Ajker Patrika

ফার্মেসির পরামর্শে ডায়রিয়াতেও শিশুকে দেওয়া হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৪৫
হাসপাতালে নেওয়ার আগে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের। ছবি: সেভ দ্য চিলড্রেন
হাসপাতালে নেওয়ার আগে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের। ছবি: সেভ দ্য চিলড্রেন

বাংলাদেশে শিশুদের ডায়রিয়া চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এতে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ঝুঁকি বাড়ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের একটি তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে ১ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৮ হাজার ২৯৪টি শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণায় শিশুদের চিকিৎসা নেওয়ার ধরন ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ (৫৫ শতাংশ) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ মাত্র ৬ শতাংশ শিশুর আমাশয় (রক্তযুক্ত পায়খানা) ছিল, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, কলেরা ছাড়া সাধারণ পানিবাহিত ডায়রিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ৭৭ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়াই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাশয়ে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক (জিংক বা ওআরএস ছাড়া) ব্যবহারের প্রবণতা সাধারণ পানিবাহিত ডায়রিয়ার চেয়ে বেশি ছিল (১৫ শতাংশ বনাম ৯ শতাংশ)। যদিও ৮৫ শতাংশ শিশু ওআরএস (খাওয়ার স্যালাইন) নিয়েছে। কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ শিশু অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া জিংক, ওআরএস—দুটোই পেয়েছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যে শিশুরা হাসপাতালে আসার আগে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যারা অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছে ও নেয়নি, সে তুলনায় এই হার যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ ছিল। এতে এমন ইঙ্গিত মেলে যে অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়, বরং শিশুদের অসুস্থতার তীব্রতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে পারে।

অভিভাবকদের মধ্যে দ্রুত সুস্থ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, ঐতিহ্যগত অভ্যাস, ফার্মেসির প্রতি আস্থা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র দূরে হওয়ার কারণে অনেকে ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী। গবেষণায় দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে আগত শিশুদের মধ্যে যারা মির্জাপুর উপজেলা থেকে বেশি দূরত্বের এলাকা থেকে এসেছে, তাদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার তুলনামূলক বেশি। এর অর্থ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহজলভ্যতা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারকে প্রভাবিত করছে।

গবেষণায় বারবার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) ভয়াবহতার কথা উঠে এসেছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে সরাসরি ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দশমিক ৪৯৫ মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ ছিল। এ ছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে এএমআর এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি থেকে প্রতিবছর এক ট্রিলিয়ন থেকে ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের উচ্চ প্রবণতা দেখা যায়; বিশেষ করে, শিগেলা ও ভিব্রিও কলেরার মতো ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়।

গবেষকেরা অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তাঁরা বলেছেন, ফার্মেসিগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও অনুশীলনের ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দেওয়া দরকার। এ ছাড়া ওআরএস ও জিংকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করাও অপরিহার্য।

গবেষণা প্রতিবেদনটি গত ২০ জুলাই বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত