Ajker Patrika

প্রতি ৭ মিনিটে মৃত্যু এক প্রসূতির, নারীরা জীবন দিয়ে মা হন যে দেশে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১৮: ০৫
সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। ছবি: এএফপি
সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। ছবি: এএফপি

সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন নাফি সালাহু। তখন তাঁর বয়স ২৪ বছর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় মরতে বসেছিলাম। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি ছিল না!’

তিনি যখন প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন, ঠিক তখনই নাইজেরিয়ায় চলছিল চিকিৎসকদের ধর্মঘট। ফলে সন্তান প্রসবে মেডিকেল সহায়তা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। নাফিসা জানান, প্রায় তিন দিন অবর্ণনীয় যন্ত্রণা তিনি সয়েছেন। প্রসবপথে আটকে গিয়েছিল সন্তানের মাথা। সেভাবেই কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার কিংবা ওষুধ ছাড়া পড়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। তিন দিন পর এক চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি সি সেকশন করতে রাজি হন। নাফিসা সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও সন্তানটি বাঁচেনি!

নাফিসা বলেন, ‘এ ঘটনার ১২ বছর পর আমি মা হয়েছি। কয়েকবার সন্তান হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। জানতাম, আমি জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু তখন আর ভয় লাগত না। প্রথম ডেলিভারির সময় যা সয়েছি, এরপর আর কত কষ্টই হতে পারে আমার!’

জরিপ বলছে, নাইজেরিয়ায় প্রতি সাত মিনিটে গড়ে একজন নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। সন্তান জন্মদানের জন্য নাইজেরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জাতিসংঘের সর্বশেষ (২০২৩ সালের) তথ্য অনুযায়ী, নাইজেরিয়ায় প্রতি ১০০ জন প্রসূতির মধ্যে একজন মারা যান প্রসবকালে বা এর পরপরই। ২০২৩ সালে বিশ্বের মোট মাতৃমৃত্যুর প্রায় ২৯ শতাংশই ঘটেছে নাইজেরিয়ায়। সংখ্যায় তা প্রায় ৭৫ হাজার।

পাঁচ বছর আগে হাসপাতালেই সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান চিনেনে এনওয়েজি। অনেকের জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণার বিষয় হলো—এই ধরনের বহু মৃত্যু—বিশেষ করে প্রসবপরবর্তী রক্তপাতের মতো কারণে হওয়া মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য। ৩৬ বছর বয়সী এনওয়েজি দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ার ওনিৎশা শহরের একটি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর ভাই হেনরি আদেহ বলেন, ‘চিকিৎসকেরা রক্ত চাচ্ছিলেন, কিন্তু যতটুকু জোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল তা যথেষ্ট ছিল না। রক্ত জোগাড় করতে আমরা সবাই ছোটাছুটি করছিলাম। বোনকে হারিয়ে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি। আমার শত্রুরও যেন এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না হয়। এটা সহ্য করার মতো নয়, মেনে নেওয়ার মতো নয়!’

মাতৃমৃত্যুর আরও কিছু সাধারণ কারণ হলো প্রসবকালে জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও অনিরাপদ গর্ভপাত। ইউনিসেফ নাইজেরিয়া অফিসের কর্মকর্তা মার্টিন ডলস্টেন বলেন, এই ‘অত্যন্ত উচ্চ’ মাতৃমৃত্যু হার একাধিক জটিল কারণের ফল। এর মধ্যে রয়েছে—দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো, চিকিৎসকের অভাব, ব্যয়বহুল চিকিৎসা, কুসংস্কার ও নিরাপত্তাহীনতা।

উইমেন অব পারপাস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের জাতীয় সমন্বয়কারী মাবেল অনউয়েমেনা বলেন, ‘সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু—কোনো নারীরই ভাগ্য হতে পারে না। কিন্তু নাইজেরিয়ার গ্রামাঞ্চলের নারীরা এখনো অনেক কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। তাঁদের ধারণা, হাসপাতালে যাওয়ার অর্থ সময়ের অপচয়। তাঁরা গাছগাছড়া ও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পদ্ধতির ওপর ভরসা করেন। যে কারণে জরুরি চিকিৎসা বিলম্বিত হয়ে পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়।’

আবার দুর্গম পথের নানা কারণে অনেকের জন্য সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে তাঁরা যদি কোনোভাবে পৌঁছাতেও পারেন, তারপরেও বিপত্তির শেষ নেই। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধ বা প্রশিক্ষিত কর্মী—ফলে মানসম্পন্ন চিকিৎসা তাঁরা পান না।

নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে—যেটি ২০০১ সালে আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে করা চুক্তিতে প্রতিশ্রুত ১৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম। ২০২১ সালে নাইজেরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২১ কোটি ৮০ লাখ, কিন্তু সে সময় দেশে মাত্র ১ লাখ ২১ হাজার ধাত্রী (মিডওয়াইফ) ছিলেন। সে বছর গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের অর্ধেকেরও কম একজন দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ করা মান অর্জনের জন্য নাইজেরিয়ায় আরও প্রায় ৭ লাখ নার্স ও ধাত্রী প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশটির চিকিৎসক সংকটও ভয়াবহ। এই ভয়াবহ জনবল ও অবকাঠামো ঘাটতির ফলে অনেকেই হাসপাতাল বা ক্লিনিকমুখী হতে চান না।

জামিলা ইসহাক নামের এক নারী বলেন, ‘আমি আসলে হাসপাতালের ওপর তেমন ভরসা করি না, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে গাফিলতি এত বেশি শুনেছি যে ভয় লাগে। আমার চতুর্থ সন্তানের সময় প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় ধাত্রী আমাদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখি, সেখানে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী নেই। তখন বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়িতেই সন্তান জন্ম হয়।’

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কানো রাজ্যের এই বাসিন্দা এখন পঞ্চম সন্তানে জন্ম দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বেসরকারি ক্লিনিকে যাওয়ার কথা ভাবছি, কিন্তু খরচ এত বেশি যে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’

নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ড. নান্না সান্দাহ-আবুবাকার স্বীকার করেছেন যে দেশের মাতৃমৃত্যু পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে তিনি জানান, এই সংকট মোকাবিলায় সরকার নতুন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নাইজেরিয়া সরকার ম্যাটারনাল মোরালিটি রিডাকশন ইনোভেশন ইনিশিয়েটিভ—মামি নামে একটি প্রকল্পের পাইলট পর্যায় চালু করে। এই কর্মসূচিটি ধাপে ধাপে দেশের ৩৩টি রাজ্যের ১৭২টি স্থানীয় সরকার অঞ্চলে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দেশের অর্ধেকের বেশি প্রসবসংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

ড. সান্দাহ-আবুবাকার বলেন, ‘আমরা প্রতিটি গর্ভবতী নারীকে শনাক্ত করি, জানি তাঁরা কোথায় থাকেন এবং তাঁদের গর্ভের সময়, প্রসব এবং পরবর্তী সময়টিতে সহায়তা করি।’ এখন পর্যন্ত ছয়টি রাজ্যে জরিপ চালিয়ে ৪ লাখ গর্ভবতী নারীর খোঁজ পাওয়া গেছে এবং তাঁদের সম্পর্কে জানা গেছে তাঁরা অ্যান্টিনেটাল ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন কি না। তাঁর মতে, পরবর্তী ধাপে এই নারীদের প্রয়োজনীয় সেবা ও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তাঁরা নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারেন।

মামি প্রকল্প স্থানীয় পরিবহন নেটওয়ার্কের সঙ্গেও কাজ করবে, যাতে আরও বেশি নারী ক্লিনিকে পৌঁছাতে পারেন এবং স্বল্পমূল্যের সরকারি স্বাস্থ্যবিমায় অন্তর্ভুক্ত হতে উৎসাহিত হন। যদিও এই কর্মসূচির বাস্তব ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়, তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নাইজেরিয়াও একসময় বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি বেড়ে যাওয়ায় ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে মাতৃমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নাইজেরিয়ায়ও এই সময়ের মধ্যে কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে মাত্র ১৩ শতাংশ।

মামি বা অন্যান্য উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার—বিশেষ করে বাজেট বরাদ্দ ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। ইউনিসেফের প্রতিনিধি মার্টিন ডলস্টেন বলেন, ‘এই উদ্যোগগুলো সফল হবে কি না, তা নির্ভর করবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন ও নিয়মিত নজরদারির ওপর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিবিসির ডিজিকে কেন পদত্যাগ করতে হলো, ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে এডিট করার দায় নিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে এডিট করার দায় নিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। ওই বক্তৃতায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিলে) দাঙ্গার আগের ঘটনা নিয়ে তৈরি বিবিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল।

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা টারনেস হঠাৎই পদত্যাগ করেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। বিবিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

গত সপ্তাহে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানায়, গত গ্রীষ্মে বিবিসির সম্পাদনা মানদণ্ড কমিটির পরামর্শক মাইকেল প্রেসকট এক অভ্যন্তরীণ নোটে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। নোটটি থেকেই ফাঁস হয় বিতর্কিত সম্পাদনার অভিযোগ। সাবেক সাংবাদিক প্রেসকট দাবি করেন, ‘Trump: A Second Chance?’ নামের বিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পের দুটি বক্তব্য একত্রে দেখানো হয়। এই বক্তব্য দুটি প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এতে বোঝানো হয়, ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন—‘পুরোদমে লড়াই করো।’

কিন্তু আসল বক্তব্যে ট্রাম্প কেবল বলেন, ‘আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দিতে যাচ্ছি।’ সে সময় ট্রাম্প তখনও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী জয়ের বিরোধিতা করছিলেন। প্রেসকট আরও অভিযোগ করেন, বিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার নিয়ে বিতর্কিত কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছে এবং বিবিসি অ্যারাবিক এমন এক সাংবাদিককে প্রচারের সুযোগ দিয়েছে যিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন।

বিশ্বজুড়ে ২১ হাজার কর্মী নিয়ে বিবিসি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক সার্ভিস সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের প্রদত্ত টিভি লাইসেন্স ফি থেকে পরিচালিত হয়, সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক আয়ও রয়েছে। সংবাদ থেকে শুরু করে বিনোদন—সব ধরনের বিষয়েই তাদের আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন প্রকাশের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বিবিসিকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ’ বলে সমালোচনা করেন। ট্রাম্পও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সাংবাদিকরা এবার ধরা পড়েছে। তারা নির্বাচনের ফল পাল্টাতে চেয়েছিল, তারা অত্যন্ত অসৎ মানুষ।’

এদিকে, যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়ামন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বলেন, এই অভিযোগগুলো ‘অত্যন্ত গুরুতর।’ বিবিসির প্যানোরামা প্রোগ্রামের ঘটনাই শুধু নয়, পুরো সংবাদ সংস্থার সম্পাদকীয় মানদণ্ড নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখানে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—বিবিসির প্রতিবেদনে হয়তো একটি পদ্ধতিগত পক্ষপাত আছে।’

ন্যান্ডি আরও বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে—বিবিসির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভাষা ও মানদণ্ড অনেক সময় একরকম থাকে না—চাই সেটা ইসরায়েল-গাজা প্রসঙ্গ হোক, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু হোক বা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কিত বিষয়ই হোক।

এর আগেও এ বছর বিবিসি ‘Gaza: How To Survive A Warzone’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্রের ‘গুরুতর ত্রুটি’ স্বীকার করে ক্ষমা চায়। অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে শাস্তি পায়। কারণ, তাদের আরেকটি প্রোগ্রামকে ‘গুরুতরভাবে বিভ্রান্তিকর’ বলা হয়েছিল। পরে জানা যায়, সেই প্রামাণ্যচিত্রে যে শিশুর কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা ছিল হামাসের সাবেক উপ-কৃষিমন্ত্রীর সন্তানের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারে শাটডাউন: একদিনে ৩৩০০ ফ্লাইট বাতিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সরকারি অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ছবিটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের। ছবি: এএফপি
সরকারি অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ছবিটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ চলাচলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মার্কিন সরকারে চলমান শাটডাউন বা অচলাবস্থার কারণে দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইনস ৩ হাজার ৩০০ টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এক শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে ‘বিমান চলাচল প্রায় বন্ধের পর্যায়ে নেমে আসতে পারে।’

স্থানীয় সময় গতকাল রোববার এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। আর ঠিক সেই সময়ই তহবিল বিল পাস নিয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার ৪০ তম দিনে এসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সরকার পুনরায় চালু করতে অস্থায়ী এক চুক্তিতে পৌঁছায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ক্লান্তি ও অনুপস্থিত কর্মীদের কারণে ফ্লাইট সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। অনেক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (বিমান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা) অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বেতন না পাওয়ায় কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

মোট ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে ‘অপরিহার্য কর্মী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারের শাটডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে তারা বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার জানায়, কেবল রোববারই যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ৩০৪টি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং ১০ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। শনিবার বাতিল হয়েছিল আরও ১ হাজার ৫০০ টির বেশি ফ্লাইট, শুক্রবার প্রায় ১ হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।

এফএএ-এর ধাপে ধাপে ফ্লাইট কমানোর নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ৪ শতাংশ কমানো হয়। সোমবার থেকে তা ৬ শতাংশ, বৃহস্পতিবারে ৮ শতাংশ, আর শুক্রবারে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে।

রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি সতর্ক করেন, থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটির আগে বিমান চলাচল একেবারেই স্থবির হয়ে যেতে পারে। তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ঘনিয়ে এলে সবাই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভ্রমণে বের হবে। তখন বিমান চলাচল প্রায় থেমে যাবে।’ ডাফি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। যত দিন পর্যন্ত বিমান নিয়ন্ত্রকদের বেতন দেওয়া না হয়, তত দিন এটি আরও খারাপ হবে।’

থ্যাঙ্কসগিভিং যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। ২০২৪ সালে এই সময় প্রায় ৮ কোটি মানুষ ভ্রমণ করেছিলেন। শুধু ছুটির পরের রোববারেই বিমানবন্দরে প্রায় ৩১ লাখ যাত্রী চলাচল করেছিলেন, যা ছিল রেকর্ড।

এদিকে, মার্কিন সিনেটররা জানিয়েছেন—তারা সরকার পরিচালনায় অর্থায়ন পুনরায় চালু করার বিষয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে—এমন এক অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছেছেন। রোববার রাতে সিনেট সেই বিলের প্রাথমিক ভোটাভুটি শুরু হয়। কয়েকজন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট জানান, তারা রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভোট দিয়ে সরকার পুনরায় চালু করার পক্ষে যাবেন।

তবে এই বিল কার্যকর করতে হলে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে তা পাস হতে হবে এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর লাগবে। তাহলেই সরকার বন্ধের অবসান ঘটবে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—সরকার পুনরায় খুললেও বিমান চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক হবে কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতি: বিবিসির মহাপরিচালক ও হেড অব নিউজের একযোগে পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ আরেক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার পর ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, ডেভি ও টারনেসের পদত্যাগ বিবিসিতে পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে। ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

ডেবোরা টারনেস রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, প্যানোরামা বিতর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যা বিবিসির ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতিষ্ঠানে নেতাদের পূর্ণ জবাবদিহি থাকতে হয়। তাই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। কিছু ভুল হয়েছে, তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—বিবিসি নিউজ প্রতিষ্ঠানগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট—এই অভিযোগ সঠিক নয়।’ টারনেস গত তিন বছর ধরে বিবিসির নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

টেলিগ্রাফের প্রকাশিত নথিতে আরও বলা হয়, বিবিসি আরবির ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’র কথাও উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রচারযন্ত্র।’ সম্প্রতি সম্প্রচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি দুইটি ভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে দেখিয়েছে, যেন ট্রাম্প সমর্থকদের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার আগে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ‘প্রাণপণে লড়তে’ বলছেন। কিন্তু ভাষণের যে অংশে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশপ্রেমিকের মতো নিজেদের মত প্রকাশের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। ভাষণের এই দুই অংশ মূলত প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুল্ক থেকে আয়ের ২০০০ ডলার করে জনগণকে দেবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের সব নাগরিককে ২০০০ ডলার করে ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তা থেকে অর্জিত অর্থ থেকে এই ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার আবারও আমেরিকান নাগরিকদের ২ হাজার ডলার করে ‘ডিভিডেন্ড’ বা ‘লভ্যাংশ’ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ অর্থ আসবে এই বছর শুল্ক থেকে সরকারের তোলা বিলিয়ন ডলার রাজস্ব থেকে। বিষয়টি তিনি বহুবার বলেছেন, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করেননি।

ট্রাম্প আবারও তাঁর শুল্কনীতি নিয়ে সরব হয়েছেন এমন এক সময়, যখন বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বড় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। পাশাপাশি, সাম্প্রতিক নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বড় ধাক্কা লেগেছে। যেখানে ভোটাররা মূল্যস্ফীতির জন্য তাদের দায়ী করেছেন, যা আংশিকভাবে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ফল।

ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ট্রিলিয়ন ডলার আয় করছি এবং শিগগিরই ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ পরিশোধ শুরু করব। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন কারখানা গড়ে উঠছে সর্বত্র।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্য অন্তত ২ হাজার ডলারের একটি ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে (অবশ্যই উচ্চ আয়ের মানুষ ছাড়া)।’

এর আগে, এই সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক আইনগতভাবে বৈধ কি না, তা নিয়ে শুনানি হয়। বিচারপতিরা শুনানিতে ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, এই শুল্ক আসলে রাজস্ব সংগ্রহের এক প্রকার করের মতো কাজ করেছে—বাণিজ্য ভারসাম্যজনিত কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে নয়।

যদি আদালত শেষ পর্যন্ত রায় দেয় যে এসব শুল্ক অবৈধ ছিল, তাহলে সরকারকে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আমদানিকারকদের ফেরত দিতে হতে পারে। রোববার এবিসি নিউজের দিস উইক—অনুষ্ঠানে ট্রেজারি সচিব বা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, শুল্কের উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনা।

ট্রাম্প এই বছর একাধিকবার এমন ‘শুল্ক ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি নির্দিষ্টভাবে ২ হাজার ডলার পরিমাণের কথাই বলছেন। সুপ্রিম কোর্ট কবে এই শুল্ক মামলার রায় দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি আদালত শুল্ক বহাল রাখে, তাহলে নতুন প্রশ্ন উঠবে—এই ডিভিডেন্ড দেওয়ার অনুমোদন আদৌ আছে কি না, কারা এটি পাবেন, আর এতে সরকারের ঋণ পরিশোধের প্রচেষ্টায় কতটা প্রভাব পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত