Ajker Patrika

ঢাকা শহর থেকেও ছোট যেসব দেশ

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ১২
ঢাকা শহর থেকেও ছোট যেসব দেশ

আমাদের এই ঢাকা শহর বিপুল জনসংখ্যার ভারে রীতিমতো বিপর্যস্ত। তবে আয়তনে যে খুব বিশাল তা নয়। দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ৩০৫ বর্গকিলোমিটারের কিছু বেশি ঢাকার আয়তন। শুনে অবাক হবেন, পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ আছে, যেগুলো আকারে ঢাকা শহর থেকেও ছোট। এই দেশগুলোর সঙ্গেই পরিচিত হব আজ।

জনসংখ্যা ও আয়তন দুই দিক থেকেই ভ্যাটিকান সিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্বীকৃত রাষ্ট্র। ইতালির রোমের মধ্যে অবস্থিত দেশটির আয়তন মোট ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার। এদিকে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিওর দেওয়া তথ্য বলছে, ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা ৫০০ ছুঁই ছুঁই।

১৯২৯ সালে যখন ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, একই সময়ে ইতালিতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। পোপের বাসস্থান এবং পবিত্র তীর্থস্থান হওয়ার পাশাপাশি সিস্টিন চ্যাপেল, সেন্ট পিটার্স স্কয়ার ও সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা এখানকার দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

কম জনসংখ্যার দেশ হলেও মোনাকো খুব ঘনবসতিপূর্ণ এক দেশ২. মোনাকো

ভ্যাটিকান সিটির মতো মোনাকোর অবস্থানও ইউরোপ মহাদেশে। ৩৭ হাজারের আশপাশে (আনুমানিক ৩৬ হাজার ৩১৩) এর জনসংখ্যা। আয়তন মোটে ২ বর্গকিলোমিটার। স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে কেবল ভ্যাটিকান সিটি এর চেয়ে ছোট। তাই মোনাকো রীতিমতো ঘনবসতিপূর্ণ এক দেশ।

ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত দেশটিতে আছে দুটি বন্দর। আর তিন দিক থেকেই একে ঘিরে আছে ফ্রান্স। ইতালির সীমানাও বেশি দূরে নয়, মাত্র ১০ মাইল। পর্যটকদেরও প্রিয় গন্তব্য এই মোনাকো।

ক্যাসিনো ও ফর্মুলা ওয়ান রেসের জন্য বিখ্যাত মোনাকো ধনকুবেরদের খুব প্রিয় জায়গা।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা নউরুর ছবি। উইকিপিডিয়া৩. নউরু

বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ নউরু পড়েছে ওশেনিয়ায়। মোটে ২১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটি জাপান থেকে স্বাধীনতা পায় ১৯৬৮ সালে। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য বলছে, নউরুর জনসংখ্যা ১২ হাজারের কাছাকাছি।

কেবল একটি মাত্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটি তার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। এর প্রবালপ্রাচীর ও পামগাছে ভরপুর সমুদ্রসৈকত আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ৯টি প্রবাল অ্যাটোল নিয়ে গঠিত হয়েছে ট্যুভ্যালু। ছবি: উইকিপিডিয়া৪. ট্যুভ্যালু

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ৯টি প্রবাল অ্যাটোল নিয়ে গঠিত হয়েছে দেশটি। এই দ্বীপগুলো মিলিয়ে দেশটির আয়তন ২৬ বর্গকিলোমিটারের মতো, যা একে আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে ট্যুভ্যালুর জনসংখ্যা ১১ হাজারের বেশি।

১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ওশেনিয়ার দেশটি। মজার ঘটনা, কমনওয়েলথভুক্ত ছোট্ট এই দেশে জন্মের পর থেকেই কোনো সামরিক বাহিনী নেই। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও সাগরে টহলের জন্য মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট আছে। 

দেশটির অর্থনীতি মাছ ধরা, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। প্রবালপ্রাচীর, চমৎকার সব সৈকত ও সাগরের নীল জল এবং বন্ধুভাবাপন্ন অধিবাসী মিলিয়ে দেশটি পর্যটকদের খুব পছন্দের।

মধ্যযুগের বিভিন্ন স্থাপত্য কীর্তির জন্য বিখ্যাত ইউরোপের দেশ সান মেরিনো। ছবি: পিক্সাবে৫. সান মেরিনো

ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছোট্ট এই দেশের আয়তন মোটে ৬১ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৩৩ হাজারের কিছু বেশি। মধ্যযুগের বিভিন্ন স্থাপত্যকীর্তির জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সান মেরিনো। চারপাশ থেকেই খুদে দেশটিকে ঘিরে আছে ইতালি

মন্তে তিতানো পর্বতের ঢালে অবস্থিত দেশটির রাজধানীর নামও সান মেরিনো। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো রাষ্ট্রগুলোর একটি সান মেরিনো। দেশটিতে জনসংখ্যার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য আলাদা নাম আছে লিচস্টেনটাইনের। ছবি: পিক্সাবে৬. লিচটেনস্টেইন

রাটিকন পর্বতমালার পাদদেশে ছোট-বড় পাহাড় এবং ২ হাজার ৫৯৯ মিটার উঁচু চূড়া গ্রসপিটজের জন্য আলাদা নাম আছে লিচটেনস্টেইনের। দেশটির মোট আয়তন ১৬০ বর্গকিলোমিটারের তিন ভাগের দুই ভাগ দখল করে আছে এই পাহাড়গুলো। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম দেশ এটি।

লিচটেনস্টাইনের জনসংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। আকারে ছোট হলে কী হবে, আল্পস পর্বতমালার কিছুটা অংশ দেশটির সীমানায় পড়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য আলাদা নাম আছে এর। এখানকার ভাদুজ দুর্গও টানে পর্যটকদের।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২২৯টি দ্বীপ আছে৭. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ

ওশেনিয়ায় অবস্থিত মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ৫টি তুলনামূলক বড় দ্বীপ ও ২৯টি অ্যাটোল (প্রবালপ্রাচীর বেষ্টিত উপহ্রদ) নিয়ে গঠিত। দেশটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ২২৯টি দ্বীপ আছে। এগুলোর বেশির ভাগ আয়তনে যে একেবারে ছোট তার প্রমাণ, সবগুলো দ্বীপ মিলিয়ে আয়তন ১৮১ বর্গ কিলোমিটার। 

৪২ হাজারের আশপাশে জনসংখ্যা। পারমাণবিক পরীক্ষার জন্য পরিচিত বিকিনি অ্যাটল কিন্তু এই দ্বীপপুঞ্জের অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার আগে জাপান, জার্মানি ও স্পেনের অধীনে কয়েক শ বছর কাটায় মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ।

দুইটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস৮. সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস

দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস। আয়তনে বিশ্বের অষ্টম ক্ষুদ্রতম দেশ এটি। ২৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে সেন্ট কিটস দ্বীপের আয়তন ১৬৮ বর্গকিলোমিটার এবং নেভিস দ্বীপ ৯৩ বর্গকিলোমিটার। 

জনসংখ্যা জাতিসংঘের হিসাবে ৪৭ হাজারের আশপাশে। এদিক থেকেও এটি পৃথিবীর খুদে রাষ্ট্রগুলোর একটি।

যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৮৩ সালে। অবশ্য আলাদা দেশ গঠনের চেষ্টায় নেভিসে ১৯৯৮ সালে একটি গণভোট হয়। তবে আলাদা হওয়ার পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন না মেলায় সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস নামটিরও পরিবর্তন আসেনি।

পর্যটকদের কাছে বেশ পছন্দের গন্তব্য ছোট্ট এই দেশ। ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ব্রিমস্টোন হিল ফোর্টরেস ন্যাশনাল পার্কের বড় অবদান আছে এ ক্ষেত্রে। 

পর্যটকদের খুব পছন্দের গন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগরের প্রায় ১ হাজার ২০০ প্রবালদ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা দেশটির আয়তন মোটে ২৯৮ বর্গকিলোমিটার, যা একে আয়তনে বিশ্বের নবম ক্ষুদ্রতম দেশে পরিণত করেছে।

তবে ছোট্ট এই দেশ ঘনবসতিপূর্ণ। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিওর দেওয়া তথ্য বলছে বর্তমানে মালদ্বীপের জনসংখ্যা সোয়া পাঁচ লাখের কিছু বেশি। দেশটি তার দৃষ্টিনন্দন সব সৈকত, সাগরের নীল জলরাশি এবং পানির ওপরের বিলাসবহুল সব বাংলোর জন্য পর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্য।

ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত মাল্টার অবস্থান খুদে দেশের তালিকায় বিশ্বে দশম। ৩১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির জনসংখ্যা ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিও অনুসারে ৫ লাখ ৪০ হাজারের কাছাকাছি। সে হিসাবে আয়তনে দেশটি ঢাকা শহরের কিছুটা বড়ই হবে। তার পরও কাছাকাছি আয়তনের হওয়ায় একেও রাখা হলো তালিকায়।

ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়। আর দেশটি অনেকাংশেই পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। তবে দেশটিতে কোনো নদী বা হ্রদ নেই। ভূগর্ভস্থ পানির উৎস ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের মাধ্যমে স্বাদু পানির চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হয়।

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, উইকিপিডিয়া

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত