Ajker Patrika

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন

ডা. কাকলী হালদার
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি তাদের ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার মনিটরিং বা ভিইউএম তালিকায় এনবি ১.৮.১ যুক্ত করেছে। এটি মূলত ওমিক্রন উপধরন, যা ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া এবং বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে।

এনবি ১.৮.১ বেশ দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তবে এই ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধির কারণ বা মৃত্যুঝুঁকি বেশি এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বর্তমান ভ্যাকসিনগুলোও গুরুতর রোগ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। বাংলাদেশে এরই   মধ্যে এক্সএফজি ও এক্সএফসি নামের নামের ওমিক্রন উপধরনগুলোর উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ‘এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’ দেশে কোভিডের অবস্থা এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

এই ভ্যারিয়েন্টগুলো বেশি সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। গবেষণা বলছে, এটি মানুষের এসিই২ রিসেপ্টরের সঙ্গে শক্তভাবে যুক্ত হতে পারে। সংক্রমণ হার বেশি হলেও এখন পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর হার বেশি বলে জানা যায়নি।

মিউটেশনের ফলে ভ্যারিয়েন্টগুলো নতুন হলেও কোভিডের আগের মতোই সাধারণ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবারও। গলাব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, কাশি, সর্দি, নাকবন্ধ বা শরীর ব্যথা। এর সঙ্গে কারও কারও বমি, ডায়রিয়া বা হজমজনিত সমস্যাও দেখা যাচ্ছে।

দেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও একে সামগ্রিকভাবে হালকা মাত্রার সংকট বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সতর্কতা জোরদার করা হচ্ছে। বেনাপোলসহ সকল সীমান্ত এলাকায় স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং চেকপোস্ট পুনঃসক্রিয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া ভারত বা আশপাশের দেশে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারণ, প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে এবং মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। নতুন করে ভ্যাকসিন বা বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

কোভিড নির্ণয়ের জন্য এবারেও আরটিপিসিআর বা র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে সক্রিয় কোভিড-১৯ পজিটিভ বা রোগের লক্ষণ থাকলে রোগীদের থেকে নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব বা গলা-নাসার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তবে সুস্থ থাকতে হলে এ মুহূর্তে সচেতনতা এবং প্রতিরোধ সবচেয়ে বেশি জরুরি।

যা করতে হবে

  • জনসমাগমে মাস্ক পরিধান করুন। ৬ ঘণ্টার বেশি একটি মাস্ক পরে থাকবেন না।
  • হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করুন। কিছু না পেলে কনুই ভাঁজ করে নাক বা মুখের সামনে আনুন।
  • সঠিকভাবে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন।
  • হাত না ধুয়ে চোখ-নাক-মুখে হাত দেবেন না।
  • কারও রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।
  • উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত কোভিড টেস্ট করুন। ১-২ দিন বাড়িতেই আলাদা ঘরে আইসোলেশনে থাকুন।
  • জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং ঠান্ডা-কাশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ বাড়িতেই খেতে পারেন।
  • তবে বেশি বয়স্ক বা যাদের ডায়াবেটিস, ক্যানসার, এইডস, কিডনি বা লিভারের সমস্যা আছে এবং যারা আগে থেকে দুর্বল রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাসম্পন্ন, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।
  • রোগের লক্ষণ তীব্র হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
  • আপনার সর্বশেষ টিকার ডোজ নিয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করুন।

নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোতে অনেক স্পাইক মিউটেশন দেখা যাচ্ছে, যা ভাইরাসকে শরীরের ইমিউন সিস্টেম থেকে আড়াল করতে কিছুটা সহায়তা করে। তবে গবেষণা বলছে, আগের টিকায় তৈরি অ্যান্টিবডি সম্পূর্ণভাবে সংক্রমণ রোধ করতে না পারলেও গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়।

বুস্টার ডোজ; বিশেষ করে ওমিক্রন অ্যাডাপটেড বা এক্সবিবি.১.৫ ভিত্তিক নতুন ভ্যারিয়েন্টে পুরোপুরিভাবে না হলেও এই ভ্যারিয়েন্টগুলোতে শক্তিশালী সুরক্ষা দেবে। তবে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং ভিড় এড়িয়ে চলাই হবে প্রতিরোধের ভালো উপায়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত