Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র, নিদ্রাহীন রাত

  • বৃহস্পতিবার কাশ্মীর লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল ক্ষেপণাস্ত্র। মানুষ রাত কাটিয়েছে রাস্তায়।
  • পাকিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্ত এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নিচ্ছে ভারত।
  • ভারতের অনেক শহরের মানুষ এখন গ্রামে চলে যেতে চাইছে।
  • ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভির সৌজন্য
ছবি: এনডিটিভির সৌজন্য

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরের একটি দোকানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আকিব। এটা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ঘটনা। তখন আকাশে দেখতে পান, ক্ষেপণাস্ত্র উড়ছে। এমনিতে সন্ধ্যা, তার ওপর ব্ল্যাকআউট। এর মধ্যে বিকট শব্দ শোনা গেল। মানুষ রাস্তায় ছোটাছুটি শুরু করল। ২৪ বছরের আকিব বললেন, আমরা দেখলাম আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ফুটে গেল। এদিকে ইন্টারনেট নেই। আমরা জম্মুতে এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি।

শুধু আকিব নন, এমন আতঙ্কজনক মুহূর্ত এপার-ওপার দুই পারের কাশ্মীরের মানুষেরাই পার করছে। তাদের জন্য রাতগুলো এখন নিদ্রাহীন। আকাশে ওড়ে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র। এমন পরিস্থিতি সম্প্রতি দেখা যায়নি।

ভারতের কাশ্মীর ও পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের দুই প্রজন্ম আসলে যুদ্ধ দেখেনি। তারা এমন ব্ল্যাকআউটও দেখেনি। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল। সে সময় হতাহতের সংখ্যা তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিল।

তবে এবারের হামলার পর পরিস্থিতি আগের চেয়ে গুরুতর বলেই অনেকে মনে করছেন। ভারতের সরকার প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনা মোতায়েন শুরু করেছে কাশ্মীরে। একই সঙ্গে দুই দেশের জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা মিলিয়ে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনো সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা নিচ্ছে না।

আল জাজিরার এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান এখন একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। দুই পক্ষেরই লাখ লাখ মানুষ এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি। শুধু জম্মুতে রয়েছে সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। এই মানুষগুলোসহ দেশের বিভিন্ন শহরের মানুষ সন্ধ্যায় রাস্তায় নেমে আসে গত বৃহস্পতিবার। কারণ তখন পাকিস্তান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল।

আল জাজিরা বলছে, পাকিস্তান থেকে জম্মুর বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। এসব এলাকার মধ্যে সাতওয়া, সাম্বাও ছিল। এ ছাড়া কাশ্মীরে যে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে সেগুলোর লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তান থেকে ছোড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এগুলোর কোনোটিই আঘাত হানতে সক্ষম হয়নি। কেউ আহত হননি।

যদিও পাকিস্তান এই হামলার কথা অস্বীকার করেছে। গত বৃহস্পতিবারই তারা বলেছে, তারা কোনো হামলা চালায়নি।

এবারের হামলার সূত্রপাত আসলে প্রায় ১৮ দিন আগে। সেই দিন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ২৬ পর্যটককে হত্যা করা হয়। এরপরই প্রতিশোধের ঘোষণা দেয় ভারত। পরে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় তারা।

বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যাওয়ার পর ভারতের পাঞ্জাব পুরো ব্ল্যাকআউট করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই পাঞ্জাবের অমৃতসরের বাসিন্দা ববরপ্রিত সিং। তিনি বলেন, ‘মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু বদলে যায়। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমার একবার মনে হচ্ছিল, শহর ছেড়ে কোথাও চলে যাই।’

হামলার আশঙ্কা থেকে গত বুধবার গুজরাটের কয়েকটি শহর ব্ল্যাকআউট করে দেওয়া হয়। এমন ঘটনা পাকিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া রাজস্থানের সীমান্তে। এমন সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি খুব খারাপ। সীমান্তে দুই দেশের বাহিনী গোলা ছুড়ছে। আর সাধারণ মানুষ হতাহত হচ্ছে। পাকিস্তানের বাহিনী গুলি চালালে সীমান্ত থেকে রাতেই লোকজন সরিয়ে নেয় ভারতীয় বাহিনী। এখন পরিস্থিতি এমন, যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে হামলা হতে পারে। এজন্য ভয়ে আছে সাধারণ মানুষ। তাই অনেকেই রাত পার করছে না-ঘুমিয়ে।

ভারতীয় গণমাধ্যম বন্ধ

ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে দ্য ওয়্যার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০০০-এর অধীনে ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করেছে।

নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগ এনে ‘দ্য ওয়্যার’ দাবি করেছে, ভারত সরকার সারা দেশে তাদের ওয়েবসাইটের অ্যাকসেস ব্লক করে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত