Ajker Patrika

একটি বস্তু দুটি দেখছেন কি

মো. আরমান বিন আজিজ মজুমদার
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ৫১
একটি বস্তু দুটি দেখছেন কি

আমাদের দুই চোখ একটি বস্তুর ত্রিমাত্রিক ছবি মস্তিষ্কে উপস্থাপন করে। সেভাবেই আমরা দেখি এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কেউ একটি বস্তুকে দুটি দেখেন। একে বলে ডিপ্লোপিয়া বা ডাবল ভিশন।

বিভিন্ন কারণে ডাবল ভিশন হতে পারে। এ সমস্যার জন্য চোখের ভেতরের পেশির ভারসাম্যহীনতা দায়ী। চোখের পেশিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্নায়ু আছে। যেমন অকুলোমটর নার্ভ, ট্রকলিয়ার নার্ভ, এবডুসেন্ট নার্ভ। এই স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কের ভেতর থেকে এসে চোখের পেছন দিকে চক্ষুকোটরে (অরবিট) প্রবেশ করে এবং সবশেষে চোখের পেশিগুলোয় পৌঁছায়। মস্তিষ্ক বা চক্ষুকোটরে টিউমার, আঘাত, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে এসব স্নায়ুতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ মাল্টিপল স্কলেরোসিসের জন্যও স্নায়ুবৈকল্য দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা মায়াসথেনিয়া রোগেও পেশিগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ডিপ্লোপিয়ার সঙ্গে চোখ ট্যারা, চোখ বা মাথাব্যথা, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, চোখের নড়াচড়া সীমিত হয়ে আসা ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে। বয়স্কদের বেলায় হঠাৎ করেই ডিপ্লোপিয়া দেখা দেয়। একে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

যেসব পরীক্ষা করাতে হতে পারে
প্রথমত, একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। রোগীর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। মস্তিষ্কের কারণগুলোর মধ্যে ব্রেইন টিউমার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কের প্রদাহ অন্যতম। এ কারণগুলো চিহ্নিত করতে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষার সাহায্য নিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত একজন নিউরোসার্জনের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। হরমোনের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।

দ্রুত ডিপ্লোপিয়ার চিকিৎসা না নিলে এ সমস্যা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। টিউমার, হরমোন, স্ট্রোক ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা হলে সামান্য অবহেলাও জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।

চশমা সম্পর্কে কিছু কথা

  • শিশুদের চশমা লাগলে কখনোই অবহেলা করবেন না। অবশ্যই একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শে শিশুকে চশমা দিতে হবে।
  • শাকসবজি ও ছোট মাছ খেলে চশমার পাওয়ার কম বাড়ে বা বাড়ে না, এটি ভুল ধারণা। চশমার পাওয়ার যা বাড়ার, তা বাড়বেই। তবে শিশুর সঠিক বিকাশ ও পুষ্টির জন্য এগুলোর বিকল্প নেই। সময়মতো না খেলে এগুলোর অভাব থেকেই যাবে।
  • চশমা পরার সঙ্গে পাওয়ার বাড়া বা কমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে চিকিৎসক চশমা পরার পরামর্শ দিলে তা নিয়মিত পরাটাই জরুরি।
  • একবার চশমা নিলে পাওয়ার বাড়তেই থাকে, এটিও ভুল ধারণা। চশমা নিন আর না-ই নিন, পাওয়ার যেটুকু বাড়ার, তা বাড়বেই।
  • ভুল চশমা পরলে চোখ, মাথাব্যথার সঙ্গে চোখ থেকে পানিও পড়তে পারে।
  • চশমা পরা বা না পরা নির্ভর করে নিজের ওপর। চশমা দিয়ে যদি দৃষ্টি ভালো হয়, তাহলে চশমা পরলে ভালো দেখবেন আর না পরলে দেখবেন না। পরুন আর না-ই পরুন, এতে চোখের কিছু আসে-যায় না, চোখ ‘খারাপ’ হয় না। তবে দেখার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক কিছু সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • চশমার পাওয়ার বাড়লে মন খারাপ করার কিছু নেই। এটা জুতার মাপ বা সাইজ বাড়ার মতো বিষয়।

মো. আরমান বিন আজিজ মজুমদার, চক্ষুরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ,সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে এক দিনে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৬৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৯ জন।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) ডেঙ্গুবিষয়ক হালনাগাদ করা তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ হাজার ৬৯ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৪০৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১৯, বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২৮, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৯, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৮, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭০, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৪, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) পাঁচজন রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩০২ জন মারা গেছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৯২ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাঁদের বয়স যথাক্রমে ৫০, ৭০, ৪০, ৪৮, ৫০, ৭৫, ৪৫, ৫০, ৮০ ও ৬০ বছর।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ৯৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭১ হাজার ৪৮৭ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৪৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের ২৪ ঘণ্টায়ও ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১ হাজার ১৪৭ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৪২৯, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬৬, বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩২, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৮, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৯, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৫, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭০, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৯ ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৮৮ জন মারা গেছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭২ হাজার ৮২২ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও তিনজন নারী। তাদের মধ্যে ১৪ বছরের কিশোরী আছে। অন্যদের বয়স যথাক্রমে ৩৫, ২৫, ৩৫, ৫৮ বছর।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৪৫২ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে এক দিনে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৬২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাড়ছে মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়ছে মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ রোববার (২ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১ হাজার ১৬২ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৪৩৬, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭৬, বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৬৩, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৮, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫৪, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৭, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৮, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩২ ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) আটজন ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৮৩ জন মারা গেছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৫ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে ১৩ বছরের এক কিশোর আছে। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। অন্যদের বয়স যথাক্রমে ৫২, ৪২, ২৮ ও ৫০। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী আর দুজন পুরুষ রয়েছেন। এই পাঁচজনের মধ্যে ডিএনসিসিতে একজন, ডিএসসিসিতে তিনজন ও রাজশাহীর হাসপাতালে আরও একজন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৫১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৪১০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির প্রতিবেদন /ওজন কমানোর ভাইরাল ওষুধে প্রলুব্ধ রুশ তরুণ–তরুণীরা, বাড়ছে বিপদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২২ বছরের তরুণী মারিয়ার মতো আরও অনেক রুশ তরুণীই ছিপছিপে হওয়ার লোভে মলিকিউলের মতো ওষুধের ফাঁদে পড়েছিলেন। ছবি: বিবিসি
২২ বছরের তরুণী মারিয়ার মতো আরও অনেক রুশ তরুণীই ছিপছিপে হওয়ার লোভে মলিকিউলের মতো ওষুধের ফাঁদে পড়েছিলেন। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ায় টিকটকে চলতি বছরের শুরুতে ভাইরাল হয় এক ধরনের ওজন কমানোর ওষুধ। ‘মলিকিউল’ নামে একটি পিল। তরুণদের ফিডে ভেসে উঠতে থাকে নানা ক্যাপশন—‘মলিকিউল খাও, খাবার ভুলে যাও, ওজন কমাও’, কিংবা ‘বড়সড় পোশাক পরে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসতে চাও?’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ফ্রিজ ভর্তি নীল বাক্স। বাক্সের গায়ে ঝলমলে হোলোগ্রাম, তাতে লেখা ‘মলিকিউল প্লাস।’ বিভিন্ন অনলাইন স্টোরে অর্ডারের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের ‘ওজন কমানোর যাত্রা’ শেয়ার করছে সামাজিক মাধ্যমে।

কিন্তু এর পেছনে আছে ভয়ানক এক ফাঁদ। ২২ বছর বয়সী মারিয়া অনলাইনের এক জনপ্রিয় দোকান থেকে এই পিল কিনেছিলেন। দিনে দুইটা করে খেতেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে তার মুখ শুকিয়ে যায়, খাবারের প্রতি সম্পূর্ণ অনীহা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘খাওয়ার তো ইচ্ছে হতোই না, পান করতেও চাইতাম না। ভেতরে-ভেতরে অস্থির লাগত, ঠোঁট কামড়াতাম, গাল চিবাতাম।’

এরপর মারিয়া প্রবল উদ্বেগে ভুগতে থাকেন। তাঁর মনে নেতিবাচক চিন্তা ভর করে। তিনি বলেন, ‘এই পিলগুলো আমার মানসিক অবস্থার ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলেছিল।’ সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসকারী মারিয়া জানান, এমন ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।

অনলাইন শপগুলোতে এক চাকচমকপূর্ণ ‘মলিকিউল’ বিক্রি করা হচ্ছে চোখের সামনেই। ছবি: টিকটক
অনলাইন শপগুলোতে এক চাকচমকপূর্ণ ‘মলিকিউল’ বিক্রি করা হচ্ছে চোখের সামনেই। ছবি: টিকটক

অন্য টিকটক ব্যবহারকারীরাও জানান, পিল খাওয়ার পর তাদের চোখের মণি বড় হয়ে যায়, হাত কাঁপে, ঘুম আসে না। কমপক্ষে তিনজন স্কুলশিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এপ্রিলে সাইবেরিয়ার চিতা শহরের এক স্কুলছাত্রীকে ‘মলিকিউল’-এর অতিরিক্ত সেবনের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সে দ্রুত ওজন কমিয়ে গ্রীষ্মের আগে ছিপছিপে হতে চেয়েছিল।

আরেক স্কুলছাত্রীর মা জানান, তাঁর মেয়েকে আইসিইউতে নিতে হয়েছিল, কারণ সে একসঙ্গে অনেকগুলো পিল খেয়েছিল। মে মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গের ১৩ বছর বয়সী এক ছেলেকে হাসপাতালে নিতে হয়, কারণ সে হ্যালুসিনেশন ও আতঙ্কে ভুগছিল। স্কুলে ওজন নিয়ে উপহাস করার হতো তাকে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সে এক বন্ধুর মাধ্যমে এই পিল কিনেছিল।

মলিকিউল পিলের মোড়কে সাধারণত লেখা থাকে ‘প্রাকৃতিক উপাদান’, যেমন—ড্যান্ডেলিয়ন রুট ও মৌরি বীজের নির্যাস দিয়ে তৈরি। কিন্তু এ বছরের শুরুতে রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়ার সাংবাদিকেরা অনলাইনে কেনা পিল পরীক্ষার জন্য জমা দেন। তাতে পাওয়া যায় ‘সিবিউট্রামিন’ নামের একটি পদার্থ।

এই সিবিউট্রামিন প্রথমে ১৯৮০-এর দশকে অবসাদনাশক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, পরে ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে প্রচলিত হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এটি হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, অথচ ওজন কমায় সামান্যই। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ অনেক দেশেই এখন অবৈধ।

মলিকিউল ওষুধটি ‘প্রাকৃতিক উপাদানে’ তৈরি বলা হলেও তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান আছে। ছবি: সংগৃহীত
মলিকিউল ওষুধটি ‘প্রাকৃতিক উপাদানে’ তৈরি বলা হলেও তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান আছে। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ায় এটি এখনো ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়, তবে কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া সিবিউট্রামিন কেনাবেচা অপরাধ। কিন্তু তাতে এই ড্রাগের বিক্রি খুব একটা থামছে না। ব্যক্তিগত বিক্রেতা ও ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে এটি বিক্রি করছে—অনেক সময় বৈধ ওষুধের চেয়েও বেশি মাত্রায় এবং কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই।

এই অবৈধ পিলের দাম প্রায় ৮ থেকে ৯ ডলার, যা ২০ দিনের জন্য যথেষ্ট। অথচ রাশিয়ার বাজারে পরিচিত ওজন কমানোর ইনজেকশন যেমন ‘Ozempic’-এর দাম প্রতি মাসে ৪০ থেকে ১৬০ পাউন্ড (৫০ থেকে ২১০ ডলার)। সেন্ট পিটার্সবার্গের অন্তঃস্রাববিশেষজ্ঞ জেনিয়া সোলোভিয়েভা বলেন, ‘নিজে নিজে এই ওষুধ খাওয়া ভয়ানক বিপজ্জনক’, কারণ এসব তথাকথিত ‘ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট’-এ কত পরিমাণ সক্রিয় উপাদান আছে তা কেউ জানে না।

‘মলিকিউল’ বিক্রির দায়ে রাশিয়ায় নিয়মিত লোকজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার অবৈধ বিক্রি বন্ধে হিমশিম খাচ্ছে। এপ্রিলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সেফ ইন্টারনেট লিগ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়। এরপর কয়েকটি বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস মলিকিউল তাদের কার্ট থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু অচিরেই এটি ফিরে আসে নতুন নামে—‘অ্যাটম।’ প্যাকেজিং প্রায় হুবহু আগের মতো।

সম্প্রতি রাশিয়ায় একটি আইন পাস হয়েছে, যাতে আদালতের আদেশ ছাড়াই ‘অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্য পরিপূরক বিক্রি করা ওয়েবসাইট’ বন্ধ করা যায়। কিন্তু বিক্রেতারা এখন এসব পণ্যকে ‘স্পোর্টস নিউট্রিশন’ হিসেবে দেখিয়ে বিক্রি করছে।

টিকটকে এখনো এমন বিক্রেতা, যারা ‘মলিকিউল’ বিক্রি করছে। তবে নাম ভিন্ন—কখনো তা ‘মিউসলি’, ‘বিস্কুট’ বা ‘লাইটবাল্ব।’ কিছু বিক্রেতা তো আবার গোপনীয়তার ধারই ধারছেন না। কয়েক সপ্তাহ আগে বিবিসি এক জনপ্রিয় রুশ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ‘মলিকিউল’-এর তালিকা খুঁজে পায়। জানতে চাইলে সংস্থাটি জানায়, তারা দ্রুত সিবিউট্রামিনযুক্ত সব পণ্য সরিয়ে ফেলেছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, যেসব তালিকায় স্পষ্টভাবে ‘সিবিউট্রামিন’ লেখা নেই, সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন।

যদি কেউ কোনোভাবে ‘মলিকিউল’ কিনতে সক্ষম হয়, তবুও বোঝা মুশকিল আসলে কী পাওয়া যাচ্ছে—আর এই পিল কোথায় তৈরি হচ্ছে, তা-ও অনিশ্চিত। বিবিসি কিছু বিক্রেতার কাছে এমন সনদপত্র পেয়েছে, যাতে লেখা আছে চীনের গুয়াংজু ও হেনান প্রদেশের কারখানায় উৎপাদিত। আবার কেউ কেউ দাবি করে, পণ্যটি জার্মানি থেকে আনা।

কিছু প্যাকেটে লেখা থাকে, এটি জার্মানির রেমাগেন শহরে তৈরি। কিন্তু বিবিসি খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওই ঠিকানায় এমন কোনো কোম্পানি নেই। আর কাজাখস্তানের কয়েকজন বিক্রেতা যারা রাশিয়ায় ‘মলিকিউল’ পাঠায়, তারা বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা পণ্যটি বন্ধুদের কাছ থেকে বা রাজধানী আস্তানার কিছু গুদাম থেকে সংগ্রহ করে থাকে, কিন্তু মূল সরবরাহকারীর নাম জানে না।

এদিকে, অনলাইনে ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাওয়ার ব্যাধি সংক্রান্ত অনেক কমিউনিটি এখন ‘মলিকিউল’ নামের ওষুধটি প্রচারের জায়গা হয়ে উঠেছে। ব্যবহারকারীরা হ্যাশট্যাগ আর নানা গোপন শব্দ ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মগুলোর নজরদারি এড়িয়ে যাচ্ছে। সোলোভিয়েভা বলেন, যেসব তরুণ-তরুণী আগে থেকেই ইটিং ডিসঅর্ডারে ভুগছে, তাদের জন্য মলিকিউল অত্যন্ত ক্ষতিকর। যারা পুনরায় অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, তাদের হাতে সহজলভ্য এই ক্ষুধা দমনকারী ওষুধ ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

মারিয়া এখন মলিকিউলের মতো ওজন কমানোর ওষুধের বিপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। ছবি: টিকটক
মারিয়া এখন মলিকিউলের মতো ওজন কমানোর ওষুধের বিপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। ছবি: টিকটক

রুশ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আন্না এনিনা নিজেও অতীতে অননুমোদিত ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘আমি নিজে ইটিং ডিসঅর্ডারে ভুগেছি…এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। তোমরা এর জন্য দশগুণ অনুতপ্ত হবে।’

মারিয়া সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। অতিরিক্ত মলিকিউল খাওয়ার পর তিনি মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এখন তিনি বিভিন্ন ওজন কমানোর ফোরামে তরুণী ও মেয়েদের এই বড়ি না খেতে পরামর্শ দেন। এমনকি এক কিশোরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও সতর্ক করেছেন।

তবু মলিকিউল অনলাইনে এখনো জনপ্রিয়। আর মারিয়ার টিকটক ফিডে যখনই নতুন কোনো ভিডিও ভেসে ওঠে, তখন সেটি তাঁকে মনে করিয়ে দেয়—সেই পিলগুলোর কথা, যেগুলো তাঁকে অসুস্থ করে দিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত