Ajker Patrika

৬১ বছর পর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ছাড়লেন চোই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চোই মাল-জা। ছবি: এএফপি
চোই মাল-জা। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার এক নারী ৬১ বছর পর আদালতের রায়ে অবশেষে নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছেন। যৌন হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আক্রমণকারীর জিহ্বা কামড়ে কেটে ফেলার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে চোই মাল-জা গুরুতর শারীরিক ক্ষতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে সে সময় ১০ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে, তাঁর হামলাকারীকে মাত্র ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী হয়েও অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছিলেন চোই।

ঘটনাটি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার গিমহে শহরে। আদালতের নথি অনুযায়ী, ২১ বছর বয়সী এক যুবক চোইকে মাটিতে ফেলে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা চালান। আত্মরক্ষায় তিনি ওই যুবকের প্রায় দেড় সেন্টিমিটার জিহ্বা কামড় দিয়ে কেটে ফেলেন। কিন্তু আদালত তখন তাঁর এই পদক্ষেপকে ‘অতিরিক্ত’ বলে রায় দেন। শুধু তাই নয়, হামলাকারী ওই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টারও কোনো মামলা হয়নি, বরং তিনি ক্ষতিপূরণ চাইতে থাকেন এবং একবার ছুরি হাতে চোইয়ের বাড়িতেও হাজির হন।

এই ঘটনার পর দীর্ঘ সময় নীরব ছিলেন চোই। কিন্তু ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’ আন্দোলন তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি অধিকারকর্মীদের সহযোগিতায় বহু বছর আগের প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেন এবং পুনর্বিচারের আবেদন করেন। কয়েকবার নিম্ন আদালতে আবেদন খারিজ হলেও তিনি লড়াই চালিয়ে যান। অবশেষে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর মামলাটি পুনরায় খোলার অনুমতি দেন।

অবশেষে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান আদালত চোই মাল-জাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন। আদালতে প্রথম শুনানিতেই প্রসিকিউশন তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে দণ্ড বাতিলের সুপারিশ করেন। রায় ঘোষণার পর ৭৯ বছর বয়সী চোই আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমাকে ভুক্তভোগী থেকে অভিযুক্ত বানানো হয়েছিল। কিন্তু আমি লড়াই ছাড়িনি।’

চোইয়ের আইনজীবী কিম সু-জুং বলেন, অতীতের রায় ছিল ‘লিঙ্গবৈষম্য ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সৃষ্ট একটি ভ্রান্তি’। তিনি জানান, চোই এখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করবেন।

নারী অধিকার সংগঠন কোরিয়া উইমেন্স হটলাইন মনে করে, এই রায় যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সংগঠনের প্রধান সং রান-হি বলেন, ‘এখন থেকে নারীদের আত্মরক্ষার পদক্ষেপ বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি তাঁদের এই বার্তা দেবে যে—তোমার কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ, সাহস করে বলো।’

চোইয়ের মামলা দক্ষিণ কোরিয়ার আইন শাস্ত্রে বহুদিন ধরেই আলোচিত ছিল। এর আগে ১৯৮৮ সালে আনডং এবং ২০২০ সালে বুসানে যৌন হামলার দুটি ঘটনায়ও ভুক্তভোগী নারীরা হামলাকারীর জিহ্বা কামড়েছিলেন। দুই ক্ষেত্রেই আদালত তা আত্মরক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত