দেখছি। আগের যুদ্ধের বহু আহত সেনা কখনো সাহায্য নেননি, কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের আহতরা একেবারে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।’

এই সংকট মোকাবিলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। শত শত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের সহায়তার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে সহায়তা হটলাইন চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অবসরের পর যৌথ থেরাপি সেশন আয়োজন করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ইসরায়েল এখনো এত বড় পরিসরের মানসিক সংকট সামলানোর মতো প্রস্তুত নয়। বিষয়টি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগও স্বীকার করেছে। তাদের মতে, এই সংকট পুরো জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করছে।

ট্রমা থেরাপি স্পেশালিস্ট টুলি ফ্লিন্ট বলেন, এই যুদ্ধের দীর্ঘ মেয়াদ ও তীব্রতা, পাশাপাশি বারবার মোতায়েন করা সেনাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এতে সেনারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। এটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের মানসিক ভুক্তভোগীদের যদি যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তারা নিজেদের, পরিবারের এবং সমাজের জন্য একপ্রকার বোঝা হয়ে উঠতে পারেন।’

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে কথা বলা ইসরায়েলি সেনা ও তাঁদের চিকিৎসায় নিযুক্ত মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, যুদ্ধ শেষে অনেকেই জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলছেন। তাদের মনোযোগ ধরে রাখা, সম্পর্ক গড়া বা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহায়ত্ব ও হতাশার অনুভূতি আরও গভীর হয়েছে।

ট্রমা থেরাপিস্ট টুলি ফ্লিন্ট জানান, কিছু সেনা ‘নৈতিকভাবে আহত’ হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে অনেক সেনা নিজেদের প্রশ্ন করেন—যা দেখেছি, যা করেছি, তার পর আমি আসলে কে? আমি কী ধরনের মানুষ?’

যুদ্ধের শুরুতে প্রায় ছয় মাস রেডিও টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করা ২৭ বছর বয়সী এক সাবেক সেনা জানান, এ বছরের শুরুতে তিনি এই খামারে আসেন, কারণ তখন নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলা মনে হচ্ছিল।

গাজার সীমান্তে তাঁর ঘাঁটিতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, তাতে তাঁর পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে। এরপর থেকে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, শব্দে আতঙ্কিত ও সবসময় টানটান উত্তেজিত মানসিক অবস্থায় থাকতেন।

তিনি বলেন, ‘সবকিছু আরও বেড়ে যেতে থাকল। আমার রাগ, আমার চিৎকার, আমার অনুভূতি। যেন কেউ ভলিউম বাড়িয়ে দিয়েছে।’

তিনি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তবে এই খামার তাঁকে এক ভিন্নভাবে সুস্থ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। একই অভিজ্ঞতার মানুষদের সঙ্গে থাকা এবং প্রাণীদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে তিনি মনকে শান্ত রাখতে পারছেন, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছেন।

সদোট ইয়াম কিবুতজে অবস্থিত ‘ব্যাক টু লাইফ’ খামারটি সেনাদের সহায়তার জন্য নেওয়া অনেক ছোট ছোট উদ্যোগের একটি।

২০১৪ সালে গাজায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আমির ইয়ারদিনাই (দানি)। সেখান থেকে ফিরে বছরের পর বছর তীব্র পিটিএসডিতে বা মানসিক সমস্যায় ভুগে গত বছর আত্মহত্যা করেন। তাঁকে উৎসর্গ করে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসি নাভে এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন।

আসি নাভে বলেন, ‘দানির মৃত্যু আমাকে অনুভব করিয়েছিল—সে-ই শেষ নয়।’

এই খামার এখন দশকের পর দশক যুদ্ধফেরত সেনাদের জন্য এক প্রশান্ত আশ্রয়স্থল। এখানে তারা প্রচলিত কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি কুকুরসহ বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে থেরাপি নেন। চারদিকে পাখির ডাক আর মুরগির ডাকের প্রাকৃতিক পরিবেশে সাবেক সেনারা উদ্ধারকৃত প্রাণীদের সঙ্গে কাজ করেন—যেখানে মানুষ ও প্রাণী দুজনেই একে অপরকে সুস্থ হতে সাহায্য করে।

এই খামারের থেরাপি কার্যক্রমে পরামর্শদাতা মনোবিজ্ঞানী গাই ফ্লুম্যান বলেন, সেনাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নাগরিক জীবনে ফিরে খাপ খাওয়ানো। প্রাণীদের সঙ্গে থাকা তাঁদের মনকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের অতীতের স্মৃতিগুলো সামলাতে সাহায্য করতে হবে, যাতে তারা যা ঘটেছে তার সঙ্গে শান্তিতে থাকতে শিখে... এবং পাশাপাশি আবার জীবনের সঙ্গে সংযোগ খুঁজে পায়।’

গাজা ও পশ্চিম তীরে এক বছর মোতায়েন থাকা ৩১ বছর বয়সী এক সেনা বাড়ি ফিরে আরেক লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ভেঙে গেছে যত্নে গড়া সম্পর্কগুলো। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘মনে হতো আমি এখনো সেখানেই আছি। আমার শরীর এখানে, কিন্তু মন এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে রয়ে গেছে।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগের পরিচালক লিমোর লুরিয়া স্বীকার করেছেন, সেনাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি সামাজিক কলঙ্কতে পরিণত হয়েছে। এই কলঙ্ক দূর করতে কাজ চলছে।

লুরিয়া জানান, জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান, গণমাধ্যমে প্রচার এবং তরুণ যুদ্ধফেরতদের যুক্ত করতে পুনর্বাসন খামার ও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের মতো কর্মসূচি রয়েছে।

৩২ বছর বয়সী এক রিজার্ভ সেনা বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর দক্ষিণ ইসরায়েলে নিহতদের মরদেহ সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মা হন।

তিনি জানান, তার ফ্ল্যাশব্যাকগুলো মৃতদেহের দৃশ্য নয়, বরং গন্ধের সঙ্গে বেশি যুক্ত। এই সেনা বলেন, ‘আমি যেন সবসময় মৃতদেহের গন্ধ পাই। এমনকি নিজের সন্তানের ডায়াপার বদলানোর সময়ও সেই গন্ধ মনে পড়ে যায়।’

তিনি নিজেও একজন থেরাপিস্ট। তাই দ্রুতই বুঝতে পারেন, এটি পিটিএসডির (PTSD) লক্ষণ। এরপর চিকিৎসা নেন তিনি। এখন অন্য সেনাদেরও সহায়তা করছেন।

তাঁর মতে, সেনাদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মাঠপর্যায়ের কমান্ডারদের ভূমিকা।

ওই সেনা বলেন, ‘যখন কোনো কমান্ডার নিজেই বলেন, ‘তুমি সাহায্য নিতে পারো’। তখন বিষয়টা অনেক সহজ হয়। এতে ভয় বা সামাজিক কলঙ্ক কমে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত