Ajker Patrika

স্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক শব্দদূষণ

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের চারপাশে ঘাপটি মেরে থাকা নীরব ঘাতক ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করছে মানবস্বাস্থ্য। শব্দদূষণ বা অতিরিক্ত কোলাহল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর বিষয়টি আমরা খুব একটা পাত্তা দিই না। কিন্তু এটি হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, এমনকি ডিমেনশিয়ার মতো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গবেষণা বলছে, শুধু ইউরোপেই প্রতিবছর ১২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে এই শব্দদূষণের কারণে। ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহর হিসেবে চিহ্নিত হলেও বার্সেলোনা থেকে বাংলাদেশ—সবখানেই এই শব্দদূষণ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।

শব্দদূষণ কীভাবে ক্ষতি করে

লন্ডনের সেন্ট জর্জেস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শার্লট ক্লার্কের গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাফিকের শব্দ হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। শব্দ কানের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালায় পৌঁছায়। ফলে হৃৎস্পন্দন ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়। অধ্যাপক ক্লার্কের মতে, এমন অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঘুমের সময়ও কান সক্রিয় থাকার কারণে রাতের কোলাহলও সমান ক্ষতিকর।

শব্দের নিরাপদ মাত্রা কত

ড. ফোরাস্টারের মতে, হৃৎস্বাস্থ্যের জন্য দিনে ৫৩ ডেসিবেল এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ ক্ষতিকর। একটি অফিসের স্বাভাবিক শব্দ ৬০ ডেসিবেল কিংবা ব্যস্ত সড়কের শব্দ ৮০ ডেসিবেল দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

সমাধানের পথে বার্সেলোনা

বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের ড. নাটালি মুলারের নেতৃত্বে বার্সেলোনার শব্দদূষণ কমানোর উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ব্যস্ত সড়কগুলোকে ‘সুপার ব্লক’ নামে পরিচিত করা। যেখানে ট্রাফিক বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত জায়গা, ক্যাফে এবং বাগান তৈরি করার কথা ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি এই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হতো, তাহলে শহরের শব্দদূষণ ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমে যেত এবং প্রতিবছর প্রায় ১৫০ জনের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক ও জনসাধারণের বিরোধিতার কারণে শুধু ৬টি সুপার ব্লক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকার অবস্থা

বিশ্বের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহর ঢাকা। এ শহরের শব্দদূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক। শিল্পী মোমিনুর রহমান রয়্যাল এ সমস্যা নিয়ে নীরব প্রতিবাদ শুরু করেছেন। প্রতিদিন ১০ মিনিট ধরে ব্যস্ত সড়কে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি ড্রাইভারদের হর্ন বাজানো বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষই একমাত্র প্রাণী, যারা অপ্রয়োজনে শব্দ সৃষ্টি করে।’ বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, হর্ন কমানো, আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এই সমস্যা কমানো সম্ভব। আর সেটিরই চেষ্টা করা হচ্ছে।

শহুরে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ ও ব্যক্তিসচেতনতা বাড়ানোই এই সংকট মোকাবিলার একমাত্র উপায়। শব্দদূষণ কমানোর মাধ্যমে শুধু সুস্থ জীবন নয়, প্রাণবন্ত শহরও গড়া সম্ভব।

সূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত