Ajker Patrika

দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল এবার ফিলিপাইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাজধানী ম্যানিলায় জড়ো হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানী ম্যানিলায় জড়ো হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

এবার বিক্ষোভে উত্তাল ফিলিপাইন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কোটি ডলারের দুর্নীতির প্রতিবাদে আজ রোববার রাজধানী ম্যানিলায় রাস্তায় নেমে এসেছে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটিই হতে পারে দেশটির সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা সহিংসতা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ফিলিপাইনের পতাকা ও বিভিন্ন সংবলিত ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করছেন প্রতিবাদকারীরা। এসব ব্যানারের কোনো কোনোটিতে লেখা ‘আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে বাড়াবাড়ি, এবার ওদের কারাগারে পাঠাও’। আন্দোলনকারীদের দাবি—অবিলম্বে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

অথিয়া ত্রিনিদাদ নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমরা অভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারি না। আর ওরা আমাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি কেনে, বিদেশে ঘুরতে যায়! খুবই খারাপ লাগে। আমরা এমন একটা সিস্টেম চাই যেখানে দেশের জনগণকে আর হেনস্তা হতে হবে না।’

এএফপির তথ্যমতে, রোববার সকাল পর্যন্ত ম্যানিলার লুনেটা পার্কে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে।

গত জুলাইয়ে, বার্ষিক ভাষণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ‘ভৌতিক অবকাঠামো কেলেঙ্কারি’র কথা প্রথম তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। তিনি জানান, প্রায় ৯ হাজার ৮৫৫টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে অনিয়ম পাওয়া গেছে, যেগুলোর মোট মূল্য ৫৪৫ বিলিয়ন পেসো (৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার)। তখন থেকেই এ নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। বন্যা নিয়ন্ত্রণে অবকাঠামো নির্মাণের নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যায় করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পরে তিনি এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেন। ক্ষোভ আরও চরমে ওঠে যখন জানা যায়, সারাহ ও প্যাসিফিকো ডিসকায়া নামের এক ধনী দম্পতির মালিকানাধীন একাধিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসব প্রকল্পের কাজ করছিল। ওই দম্পতির বিলাসবহুল জীবনযাপনের খবর দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হতে শুরু করে।

প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়র সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষ যে রাস্তায় নেমেছে, এতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। তাদের প্রতিবাদ করার পূর্ণ অধিকার আছে। তবে আমি চাই এটি হোক শান্তিপূর্ণ।” তিনি আরও জানান, সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সেনাবাহিনীকে ‘রেড অ্যালার্টে’ রাখা হয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক বার্নাবি লো ম্যানিলা থেকে জানিয়েছেন, বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে বিভিন্ন খ্রিষ্টান সংগঠন। বার্নাবি আরও বলেন, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে তারিখ ও স্থান নির্বাচনের মধ্যেও রয়েছে বিশেষ বার্তা। এটি মোটেই কাকতালীয় নয়।

লো বলেন, ‘২১ সেপ্টেম্বর সেই দিন, যেদিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন। আর আজকের এই বিক্ষোভ হচ্ছে সেই একই মহাসড়কে, যেখানে অতীতে দুই দফা গণআন্দোলন বা “পিপল পাওয়ার রেভল্যুশন” হয়েছিল।’

ফিলিপাইনের ইতিহাসে ওই মহাসড়ক প্রতিরোধ ও গণ-অভ্যুত্থানের প্রতীক হয়ে আছে। লো-এর মতে , বিক্ষোভকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন দিন ও স্থান বেছে নিয়েছেন, যা মানুষকে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। এর ফলে দুর্নীতিবিরোধী এই আন্দোলনের তাৎপর্য আরও গভীর হয়ে উঠেছে।

প্রতিবাদকারীরা বলছেন, প্রেসিডেন্টকে এবার এমন স্থায়ী সংস্কার আনতে হবে, যা দুর্নীতির সুযোগকে একেবারেই নির্মূল করবে। ২৩ বছরের নার্সিং শিক্ষার্থী আলি ভিলাহেরমোসা এএফপি-কে বলেন, ‘আমরা বারবার বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছি। যদি ঘোস্ট প্রকল্পের জন্য বাজেট থাকে, তবে স্বাস্থ্য খাতের জন্য কেন নেই? সরকারি টাকা চুরি করা নিছক লজ্জাজনক নয়, এটা আমাদের জীবন নিয়ে খেলা।’

গত চার বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় নানা ইস্যুতে বিক্ষোভ আর সেই বিক্ষোভের জেরে সরকার পতনের হাওয়া বইছে। চলতি বছরও নেপালে তরুণ প্রজন্ম জেন-জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন হয়েছে। বিক্ষোভে উত্তাল ছিল থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফুটবলাররা পানি না গিলে কুলি করেন কেন

দেড় বছরে পুলিশের যে ক্ষতি হয়েছে, ৫০ বছরেও পুনরুদ্ধার কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

রিজার্ভ চুরি: ফিলিপাইনের ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ

চট্টগ্রামে সিকদার বাড়িতে অভিযান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশে সম্পদ অর্জনের ২৩ বস্তা আলামত জব্দ

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জেগেছে বাংলাদেশের ফাইনালের স্বপ্ন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত