Ajker Patrika

দাম্পত্য সম্পর্ক

মতের অমিল হলে ম্যারিটাল থেরাপি নিন

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহ্‌রিয়া
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দম্পতিদের মতের অমিল হওয়া সাধারণ বিষয়। কিন্তু কেন তা হচ্ছে, সেটি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য একজন নিরপেক্ষ মানুষ দরকার। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সম্পর্কের জট খোলা সেই মানুষের কাজ। জট খোলার প্রক্রিয়া হলো ম্যারিটাল থেরাপি।

মতের অমিল হয় কেন

আমাদের দেশে বিয়ে দুজন মানুষের মধ্যে না হয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে হয়। তাই দুটি বৃহত্তর পরিবারের মানুষের আন্তসম্পর্কের চুক্তিও হয়। দম্পতিদের প্রথম ধাপে ৮০ শতাংশ সমস্যা তৈরি হয় ‘তোমার বাড়ি, আমার বাড়ি’ নিয়ে। নববিবাহিত দম্পতির পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার দায়িত্ব দুই পরিবারের। পরিবারকে চুপ করে থাকা শিখতে হবে। বৃহত্তর পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, অতিরিক্ত ভালোবাসায় ছেলে বা মেয়ের দলে যোগ দিয়ে ভালো করতে গিয়ে বিতর্ক আরও উসকে দেওয়া হয়। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। ঠিক এই জায়গায় ম্যারিটাল থেরাপির দরকার। থেরাপিস্ট নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটগুলো দেখিয়ে দেন।

একটা কথা মনে রাখা দরকার, পারিবারিক বিয়ে বা প্রেমের বিয়ে—যা-ই হোক না কেন; স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সম্পূর্ণ নতুন। তাই এ সম্পর্কে কথা বলা ও আচরণ শিখতে হবে।

যে চার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে হবে

সমালোচনা: কথায় কথায় দোষ ধরে সমালোচনা করা যাবে না। এতে সরাসরি অন্যজনকে আঘাত করা হয়। মানুষকে বদলানো যায় না, আচরণ বদলানো যায়। বদলানোর দায়িত্ব দুজনের। কারণ, সম্পর্ক হলো দুজন মানুষের বিনিয়োগ। সমাধানের সহজ উপায় হলো, খুঁত না ধরে স্পষ্টভাবে তোমার কাছে অমুক আচরণটা পেলে আমার ভালো লাগে, ভয় লাগে, রাগ লাগে, দুঃখ লাগে—এভাবে বলা। তাহলে নির্দিষ্ট আচরণ বদলের কথা বলা হয়।

অপমান: অসম্মান, নিন্দা, গালাগালি, তাচ্ছিল্য, উপহাস, বিদ্রূপ করে হাসাহাসি করা যাবে না। নিজেদের সম্মান দেখাতে হবে, প্রশংসা করতে হবে; বিশেষ করে শিশু ও আত্মীয়স্বজনের সামনে এসব কথা মনে রাখতে হবে।

দায় এড়ানো: সব দোষ ওর—এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে ‘আমি ঠিক আছি, তুমি বুঝতে পারছ না’ বলে রেগে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঝামেলার কিছুটা দায়ভার নিজেকেও নিতে হবে।

নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া: সমস্যার সমাধান না করে নিজেকে দেয়ালের আড়ালে গুটিয়ে ফেলা অনেকের প্রবণতা। তখন জীবনসঙ্গী যা-ই বলুক, সেটা আর স্পর্শ করে না। তবে গুটিয়ে ফেলা প্রথমে হয় না। প্রথম তিনটি ধাপ দিনের পর দিন ঘটলে গুটিয়ে ফেলা অভ্যাসে পরিণত হয়। আমরা একই ছাদের নিচে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো যোজন যোজন দূরে থাকি। এই প্রাচীর ভাঙার উপায় হলো, নিজেকে শান্ত করতে ২০ মিনিট সময় নেওয়া। তারপর আবার খোলামেলা আলোচনায় ফেরা।

এই চার আচরণের কারণে বেশির ভাগ সম্পর্ক নষ্ট হয়। হয়তো নিজের অজান্তে মানুষ সেগুলো করে। ম্যারিটাল থেরাপি এই অস্বাস্থ্যকর আচরণগুলোকে চিহ্নিত করে কীভাবে ঠিক করা যায়, তা নির্দিষ্ট করে।

সম্পর্কগুলোকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তুলনা করুন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক একটা ইমোশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। যখন পজিটিভ ব্যালান্স বেশি থাকে, আমরা চমৎকার থাকি। আর যখন নেগেটিভ ব্যালান্স হয়, তখন ম্যারিটাল থেরাপি দরকার পড়ে।

এবার ভেবে দেখতে পারেন, আপনার ম্যারিটাল থেরাপি দরকার কি না।

লেখক: চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপি প্র‍্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত