Ajker Patrika

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চল: জাতিসংঘ

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চল: জাতিসংঘ


ঢাকা: ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চল দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ পরিচালিত দেশটির পরিস্থিতির এক পর্যালোচনার বরাত দিয়ে সংস্থাটির মানবিকতা বিষয়ক বিভাগের প্রধান মার্ক লোকক আজ বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।

এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে মার্ক লোকক বলেন, ‌সেখানে (ইথিওপিয়ায়) এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। এটা আরও বাজে আকার ধারন করবে।'

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চল এবং এর আশপাশের আমহারা ও আফার অঞ্চলের ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে এক পর্যালোচনায় জানিয়েছে জাতিসংঘের দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে তাইগ্রে এখন আক্ষরিক অর্থেই বিধ্বস্ত। সেখানকার মানুষ এখন এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আইপিসি বলছে, অঞ্চলটির খাদ্য পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। বিস্তুত অঞ্চলে অল্প কিছু জনগোষ্ঠী বিচ্ছিন্নভাবে আছে। ক্ষুধা ও এর কারণে মৃত্যু এখন সেখানে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইথিওপিয়ার এই সংখট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। এ তালিকায় রয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও ইউনিসেফ।

গত নভেম্বরে ইথিওপিয়ার সরকার তাইগ্রের সে সময়কার ক্ষমতাসীন দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন পার্টিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করলে সংকটের শুরু হয়। দেশটির শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ নভেম্বরের শেষ নাগাদ শান্তি এসেচে বলে জানালেও শান্তিতে যে আসেনি, তা এখন চাক্ষুষ। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধের কারনে পুরো অঞ্চলের ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।

পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা সেখানকার মানুষের কথা শুনলেই বোঝা যায়। তাইগ্রের পশ্চিমাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন জেলা কাফতা হুমেরার এক বাসিন্দা সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছিলেন, ‌খাওয়ার মতো কোনো কিছু আমাদের নেই। মৃত্যু আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।'

কী করে হলো এমন পরিস্থিতি? অঞ্চলটির বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর চলমান যুদ্ধে পুরো অঞ্চল ফাঁকা হয়ে গেছে। গত সাত মাসে অঞ্চলটির শস্য ও খাদ্য সব লুট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা যে বাইরে থেকে সহায়তা নেবে, সে পথও নেই। বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। টানা সাত মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের সময় যে যা পেরেছে, লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এই লুকিয়ে রাখা খাবার দিয়ে আর কত দিন চলবে? ফুরিয়ে গেছে। এখন শুধুই ক্ষুধাই টিকে আছে।

কাফতা হুমেরার সেই ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‌কেউ আমাদের কিছু দিয়ে সহায়তা করেনি। এখানকার সবাই মৃতপ্রায়। আমাদের সবার মুখে ক্ষুধাকেই দেখতে পাবে শুধু।'

টানা সাত মাসের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ক্ষুধাই এখন তাইগ্রের একমাত্র বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছেঅঞ্চলটির বাসিন্দারা বলছেন, খাদ্য বোঝাই গাড়ি তাদের পাস দিয়েই চলে যেতে দেখেছেন তাঁরা। কিন্তু কেউ একটিবারের জন্যও দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করেনি।

তাইগ্রে এর আগেও দুর্ভিক্ষ দেখেছে। ১৯৮৪ সালে তাইগ্রে ও এর পার্শ্ববর্তী প্রদেশ ওলো এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। সে সময় কারন ছিল খরা ও যুদ্ধ। সেবার ৬-১০ লাখ লোক মারা গিয়েছিল।

আইপিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তাইগ্রে, আমহারা, ও আফার অঞ্চলের সাড়ে ৩ লাখ লোক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থা গত মে মাসে আরও বাজে আকার  নিয়েছে। এই পরিস্থিতি যুদ্ধ ও এর কারণে বাস্তুহারা হওয়া এবং চলাচলে স্বাধীনতা না থাকার কারণে হয়েছে। অঞ্চলটিতে কোনো মানবিক সহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছে না। যুদ্ধের কারণে গবাদি পশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ভেঙে পড়েছে বাজার ব্যবস্থা। শুধু মে মাসেই খাদ্য নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে ৫৫ লাখ মানুষ। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি আরও বাজে হবে।

তবে এত কথা বললেও এই পরিস্থিতিকে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বললেও সরাসরি দুর্ভিক্ষ বলে অভিহিত করেনি আইপিসি। এ ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিস্ট সংজ্ঞা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দুর্ভিক্ষ শব্দটি সব বিবেচনাতেই ভীষণ প্রভাবশালী বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ কিছু মানদণ্ড পূরণ সাপেক্ষেই এই শব্দ ব্যবহার করতে সম্মত। আপাতত দুর্ভিক্ষের বদলে তাই আইপিসি একে ‌‌পঞ্চম মাত্রার বিপর্যয় হিসেবেই উল্লেখ করছে। বলছে, তাইগ্রে ও এর আশপাশের অঞ্চলে সামনে মাসগুলোতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি প্রবল।

পঞ্চম মাত্রার বিপর্যয় আসলে কী? এর অর্থ হচ্ছে, বিস্তৃত অঞ্চলে ছোট জনগোষ্ঠী খাদ্য সংকটে রয়েছে। দুর্ভিক্ষ শব্দটি তখনই প্রয়োগ করা হয়, যখন বড় ও বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠী ক্ষুধা ও ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। যখন কোনো অঞ্চলের মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যায়, ৩০ শতাংশ ভয়াবহ পুষ্টিহীনতার শিকার হয়, প্রতি ১০ হাজারে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা দুইয়ের বেশি হয়, তখনই তাকে দুর্ভিক্ষ বলা দস্তুর। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী তাইগ্রে এখনো দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়নি।

তবে দুর্ভিক্ষের এই সংজ্ঞা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। একে অনেকে রাজনৈতিক সংজ্ঞা হিসেবে অভিহিত করেন। যেমনটি মনে করছেন এখন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক। তিনি আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তাইগ্রের পরিস্থিতিকে সরাসরি দুর্ভিক্ষ বলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত