Ajker Patrika

হাত-পা জ্বালাপোড়ায় কী করবেন

অধ্যাপক ডা. এ কে এম মূসা 
হাত-পা জ্বালাপোড়ায় কী করবেন

হাত-পা জ্বালাপোড়া বা ঝিনঝিন করা পরিচিত একটি সমস্যা। এমন হলে কারও কারও ইলেকট্রিক শকের মতো লাগে বা পিনের খোঁচার মতো অনুভূতি হতে পারে। হাত বা পায়ের ওপর দিয়ে পিঁপড়া হেঁটে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে কারও কারও। অনেক সময় সামান্য স্পর্শেই ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক ধরনের অনুভূতি বোধ হয়।

সাধারণত প্রান্তিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুভূতির সমস্যা দেখা দেয়। পুরুষের তুলনায় মেয়েরা এ রোগের শিকার হন বেশি।

হাতের চেয়ে পায়ে সমস্যা বেশি হতে পারে। পায়ের তালু থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ওপরে ঝিনঝিন অনুভূতি উঠতে থাকে। বেশি হলে অনেক সময় পায়ে বোধশক্তি কমে যায়। পা থেকে স্যান্ডেল খুলে গেলে টের পাওয়া যায় না, আঘাত পেলেও বোঝা যায় না। এ রকম নীরব আঘাত থেকে ক্ষত তৈরি হয়ে গ্যাংগ্রিন হতে পারে।

এ রোগ হলে অনেক সময় পায়ের রং পরিবর্তন হয়, অতিরিক্ত ঘাম হয় এবং পা ফুলে যায়। চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয় না। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক অনুভূতি ও অবশ ভাব হয়। জ্বালা ও ব্যথা রাতে বেড়ে যায় এবং প্রায়ই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

পা জ্বালাপোড়া করার কারণ

ডায়াবেটিক পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি এ রোগের অন্যতম কারণ। এ রোগে রক্তের উচ্চমাত্রায় গ্লুকোজ আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় যেসব স্নায়ু থাকে, তাদের নষ্ট করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের পা ও পায়ের পাতা এ রোগে আক্রান্ত হয়। সারা বিশ্বে ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগী ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে ভুগে থাকেন।

অন্য যেসব কারণে এ রোগ হতে পারে

  • ভিটামিন ‘বি’র উপাদান, যেমন বি-১, বি-৬, বি-১২-এর অভাব।
  • স্নায়ুতে আঘাত।
  • মদপানে আসক্তি।
  • সংক্রমণ। কুষ্ঠরোগ, লাইম ডিজিজ, ডিপথেরিয়া, এইচআইভি, ভেরিসেলা জোস্টার।
  • রক্তনালিতে ক্রনিক প্রদাহ।
  • শরীরে আর্সেনিক, মার্কারি, সিসা ইত্যাদির মতো অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ জমা হওয়া।
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি ও লিভারের রোগ।
  • যক্ষ্মা ও ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
  • ইডিওপ্যাথিক বা ক্রিপ্টোজেনিক নিউরোপ্যাথি।
  • এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।

নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা

রক্তের সিবিসি, সুগার প্রোফাইল, কিডনি ও লিভার ফাংশন টেস্ট, ভিটামিনের অভাব নির্ণয়ের পরীক্ষা, নার্ভ কন্ডাকশন পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা ইলেকট্রোমাওগ্রাফি, নার্ভ বায়োপসি টেস্ট করাতে হতে পারে।

চিকিৎসা

  • ডায়াবেটিক পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির প্রধান চিকিৎসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা, নিউরোপ্যাথি উপসর্গের জন্য ব্যথার ওষুধ, নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জন্য বিশেষ কিছু ওষুধ সব সময় খেতে হয়।
  • ধূমপান ও মদপান পরিহার করতে হবে।
  • ভিটামিনের অভাব হলে ফুড ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে।
  • কোনো রোগের কারণে হাত-পা জ্বালাপোড়া করলে সেই রোগের যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে।
  • রক্তনালিতে প্রদাহ হলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের সঙ্গে অন্যান্য ওষুধও খেতে হতে পারে।
  • কোনো ওষুধের কারণে হলে ওষুধ পরিবর্তন করতে হতে পারে।
  • স্নায়ু ইনজুরি, অবরুদ্ধ (ইনট্রাপমেন্ট) ও সংকোচন (কমপ্রেশন) হলে যথোপযুক্ত সার্জিক্যাল চিকিৎসা দিতে হবে।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পায়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। সে জন্য—

  • খোলা ও আরামদায়ক জুতা-মোজা পরুন।
  • পায়ের পেশির ব্যায়াম ও ঠান্ডা পানির স্যাঁক উপসর্গ নিরাময়ে উপকারী।
  • রাতে শোয়ার সময় পায়ে ময়শ্চারাইজিং ক্রিম লাগাতে হবে।
  • পায়ে যাতে কোনো আঘাত না লাগে, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। ফোসকা পড়লে প্রফিল্যাকটিক অ্যান্টিবায়োটিকস সেবন করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক: মেডিসিন বিভাগ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, শাহবাগ, ঢাকা

চেম্বার: আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত