Ajker Patrika

আজকাল সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন?

ডা. তাহমিদা খানম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০: ০৭
আজকাল সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন?

চিকিৎসাশাস্ত্রের অভূতপূর্ব সাফল্যে গত দশকগুলোয় মানুষের গড় আয়ু যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের বার্ধক্যকালীন স্বাস্থ্যসমস্যাও বেড়েছে। এর মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ভুলে যাওয়ার সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো আলঝেইমার রোগ, যেটি সাম্প্রতিক সময়ের বার্ধক্যজনিত অসুখগুলোর মধ্যে বহুল চর্চিত। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেলেও ৪৫ বছরের আগে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কম।

প্রকৃতিগতভাবেই মানুষের মস্তিষ্কে বয়সজনিত কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন মস্তিষ্কে কোষ বা নিউরনের সংখ্যা কমে যাওয়া, মস্তিষ্কের খাঁজ গভীর হওয়া ও সামগ্রিকভাবে মস্তিষ্কের আয়তন ছোট হয়ে যাওয়া। তাই বয়সের পঞ্জিকার যত পাতা ওল্টাবে, ততই মানুষের ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। কিন্তু আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে সেই পরিবর্তনগুলো কম সময়ে ও দ্রুতগতিতে হয়ে থাকে। আলঝেইমার রোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ককে খুব খারাপ অবস্থায় নিয়ে যায় এবং আক্রান্ত মানুষকে স্মৃতিশক্তিহীন, কর্মক্ষমতাহীন, পরনির্ভরশীল মানুষে পরিণত করে ফেলে।

আলঝেইমার রোগের মূল উপসর্গ হলো ভুলে যাওয়া। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে সাম্প্রতিক স্মৃতিগুলো, যেমন কোনো তথ্য, ঘটনা বা চেহারা মনে রাখতে না পারাটা বেশি হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিগুলোও হারিয়ে যায়। চেনা জায়গায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি হওয়া, একই কাজের জন্য বারবার জিজ্ঞাসা করা, কোনো বেলার খাবার খেয়েও খেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা, চেনা মুখ বা জিনিস দেখেও নাম মনে করতে না পারা, এমন হাজারো ঘটনা ও কাজ যদি পরিবারের সদস্যরা খেয়াল করেন তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব।

আলঝেইমার রোগটির চিকিৎসার দুটি অংশের একটি হলো ওষুধ ও অপরটি পারিবারিক সহায়তা। কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্যটি হলো, বাজারে কিছু ওষুধ (যেমন ডোনপেজিল, রিভাস্টিগমিন, গ্যালান্টামিন ও মেমান্টিন) প্রচলিত থাকলেও এর কোনোটিই রোগটি থেকে চিরস্থায়ী মুক্তি দিতে অপারগ। তাই পরিবারের সদস্যদেরই আলঝেইমার রোগীদের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হয়।

রোগীর জন্য যা করতে হবে

  • ঘরের দেয়ালে বড় ক্যালেন্ডার বা ঘড়ি ঝুলিয়ে রাখুন।
  • রোগী যেখানে ঘুমায় বা দিনের বড় অংশ কাটায়, সেখানে পরিবারের ছবি রাখুন।
  • রোগীর প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন চাবি, ঘড়ি, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি বাসার একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন।
  • টয়লেট বা বাথরুমের সামনে নাম লিখে রাখুন বা ছবি টাঙিয়ে রাখুন, যেন সহজেই চিনতে পারেন।
  • এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগীর দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখার চেষ্টা করা পরিবারের সবার দায়িত্ব।

রোগ ঠেকাতে যা করতে হবে

  • বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
  • তাঁদের সমস্যাগুলো গুরুত্বসহকারে শুনতে হবে।
  • অল্প পরিমাণে লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত