Ajker Patrika

যেভাবে গহিন আমাজনে ৪০ দিন বেঁচে ছিল বিমান দুর্ঘটনাকবলিত ৪ শিশু

আপডেট : ১০ জুন ২০২৩, ১৯: ২২
যেভাবে গহিন আমাজনে ৪০ দিন বেঁচে ছিল বিমান দুর্ঘটনাকবলিত ৪ শিশু

দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর আমাজন জঙ্গল থেকে কলম্বিয়ার চার শিশুকে উদ্ধারের ঘটনাটি সাড়া ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। উদ্ধার হওয়া শিশুদের মধ্যে বয়সে সবার বড় ছিল ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী। বাকি তিনজনের বয়স যথাক্রমে ৯, ৪ ও ১ বছর। 

শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এক টুইটের মাধ্যমে খবরটি প্রথম প্রচার করেন। পরে গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে পেত্রো বলেন, ‘আজকের দিনটি জাদুময়। শিশুরা এখন দুর্বল। চিকিৎসকেরা তাদের সারিয়ে তোলার কাজটি করুক।’

কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও উদ্ধার অভিযানের একটি ভিডিওচিত্র শেয়ার করে। এতে দেখা যায়, বড় বড় গাছবেষ্টিত একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান থেকে শিশুদের উদ্ধারের পর হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে। 

জানা যায়, উদ্ধার হওয়া চার শিশু কলম্বিয়ার হুইটুটু আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের বহনকারী বিমানটি গত ১ মে আমাজন জঙ্গলের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয়। কলম্বিয়ার স্যান জোস দেল গুয়াভারে শহর থেকে আমাজন জঙ্গলের সাড়ে তিন শ কিলোমিটার ভেতরে আরাকোয়ারা নামক একটি এলাকা থেকে বিমানটি উড্ডয়ন করেছিল। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানের পাইলট ইঞ্জিনে ত্রুটির কথা জানিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। 

উদ্ধার অভিযানে বিমানের পাইলট, শিশুদের মা এবং স্থানীয় একজন নেতার মরদেহ দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে বিমানটি গাছের সঙ্গে উলম্বভাবে পড়েছিল। 

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, বিমানে অবস্থান করা বয়স্ক সবাই নিহত হলেও চারটি শিশু কীভাবে শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেল! কারণ, যেখানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় সেই এলাকাটি হিংস্র জাগুয়ার, বিষধর সাপসহ আরও ভয়ংকর সব প্রাণীর আবাসস্থল। এ ছাড়া ওই এলাকাটিতে কিছু অস্ত্রধারী মাদক চোরাচালান গ্রুপও সক্রিয়। 

এমন বিরুদ্ধ পরিবেশে শিশুদের টিকে থাকার বিষয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের দাদা ফিদেন্সিও ভ্যালেন্সিয়া। তিনি জানান, হুইটুটু আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা শৈশবেই শিকার, মাছ ধরা এবং খাদ্য সংগ্রহের বিষয়গুলোতে দক্ষ হয়ে ওঠে। উদ্ধার হওয়া শিশুরাও জঙ্গলের পরিবেশের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত ছিল। 

দুর্ঘটনাস্থলে বিমানটি গাছের সঙ্গে উলম্বভাবে পড়েছিল। শিশুদের দাদি ফাতিমা ভ্যালেন্সিয়া মনে করেন, তাদের টিকে থাকার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে দলে থাকা ১৩ বছর বয়সী বালিকাটি। বড় বোন হিসেবে বাকিদের দেখভালের দায়িত্ব নিজ থেকেই সে কাঁধে তুলে নিয়েছিল। হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে বাকি তিনজনকে সুরক্ষিত রাখতে জঙ্গলের জ্ঞান সে কাজে লাগিয়েছিল। 

বিবিসিকে দাদি ফাতিমা জানান, বাচ্চাদের লালন-পালনের বিষয়ে ওই কিশোরীর কিছু পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল। কারণ, মা কাজে ব্যস্ত থাকলে বাচ্চাদের সামলে রাখার দায়িত্বটি অনেক সময় তাকেই সামলাতে হতো। 

দাদি আরও জানান, বিমানের মধ্যে থাকা ময়দা ও কাসাভা রুটি ভাগাভাগি করে খেয়েছিল ওই চার শিশু। আর ঝোপঝাড় থেকে তারা কিছু ফলমূলও সংগ্রহ করতে পেরেছিল। এসব ফলমূলের কোনগুলো খাওয়ার যোগ্য, তা বড় বোনটি ভালো করেই জানত। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে চার ভাইবোন থাকার মতো একটি পরিবেশ করে নিয়েছিল এবং তারা উদ্ধারকারী দলের অপেক্ষায় ছিল। 

এদিকে উদ্ধারকারী দলের আশঙ্কা ছিল, বেঁচে থাকলে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মধ্যে হয়তো ভয় বাড়তে থাকবে। ঘটনাস্থল থেকে তারা দূরে সরে যাবে। যার ফলে তাদের খুঁজে বের করাও কঠিন হয়ে যাবে। 

১৬০ জন সেনা এবং ৭০ জন আদিবাসীর সমন্বয়ে উদ্ধারকারী দলটি শিশুদের খুঁজে পেতে অন্তত ১০ হাজার লিফলেট ফেলেছিল জঙ্গলে। এ ছাড়া অসংখ্য খাবারের বাক্স এবং পানির বোতলও ফেলা হয়েছিল সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে। 

শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে শিশুদের খুঁজে পায় তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত