Ajker Patrika

ভাইরাস জ্বরের মৌসুমে শিশুর যত্নে যা করবেন

ডা. মৌসুমি আহমেদ মৌরী
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এখন জ্বরের মৌসুম চলছে; বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন ভাইরাস জ্বর হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৯৪৪ এবং মারা গেছে ১১৮ জন। চিকিৎসকেরা বলছেন, একটি এডিস মশাই এই তিন ভাইরাসের বাহক। ফলে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ।

ডেঙ্গু জ্বরের বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ

  • ডেঙ্গু মারাত্মক ভাইরাস জ্বর। এর উপসর্গগুলো হলো:
  • হালকা থেকে তীব্র জ্বর।
  • র‍্যাশ দেখা দেওয়া।
  • তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা।
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ।
  • রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া এবং শক সৃষ্টি হওয়া।
  • পেটব্যথা ও বমি।

চিকুনগুনিয়ার বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর প্রধান উপসর্গ হলো:

  • জ্বরের সঙ্গে র‍্যাশ।
  • গোড়ালি, হাঁটু, হাত ও পায়ে ব্যথা এবং ফোলা।
  • জয়েন্ট বা গিরায় ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে শিশুরা হাঁটাচলা করা, বসা কিংবা স্বাভাবিকভাবে কিছু করতে পারে না।
  • যদিও এই জ্বরে ডেঙ্গুর মতো প্রাণহানির ঝুঁকি কম, তবে গিরার ব্যথা ও ফোলা দীর্ঘদিন ভোগাতে পারে।

জিকা ভাইরাস জ্বর

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিকা ভাইরাস জ্বরের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে থাকলেও সেটা হয় হালকা ধরনের। যেমন জ্বরের সঙ্গে র‍্যাশ, চোখ লালচে, মাথাব্যথা, মাংসপেশি এবং গিরায় ব্যথা হতে দেখা যায়। তবে এই ভাইরাস যদি গর্ভবতী মাকে আক্রান্ত করে, তখন গর্ভজাত শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মায়েদের জন্য জিকা ভাইরাসকে সবচেয়ে ভয়াবহ মনে করেন।

রোগনির্ণয়

ভাইরাস জ্বর শনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো রোগীর রক্ত পরীক্ষা করানো। চিকিৎসকেরা উপসর্গ দেখে প্রাথমিক ধারণা নিলেও নিশ্চিত হতে রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি বুকের এক্স-রে, পেটের আলট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষাও করানোর পরামর্শ দেন।

কখন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে

শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ দেখা দিলেই হাসপাতালে নিতে হবে। যেমন:

  • বমি কিংবা পাতলা পায়খানা হলে।
  • পেটব্যথা শুরু হলে।
  • রক্তকণিকা বা প্লেটলেট দ্রুত কমে গেলে।
  • শিশু নেতিয়ে পড়লে, দুর্বল হয়ে গেলে।
  • পেট বা ফুসফুসে পানি জমলে।

চিকিৎসা

  • ভাইরাস জ্বরের এখনো কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। এই জ্বরের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক।
  • প্যারাসিটামল দেওয়া হয় জ্বর কমানোর জন্য।
  • শিশুদের যথেষ্ট তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো জরুরি। যেমন স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি।
  • পেটব্যথা, বমি বা অন্য উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসকেরা ব্যবস্থা নেন।
  • ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নিয়মিত প্লেটলেট ও ব্লাড প্রেশার পর্যবেক্ষণ করতে হয়। প্রয়োজনে স্যালাইন, অ্যালবুমিন ও প্লেটলেট দিতে হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

চিকিৎসকেরা মনে করেন, প্রতিরোধ ছাড়া এই ভাইরাস জ্বর থেকে মুক্তির উপায় নেই। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।

  • এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।
  • টব, টায়ার, ডাবের খোসা বা যেকোনো জায়গায় পানি জমে থাকতে তা ফেলে দিতে হবে।
  • নিয়মিত বাসা ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • মশারির ব্যবহার বাড়াতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।

চিকিৎসকদের পরামর্শ

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা জিকার মতো ভাইরাস জ্বরকে কখনো হালকাভাবে নেওয়া যাবে না; বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সামান্য জ্বর হলেও সেটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। দ্রুততম সময়ে সঠিক রোগনির্ণয় করতে হবে এবং সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সম্ভব প্রাণঘাতী পরিস্থিতি এড়ানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

প্রিজন ভ্যান থামিয়ে ছাগল-কাণ্ডের মতিউরকে অনৈতিক সুবিধা, ১১ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

মাজার ভেঙে লাশ পোড়ানোর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই: ইসলামী আন্দোলন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত