Ajker Patrika

বুধবার সকালে নেপালের রাজধানীতে যা দেখা গেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বুধবার সকালেরও জ্বলছিল সিংহ দরবার। ছবি: সেতুপতি
বুধবার সকালেরও জ্বলছিল সিংহ দরবার। ছবি: সেতুপতি

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার সকাল কিছুটা শান্ত মনে হলেও পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। ভোর থেকে এই শহরের প্রধান মোড়গুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে ভেতরের রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সেনারা। লাউডস্পিকারে তারা সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গলি ব্যবহার না করতে অনুরোধ করছে।

বুধবার এক সরেজমিন প্রতিবেদনে নেপালি সংবাদমাধ্যম ‘সেতুপতি’ জানিয়েছে—সকালে কিছু পেট্রল পাম্প, মুদি দোকান ও প্রয়োজনীয় ব্যবসা খোলা হলেও সকাল ৯টার পর এগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জ্বালিয়ে দেওয়া ট্রাফিক পোস্ট ও গাড়ির পোড়া ধ্বংসাবশেষ। পৌর পুলিশের চেষ্টা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ পোড়া টায়ার, নথিপত্র ও অন্যান্য জিনিস পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি জনবল ও সরঞ্জামের অভাবে।

ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র

এদিকে রাজধানীর বৌদ্ধ এলাকায় বুধবার সকালে বহু মানুষ ভিড় করেন আগের দিনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে। জেনারেশন জেড আন্দোলনকারীরা কাঠমান্ডুর অধিকাংশ পুলিশ দপ্তর ও পুলিশ পোস্টগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বৌদ্ধ স্তূপার সামনে থাকা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বুধবার সকালেও ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। হায়াত হোটেলের সামনে ভাটভাটেনি সুপার স্টোর প্রায় ১৯ ঘণ্টা ধরে জ্বলছে। সেনারা সকাল ৯টার পর সেখানে অবস্থান নিলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘরছাড়া। দাহ্য পদার্থ এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতির অভাব আশপাশের বাড়িঘরকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

চাবাহিল চকেও সেনারা ব্যাপক মোতায়েন করেছে। গনেশস্থান ও পশুপতি ক্যাম্পাসের প্রবেশপথ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গউশালা চকের রাস্তায় থাকা পুলিশ সুপারের কার্যালয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। পুলিশ সদস্যরা পাথর নিক্ষেপের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালাতে বাধ্য হয়।

লাজিমপাটের হিলটন হোটেল ২০ ঘণ্টা ধরে জ্বলছে। ফেডারেল সচিবালয়ের নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়েও নতুন করে আগুন লেগেছে।

সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা

নেপালের অভিযোগ তদন্ত কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন (বালুওয়াটার) এবং প্রেসিডেন্টের কার্যালয় (মহারাজগঞ্জ) সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সেনা সুরক্ষায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং নিশ্চিত করেছেন তাঁরা নিরাপদে আছেন।

সিংহ দরবার এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। পশ্চিম প্রাচীর ২০ ঘণ্টা ধরে জ্বলছে। বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় দপ্তর ধ্বংস হয়ে গেছে। নগর উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণ অধিদপ্তরও ভস্মীভূত। রাম শাহ পথে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানে ১০০ টিরও বেশি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট এখন শুধু ছাইয়ের স্তূপ। প্রায় ৬০ হাজার মামলার নথি পুড়ে গেছে, বাকি কাগজপত্র ছড়িয়ে রয়েছে সড়কে। নতুন করে নির্মিত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং মৈতিঘরের জেলা সরকারি কৌঁসুলি অফিসও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাড়তি নিরাপত্তা

সেনারা সিংহ দরবারের পশ্চিম গেটে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। মৈতিঘর থেকে আসা সড়কে গাড়ি ও পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কিছু এলাকায় তল্লাশিও চালানো হচ্ছে।

ধ্বংসযজ্ঞে জর্জরিত কাঠমান্ডুতে বুধবার সকাল কিছুটা নিস্তব্ধ হলেও আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। সেনা মোতায়েন ও ব্যারিকেডের মাঝে শহর যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মতো নিস্তেজ হয়ে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত